গুলিবিদ্ধ নাদিমের পেট থেকে রক্ত ঝরছিল: জবানবন্দিতে স্ত্রী তাবাসুম
Published: 3rd, November 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসুম আক্তার জবানবন্দিতে বলেছেন, গত বছরের ১৯ জুলাই তাঁর স্বামী জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন তাঁর স্বামীকে গুলিবিদ্ধ-রক্তাক্ত অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসেন। তিনি দেখতে পান, তাঁর স্বামীর পেট থেকে রক্ত ঝরছে। স্বামীর এই অবস্থা দেখে তিনি জ্ঞান হারান।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা একটি মামলায় আজ সোমবার তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে তাবাসুম এ কথাগুলো বলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজন এই মামলার আসামি। বিচারপতি মো.
জবানবন্দিতে তাবাসুম বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই তাঁর স্বামী নাদিম জুমার নামাজ পড়তে রামপুরা থানার সামনের মসজিদে যান। বেলা আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন তাঁর স্বামীকে গুলিবিদ্ধ-রক্তাক্ত অবস্থায় বনশ্রী এলাকার বাসায় (তাবাসুম বাবার বাড়ি) নিয়ে আসেন। তিনি দেখতে পান, তাঁর স্বামীর পেট থেকে রক্ত ঝরছে। স্বামীর এই অবস্থা দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। ৫-১০ মিনিট পর জ্ঞান ফিরলে তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামীকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাইরে তখন অনবরত গুলি চলছিল। তাই তিনি হাসপাতালে যেতে পারেননি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁর স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর থানার সামনে তাঁর স্বামীর শরীরে পুলিশ ও বিজিবির ছোড়া গুলি লাগে।
হাসপাতাল থেকে নাদিমের লাশ বাসার নিচে আনা হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তাবাসুম। তিনি বলেন, তখন রামপুরা থানার পুলিশ লাশ নিয়ে যেতে চায়। তাঁরা নাদিমের লাশ দোতলার বাসায় নিয়ে যান। সে সময় বাসায় ও বাসার আশপাশে অনেক আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা জড়ো হন। তখন হেলিকপ্টার থেকে বাড়ি ও ছাত্রজনতাকে লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তখন তাঁর মা ছাদে ছিলেন। টিয়ারশেল মায়ের শরীরে লাগতে গেলে দুলাভাই মাকে রক্ষা করেন। টিয়ারশেল ছাদে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। তিনি (তাবাসুম) রুমে বসে হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনতে পান। টিয়ারশেলের গন্ধ পান। এতে তাঁর চোখমুখ জ্বলছিল।
সেদিন রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নাদিমের লাশ মিরপুর-১ নম্বরের ঈদগাহ মাঠে নেওয়া হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করে তাবাসুম। তিনি বলেন, জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নাদিমের দাফন সম্পন্ন হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎসের একটি পণ্য রপ্তানি স্বস্তিতে নেই। টানা তিন মাস ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপরের দুই মাস, অর্থাৎ আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ এবং সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তাতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ বিদায়ী অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।
দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ৩৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে ১০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।
এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।
দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।