ঘাস চাষে বছরে ১৪ লাখ টাকা উপার্জন মনিরের
Published: 26th, January 2025 GMT
সৌন্দর্যবর্ধক ঘাস চাষ করে চাঁদপুরের মনির হোসেন নিজের ভাগ্যবদল করেছেন। অনলাইনেই বিক্রি হচ্ছে তার চাষকৃত ঘাস। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এখন তার কাছে ঘাস চাষ শিখতে আসছেন।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) চাঁদপুর সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিললো মনির হোসেনের।
মনির হোসেন চাঁদপুর সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আবু তাহের গাজী ও মনি বেগমের ছেলে। ৩৮ বছর বয়সী মনির পরিবারে তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। আয়ের পথ না পেয়ে মনির ২০১৩ সালে বাহারাইন চলে যান। সেখানে বাগানে কাজ করতেন।
২০১৮ সালে দেশে ফিরে বেকার বসে ছিলেন। ২০২০ সালে মেক্সিকো থেকে লং কার্পেট ঘাস আমদানি করেন তিনি। সেই ঘাস লাগিয়ে বর্তমানে বছরে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা আয় করছেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সুখের সংসার তার।
মনিরের ঘাসচাষে নিয়োজিত শ্রমিক পারভেজ জানান, বছর তিনেক আগে আমদানিকৃত সেই মেক্সিকান বারমুডা লং কার্পেট ঘাস থেকেই নতুন ঘাসের জন্ম হয়। এরজন্য নির্দিষ্ট কোনো বীজের প্রয়োজন নেই। জমি প্রস্তুতকালে প্রথমে জমির মাটি লেভেলের পর তাতে প্লাস্টিক বিছানো হয়। তার উপর মাটি ফেলে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে কাদামাটি করা হয়। সে মাটির ওপরে টুকরো টুকরো ঘাস লাগানো হয়। ঘাস উঠানোর আগে দুয়েকবার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হয়। এরপর ঘাস বিক্রির উপযোগী হয়।
এই কাজে ৫০/৬০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। তারা জমি প্রস্তুত, ঘাস বাছাই, আগাছা পরিষ্কার, পরিবহন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ঢাকা, বরিশাল, যশোরসহ দূর-দূরান্তে এসব ঘাস ট্রাকযোগে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
উদ্যোক্তা মো.
তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে আমি দক্ষিণ বালিয়া ছাড়াও ইচুলী, লক্ষীপুর ও মোহনপুরে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ একর জমি লিজ নিয়ে এ ঘাস চাষ করছি। যদি ঋণ সহায়তা এবং প্রশাসন হতে খাস জমি বরাদ্দ পাই, তাহলে আমি এ ব্যবসা আরও প্রসার ঘটিয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারব।”
এ বিষয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “লং কার্পেট ঘাসচাষ পদ্ধতি পরিদর্শন করে খাস জমি বরাদ্দসহ মনিরের মতো উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছি। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মন র হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।