বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) বন্ধের মাধ্যমে দ্বৈত শাসন বন্ধ করার সুপারিশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডি সিপিডি কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫: সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড.

ফাহমিদা খাতুন এ সুপারিশ করেন। অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সিপিডির ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনার (আইআরবিডি) আওতায় এ মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের এফআইডির কারণে দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা দুর্বল হয়েছে। এরকম দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর কারণে নীতি নির্ধারণে ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়া বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংকিং খাতকে দুর্বল করেছে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘খেলাপি ঋণ ব্যাংকের সম্পদের মান ও তারল্য পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০০৯ থেকে খেলাপি ঋণের যে ঊর্ধ্বমুখী ধারা ছিল, তা ক্রমবর্ধমান রয়েছে। সেপ্টেম্বর-২০২৪ অনুযায়ী মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা দেশের মোট অপরিশোধিত ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। এত বিপুল খেলাপি ঋণের কারণে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে।’’

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংকগুলোর অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা কমেছে। জুন-২০২৪ সময়ে ব্যাংকের ক্যাপিটাল-টু-রিস্ক ওয়েটেড এসেট রেশিও (সিআরডব্লিউএ) ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

দেশের ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তাৎক্ষণিক, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সময়ে বাস্তবায়ন করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শক্তিশালীকরণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন রক্ষা, আইন ও বিচারিক পরিবেশ উন্নয়ন, সঠিক ও সময়মত তথ্য নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন রক্ষার স্বার্থে এফআইডি বন্ধ করা জরুরি। এর পাশাপাশি প্রাক্তন গভর্নরদের জবাবদিহি, সাইবার হ্যাকিংয়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, যা এরই মধ্যে ৮০ বার পিছিয়েছে। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স ইস্যু বন্ধ করার মতো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন