বরফের ওপর সাইকেল নিয়ে সন্তর্পণে এগোচ্ছেন। একটু হড়কে গেলেই অবধারিত মৃত্যু, গিরিখাত বেয়ে একেবারে নিচে। কখনো সাইকেল চালিয়ে, কখনো কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হচ্ছিল। এভারেস্ট অঞ্চলের কংমা লা পাস অতিক্রম করার সময় একটু ভয় ভয় লাগছিল। কারণ, এখানটায় এসে মৃত্যুর অনেক ঘটনা আছে। ট্রেইলটা বেশ কঠিন। ১০ কেজি ওজনের সাইকেল কাঁধে, আর ছয়–সাত কেজির ব্যাগ নিয়ে ওপরে উঠতে হচ্ছিল।

‘ভয়ের সঙ্গে আবার সুন্দর মুহূর্তও আছে। পাসগুলো থেকে নামার সময় ভালো লাগত। অপূর্ব সুন্দর সব দৃশ্য,’ বলছিলেন আরিফুর রহমান উজ্জল (৪১)। কুমিল্লার মানুষ, উজ্জল নামেই পরিচিত। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাইকেল নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন এভারেস্ট অঞ্চলসহ হিমালয়ের নানা ট্রেক। এসব ট্রেকে সাধারণত পর্বতারোহীরা পায়ে হেঁটে যান। উজ্জল গেছেন দ্বিচক্রযানে চেপে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সর্বশেষ কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রায় দুই মাসের অভিযান শেষ করে কাঠমান্ডুতে এসেছেন।

চ্যালেঞ্জিং এই অভিযানে ছিল কাদামাখা পাথুরে পথ, অতি উচ্চতা, অক্সিজেন স্বল্পতা, ভূমিধস, বরফে ঢাকা পথ, গ্লেসিয়ার ও একদম খাড়া টানা একেকবার ৩–৪ কিলোমিটার রাস্তা। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে রাতে না ঘুমিয়ে পরদিন ট্রেক করতে হয়েছে। বরফ ও রৌদের তাপ, জ্বর, হাতে ফ্রস্টবাইট, পায়ে মাসাল ক্র্যাম্প, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁকে একেকটা পাস অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেক পর্বতারোহীর কাছে এটি স্রেফ পাগলামি। এই অভিযানে উজ্জলকে কখনো সাইকেল চালাতে হয়েছে, কখনো কাঁধে বইতে হয়েছে, কখনোবা ঠেলে উপরে তুলতে হয়েছে।

মানাসলু সার্কিট ট্রেইল

পর্বতারোহণ এমনিতেই কষ্টসাধ্য কাজ। নিজের শরীরটা ওপরে টেনে তোলাই যেখানে বিরাট চ্যালেঞ্জ, সেখানে উজ্জল সাইকেল নিয়ে এক অভিযানেই ঘুরেছেন এভারেস্টসহ হিমালয়ের তিনটি ট্রেইলে। তিনি ঘুরেছেন নেপালের মানাসলু ও অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেইল। নেপালের পশ্চিমের এই দুটি ট্রেইলে ঘোরা শেষ করে পাড়ি দিয়েছেন ৭০০ কিলোমিটার পূর্বে এভারেস্টের তিন পাসে। পাস তিনটি হচ্ছে কংমা লা পাস, চো লা পাস এবং রেঞ্জো লা পাস।

৭ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করেন এই সাইক্লিস্ট। তার আগে ঢাকা থেকে বিমানে করে গেছেন কাঠমান্ডু। শুরুতেই মানাসলু সার্কিট ট্রেইল। এটা গিরিপথ, রাস্তা। মানাসলু পর্বতকে ঘিরে যে রাস্তা সেটাকে সার্কিট বলে। এই মানাসলুর সর্বোচ্চ বিন্দু, যার উচ্চতা ১৭ হাজার ৩৯০ ফুট। সেখানে নিজের প্রিয় দ্বিচক্রযানটির চাকার ছাপ রেখে এসেছেন। ১৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্কিট ট্রেইলটি শেষ করতে তাঁর ১১ দিন লেগেছে।

রেঞ্জো লা পাস.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়া পুরোনো দুটির সঙ্গে এবার নতুন একটি আসনে

জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর বিএনপির দায়িত্ব নিয়ে ১৯৯১ সালে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেন খালেদা জিয়া। তারপর বিভিন্ন নির্বাচনে নানা আসন থেকে প্রার্থী হলেও কোনো আসনে কখনো হারেননি তিনি। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তিনি; যার দুটিতে আগেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তার সঙ্গে নতুন এলাকা হিসেবে নিজের জন্মস্থানকে বেছে নিয়েছেন।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকার দিয়েছে। সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম আজ সোমবার প্রকাশ করেছে বিএনপি। তাতে দেখা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য রাখা হয়েছে ফেনী–১, বগুড়া–৭ ও দিনাজপুর–৩ আসনগুলো।

আওয়ামী লীগ আমলে দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর খালাস পেয়ে কারামুক্ত হলেও অসুস্থতার জন্য তাঁর নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে যে সংশয় ছিল, তা কেটে গেল আজ প্রার্থীর তালিকা ঘোষণার পর।

ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী–১ আসন থেকে বরাবরই প্রার্থী হয়ে জিতে আসছেন খালেদা জিয়া। ২০০১ সালে অবশ্য একাধিক আসনে জয়ী হওয়ার পর এই আসন ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাতে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য হন তাঁর ভাই সাঈদ এস্কেন্দার (বর্তমানে প্রয়াত)। এই এলাকায় খালেদা জিয়ার পৈতৃক নিবাস। যদিও তাঁর পরিবার পরে দিনাজপুরে স্থায়ী হয়। তাঁর জন্মও দিনাজপুরেই।

দিনাজপুর সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর–১ আসনে খালেদা জিয়া আগে কখনো প্রার্থী হননি। ১৯৯৬ সালের দুটি নির্বাচনে আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁর বোন খুরশীদ জাহান হক (বর্তমানে প্রয়াত)।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বাড়ি গাবতলী উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসনেও বরাবর প্রার্থী হয়ে আসছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জেতেন তিনি। তবে তিনি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে তিনবার জয়ী হন বিএনপির স্থানীয় নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, একবার উপনির্বাচনে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনা হয় কেন্দ্রীয় নেতা মওদুদ আহমদকে।

বগুড়া–৬ আসনে এবার প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাবা–মায়ের পথ ধরে রাজনীতিতে নামা তারেক রহমান এবারই প্রথম ভোটের লড়াইয়ে নামছেন।

খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়ে প্রতিটিতেই জিতেছিলেন। তখন একজনের সর্বোচ্চ পাঁচ আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল। খালেদা জিয়া সেবার বগুড়া ও ফেনীর পাশাপাশি ঢাকা-৯, ঢাকা–৫ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রার্থী হন। সেবার বিএনপি জয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নেন তিনি।

আরও পড়ুনখালেদা জিয়া লড়বেন তিন আসনে, তারেক রহমান একটিতে৩ ঘণ্টা আগে

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ফেনীর পাশাপাশি বগুড়ার দুটি আসনে প্রার্থী হন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১ আসনে প্রার্থী হয়েও ভোটে জেতেন তিনি। ২০১১ সালের নির্বাচনে বগুড়ার দুটি এবং ফেনীর একটির পাশাপাশি খুলনা-২ ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনে ভোট করেন তিনি। সেবারও সব আসনেই জেতেন।

নির্বাচনী আইন সংশোধনের পর ২০০৮ সালে এক ব্যক্তির সর্বাধিক তিনটি আসনে প্রার্থী হওয়ার নিয়ম হয়। খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসনে নির্বাচন করেন।

২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই তিন আসনে ভোট করতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তিনি আর পাননি। এক যুগ পর আবার ভোটের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ