আবারও উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব পেল একক প্রতিষ্ঠান
Published: 11th, February 2025 GMT
অনিয়ম, ব্যর্থতা এবং জালিয়াতির অভিযোগ থাকার পরও এককভাবে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি ভাতার অর্থ বিতরণ কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে না দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছিল। এ নিয়ে কয়েকটি বৈঠকে আগের মতো উপকারভোগীর পছন্দের এমএফএস অ্যাকাউন্টে বিতরণের সুপারিশ এসেছিল। সেই সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষ ও সমমানের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য তথ্য এন্ট্রির ক্ষেত্রে অভিভাবকদের শুধু নগদের অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় ষষ্ঠ থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং ভর্তি সহায়তার অর্থ ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যে গত বছরের ২ জুন ত্রিপক্ষীয় চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রির ক্ষেত্রে শুধু ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট নম্বর এন্ট্রির প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল ট্রাস্টের আওতাধীন সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির ষষ্ঠ-দ্বাদশ ও সমমান শ্রেণির উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সব অনলাইন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ‘নগদ’-এ রূপান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে উপকারভোগীদের পছন্দের অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়ে নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি নিতে আবার নতুন করে অ্যাকাউন্ট খোলার ঝামেলা পোহাতে হয়। ২০২৪ সালের ১০ জুন পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়ানোর পরও সব শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্ট ‘নগদ’-এ রূপান্তর করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করতে ২৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে তাদের পছন্দের অ্যাকাউন্টেই উপবৃত্তি দেওয়া হয়।
২০২১ সাল থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সব উপবৃত্তি কার্যক্রম প্রধামমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে পরিচালনা করা হতো। এর অধীনে অভিভাবকদের পছন্দের অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি দেওয়া হতো। কিন্তু ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারিতে উপকারভোগী এবং তাদের অভিভাবকদের মতামত উপেক্ষা করে পছন্দের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে উপবৃত্তি পাঠানোর পরিবর্তে এককভাবে নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের এই উপবৃত্তি পেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অনেক জায়গায় এদের এজেন্ট নেই। আর নগদের অ্যাকাউন্ট খুলতেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে এসেছে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গ্রাহক বানানো, সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন। সবার চোখের সামনে এসব অনিয়ম হলেও চুপ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ডাক অধিদপ্তর।
গত ১১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, নিরীক্ষা চালানোর পর নগদে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ‘অনিয়মের’ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকৃত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকা ইলেকট্রনিক মানি (ই-মানি) তৈরি করেছে নগদ। বয়স্ক, উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি ভাতার অর্থ বিতরণ না করে নগদ সেই অর্থ অন্যখানে সরিয়েছে বলেও জানান গভর্নর। সম্প্রতি নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) স্মৃতি কর্মকার সমকালকে বলেন, উপবৃত্তি প্রদানে নগদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত রয়েছে। তার পরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাগদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চালানো হবে কিনা তা জানতে চেয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডাক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে নগদের মাধ্যমেই উপবৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপব ত ত র পছন দ র ব তরণ র ও সমম ন ন র পর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করবেন মির্জা আব্বাস
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকা প্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন:
যে আসন থেকে লড়বেন তারেক রহমান
২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, ৩টি আসনে লড়বেন খালেদা জিয়া
এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
এ সময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন পেতে যাচ্ছি। সেই নির্বাচন প্রায় ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব আসনে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে, সেটি বিএনপি সমন্বয় করে নেবে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দিনাজপুর-৩ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসন থেকেও লড়বেন তিনি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ