আমাদের মুখগহ্বরে থাকে অসংখ্য অণুজীব। এর কিছু উপকারী আবার কিছু নির্দিষ্ট পরিবেশ–পরিস্থিতিতে হতে পারে ক্ষতির কারণ। ক্যানডিডা অ্যালবিক্যানস নামের একধরনের ছত্রাক আমাদের মুখ ও খাদ্যনালিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকে।

মুখগহ্বরের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হলে এই ছত্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জিব, মাড়ি, তালু বা ঠোঁটে সাদা ক্ষত ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। একে বলে ওরাল ক্যান্ডিডিয়াসিস।

কেন হয়, কাদের হয়

সাধারণত যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁরা খুব সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হন। এইচআইভি বা এইডস, ক্যানসার বা কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী রোগী, শিশু ও প্রবীণেরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে উপকারী জীবাণু মারা যায় যা ছত্রাক বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মুখের লালায় চিনির মাত্রা বাড়িয়ে ছত্রাক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার না করলেও সংক্রমণ হতে পারে। তামাক সেবন ও ধূমপানের ফলে অতি দ্রুত ছত্রাক সংক্রমণ বাড়ে।

অ্যাজমা ও ফুসফুসের রোগে ভোগা রোগীদের নিয়মিত করটিকোস্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। এটি ছত্রাক সংক্রমণের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এ ছাড়া লালাগ্রন্থির রোগ, নিয়মিত দাঁত ও জিব পরিষ্কার না করা হতে পারে ছত্রাক বৃদ্ধির কারণ।

আরও পড়ুনদাঁত স্কেলিং কী, কেন করা হয়, না করালেই–বা কী হয়৩০ আগস্ট ২০২৫

লক্ষণ ও উপসর্গ

জিব ও গালের ভেতরের অংশে, ঠোঁট ও তালুতে সাদা ক্রিম বা দুধের মতো ব্যথাযুক্ত আস্তরণ দেখা যায় যা ঘষলে লাল ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

ঝাল ও মসলাজাতীয় খাবারে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।

মাড়িতে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়।

খাবার গিলতে কষ্ট হয় এবং স্বাদ পাওয়া যায় না।

মুখের ভেতর লালা শুকিয়ে আঠালো অবস্থা তৈরি হয় এবং রুচি নষ্ট হয়।

অনেক সময় ঠোঁটের কোণে ব্যথাযুক্ত ফাটল দেখা যায়।

কারও কারও ক্ষেত্রে জ্বর থাকে।

আরও পড়ুনদাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে কী খাবেন ১৪ জুন ২০২৫

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। পাশাপাশি কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও দেওয়া হয়। এই রোগ সারাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। রোগের তীব্রতার ওপর চিকিৎসার সময়কাল ও ওষুধের ডোজ নির্ভর করে। এ সময় ভাজাপোড়া, তেল–মসলা ও ঝালজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

এই রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত দাঁত ও জিব পরিষ্কার করতে হবে। কৃত্রিম দাঁত থাকলে তার সঠিক পরিচর্যা এবং ঘুমের আগে খুলে রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং ভিটামিন সি–জাতীয় ফল খেতে হবে। ইনহেলার ব্যবহারের পর প্রতিবার পানি দিয়ে কুলকুচি করতে হবে এবং ইনহেলার পরিষ্কার রাখতে হবে। চিনিযুক্ত খাবার, ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। অতিমাত্রায় মাউথ ওয়াশের ব্যবহার কমাতে হবে।

ডা.

জান্নাতুল ফেরদৌস, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি, আলোক ডেন্টাল কেয়ার ইউনিট, (আলোক হেলথকেয়ার লি.), মিরপুর-১০

আরও পড়ুনমুখের অস্বস্তিকর রোগ মিউকোসিল কেন হয়, চিকিৎসা ও প্রতিকার কী২৯ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ষ ক র স ক রমণ পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ