বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় দীর্ঘ ২১ বছর পর সুদান থেকে দেশে ফিরেছেন মো. ময়নুল হক। রবিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই’ (UNISFA)-তে বাংলাদেশের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন, ব্যানব্যাট-৩ এর একটি টহল দল আবেই বাজার এলাকায় হঠাৎ এক বাংলাদেশি (ময়নুল হক) নাগরিকের সন্ধান পায়। ময়নুল হক গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের তালুক বাজিত গ্রামের রজ্জব আলীর ছেলে।

প্রায় ২১ বছর আগে টুরিস্ট ভিসায় সুদানের রাজধানী খার্তুমে পাড়ি জমান ময়নুল। কিন্তু, হঠাৎ শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ তার জীবনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়। বহুদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর প্রাণ বাঁচাতে তিনি পালিয়ে যান আবেই অঞ্চলে। দুর্ভাগ্যক্রমে এ সময় তিনি  পাসপোর্টসহ সমস্ত বৈধ নথিপত্র হারিয়ে ফেলেন। ফলে, দেশে ফেরা তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে দেশে ফেরার আকুতি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবেইতে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তার দেশে ফেরার আবেদন সেনা সদরে প্রেরণ করেন। আবেদনটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে গত ১৫ আগস্ট ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস তার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের নিমিত্তে ‘ট্রাভেল পারমিট’ ইস্যু করে। ময়নুলের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে দূতাবাস বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিমান ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক আর্থিক সহায়তা দেয়। 

এর পর গত ২৯ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আবেই থেকে বিমানযোগে সাউথ সুদানের জুবায় যান ময়নুল। সেখান থেকে তিনি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানযোগে রবিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় আটকে পড়া এক বাংলাদেশি নাগরিকের দেশে প্রত্যাবর্তনের মতো মানিবক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পেরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আনন্দিত ও গর্বিত। যেকোনো প্রয়োজনে দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ময়নুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, “দীর্ঘ ২১ বছর পর সুদানের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং পরিবারের সাথে মিলিত হতে পেরে আমি খুবই খুশি।” 

তিনি তার প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়তা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

ময়নুল হকের বড়ভাই রোকনুজ্জামান বলেছেন, “২০০৪ সালে ময়নুল টুরিস্ট ভিসায় সুদানে যায়। সেখানে সে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে ভালোই আয় করছিল। সেখানে যুদ্ধ শুরু হলে পালিয়ে আবেই অঞ্চলে আসে। সেখানে শুধু পানি খেয়ে সে ১১ দিন কাটিয়েছে। এর পর জাতিসংঘ মিশনের বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা পায় ময়নুল। তারাই দেশে আসার সব বন্দোবস্ত করে দেয়। ময়নুল বাড়ি ফিরে আসায় আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া জানাই।” 

ঢাকা/লুমেন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন ব হ ন র সদস ২১ বছর অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভ্যাটিকানের মানব উন্নয়ন মন্ত্রীর রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সফররত ভ্যাটিকানের সমন্বিত মানব উন্নয়ন মন্ত্রী কার্ডিনাল ফেলিক্স মাইকেল চের্নি। আজ সোমবার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান তিনি। এ সময় রোহিঙ্গা ব্যক্তি, পথশিশু, আদিবাসী ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের জীবনযাপন, চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সরাসরি ধারণা নেন।

পরিদর্শনকালে ভ্যাটিকানের উন্নয়ন মন্ত্রী কারিতাস বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এ সময় কারিতাসের প্রটেকশন, ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন) এবং শেল্টার কার্যক্রমের অগ্রগতি, প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

কার্ডিনাল ফেলিক্স মাইকেল চের্নির সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন ভ্যাটিকানের সার্বিক মানব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এশিয়া অঞ্চলের সমন্বয়ক ফ্রান্সেসকা ডোনা, বাংলাদেশে ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন এস র‌্যান্ডেল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

ভ্যাটিকানের উন্নয়ন মন্ত্রী রোহিঙ্গা শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পোপ চতুর্দশ লিওর সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। যাতে ভবিষ্যতে এসব মানবিক সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ