‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ থেকে পদত্যাগ, কারণ জানালেন রিফাত
Published: 27th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নতুন ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ ২০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আত্মপ্রকাশের এক দিনের মাথায় আজ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। পরে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পদত্যাগের বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন এই ছাত্রনেতা।
রিফাত রশিদের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হল—
আরো পড়ুন:
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
সমন্বয়কদের নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ, নেতৃত্বে যারা
গতকালকের ঘটনা স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। তার আগেই জানিয়ে রাখি, নতুন ছাত্রসংগঠন "গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ"-এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই কমিটিতে আমার নাম ঘোষণা করার আগে আমার থেকে কনফার্মেশন নেয়া হয়নি। দফায় দফায় আলোচনা হয়েছিল কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলত অনুমতি ব্যতীত আমার নাম কমিটিতে রাখায় আমি এই পদ থেকে সরে এসেছি।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ- একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগ হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুরো সাংগঠনিক সেট আপ, লিডারশিপ থেকে শুরু করে বৈছাআ এর পেজকেও নতুন ছাত্র সংগঠন এর প্রোমোশনে কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু বৈছাআকে একটি সংগঠন আকারে যারা এতদিন টেনে নিয়ে গেছে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি, তাদের অংশগ্রহণ ছিল না খুব একটা ছাত্র সংগঠন গঠনের ক্ষেত্রে। বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সহ সবার কালেক্টিভ একটি ক্ষোভ সেখানে উপস্থিত ছিল। সবার প্রশ্ন ছিল, "যদি স্বতন্ত্র উদ্যোগ হয় তাহলে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' সেট আপকে কেনো ব্যবহার করা হচ্ছে ছাত্রসংগঠন নির্মাণের ক্ষেত্রে? এই প্রশ্নটাই বারবার করা হয়েছে।
পলিসি ছিলো ছাত্রসংগঠন নির্মাণে ঢাবি ক্যাম্পাসকে যারা সংগঠিত করেছে এবং বৈষম্যবিরোধীকে যারা সংগঠিত করেছে তাদের মাঝে টপ ৮ টা পোস্ট এর লিডারশিপ এ সমন্বয় করা হবে। পলিসি মেকিং যে পলিট ব্যুরো তৈরি হবে তারা হবে ঢাবি ও কেন্দ্রের অর্গানোগ্রাম। এক্ষেত্রে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, ঢাবি ব্যতীত অন্যান্য পাবলিক ইউনিভার্সিটি, সাত কলেজসহ অন্য কারোই অংশগ্রহণ ছিল না। এইজন্যই একটা কালেক্টিভ ক্ষোভ জন্ম নেয় সবার মাঝে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রেজেনটেটিভরা ইন্টারনালি ও এক্সটার্নালি অভিযোগও জানায়, সাত কলেজ থেকে আসা বৈছাআ নির্বাহী সদস্য মইনুল-সিনথিয়া থেকে শুরু করে সাত কলেজের প্রায় সব লিডারশিপ নতুন ছাত্র সংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পজিট করার জন্য যেই সার্চ কমিটি ছিলো সেইটা প্রাইভেটকে রিপ্রেজেন্ট করে না বলে প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা বারবার অভিযোগ এনেছে। সাত কলেজ অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট তিন গ্রুপই নিজেদের টপ চার/ছয় পোস্টের একটায় নিজেদের রিপ্রেজেনটেটিভ চেয়েছিলো। ফলত একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
একটা সত্যি সবাই স্বীকার করে নেয়, বৈছাআ তে অনেক বেশি লিডার রয়েছে কিন্তু সংগঠক এর সংখ্যা খুবই কম। বিশেষত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেই নতুন পলিটিক্যাল জেনারেশন তৈরি হয়েছে তাদেরকে ক্যাশ করা ও ক্যারি করানোর একটা গুরুদায়িত্ব আমাদের কাঁধে এসেছিল। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ছিল সবচেয়ে বেশি স্ক্যাটার্ড কারণ এই আন্দোলনে তাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল না, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নেমেছিলো। সেইসাথে ঢাকার অলিগলিতে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। এখানেও অনেক অনেক বেশি লিডারশিপ তৈরি হয়েছে যারা হারিয়ে গেলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। ফলত ঢাকা ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সংগঠিত করা বৈছাআ এর টপ প্রায়োরিটি ছিল। অতীতে সাংগঠনিক দক্ষতা ও আন্দোলনের লিডারশিপ এর জায়গা থেকে আমাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে সংগঠিত করার। আপনি আমার দেয়া ঢাকা মহানগর এর থানা কমিটিগুলোর টপ পোস্টে দেখবেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ও নারীদের রিপ্রেজেন্টেশন অনেক বেশি। সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিও সকলের মতামতের ভিত্তিতে কাউন্সিল এর মাধ্যমেই নির্বাচিত করা হয়েছে।
আমি প্রাইভেট এর আর্বান মিডল ক্লাসকে পলিটিক্যাল করে তুলতে চেয়েছিলাম। আমার অনেকগুলো রাজনৈতিক স্বপ্ন আছে। "কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই" এই প্রশ্নে আমার যেই ৫-৬ টা এম্বিশন আছে, তার মাঝে একটা ড্রিম হইলো ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী বানাইতে চাই, ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করতে চাই, ঢাকাকে ডিসেন্ট্রিলাইজেশন প্রসেসের মধ্য দিয়ে নিতে চাই। ঢাকায় জন্মেছি, ঢাকায় বড় হয়েছি, ঢাকা আমার সবচেয়ে প্রিয় শহর, এই শহরের প্রতি আমার দায়। এইজন্যই ঢাকা মহানগরকে সংগঠিত করতে চেয়েছি আমি।
আরেকটা জিনিস আমরা সবসময়ই নিশ্চিত ছিলাম।গণঅভ্যুত্থান হওয়ার প্রধান শর্ত হলো সারাদেশের রাজপথগুলো আর্বান মিডল ক্লাস যারা ন্যাচারালি পলিটিক্স থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে তাদের দখলে থাকতে হবে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা মোটাদাগে ওই আর্বান মিডল ক্লাসকে রিপ্রেজেন্ট করে। তাই অভ্যুত্থান এর মধ্য দিয়ে যারা লিডার হয়ে উঠেছে তাদের পলিটিক্যালি ক্যাশ করতে পারলে এই আর্বান মিডল ক্লাসকে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী আকারে উত্থান ঘটাইতে পারবো। গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক এই বোঝাপড়া আমার বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম, পাঠচক্র এবং মাঠে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফলে তৈরি হইসে। ঢাকাকে যদি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আর্বান মিডল ক্লাস নেতৃত্ব দেয় তাহলেই রাজনীতিতে একটা র্যাডিকাল চেঞ্জ ঘটাতে পারবো। এইটা আমার জীবনের আরেকটা ড্রিম।
অভ্যুত্থানের পর সবাই যখন টকশো করে বেড়িয়েছে, থানা-ডিসি অফিস-সচিবালয়ে ঘুরেছে, বিভিন্ন পলিটিক্যাল স্ফেয়ারে-এম্বাসিতে গিয়েছে, বিদেশে ডেলিগেট হয়ে স্পিচ দিয়ে বেড়িয়েছে, আমি তখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে গিয়েছি, ঢাকার অলিগলিতে গিয়েছি। এইটা আমার রাজনৈতিক এম্বিশনেরই অংশ। অভ্যুত্থানের পর আমি এই এম্বিশনের পথেই হেঁটেছি। এইটা আমার চয়েজ ছিল।
অভ্যুত্থানের পরিচিত ফেইস হওয়ার পরেও এই গ্রুপটার সাথে অনেক বেশি সময় কাটানো ও তাদেরকে পলিটিক্যালি পজিট করার ফলে এদের একটা বড় অংশ চেয়েছে তাদের রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে আমি থাকি নতুন ছাত্র সংগঠনের টপ পোস্টে। নইলে তাদের স্বার্থের কথা অতীতে যেমন কেউ বলে নাই এখনো বলবে না এমন একটা আলাপ ওদের মাঝে চাওর ছিল। এইটুকুই আরকি।
নতুন ছাত্র সংগঠন এ প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিলো আমি সদস্য সচিব হবো। এরপর আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে মুখ্য সংগঠক, পরবর্তীতে সেখান থেকেও সরিয়ে মুখপাত্র করার প্রস্তাবনা করে। সবশেষে সেখান থেকেও মাইনাস করে আমাকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আসার প্রস্তাব করে। মুখপাত্র পোস্ট পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমি কালেক্টিভ স্বার্থের কথা ভেবে মেনে নিয়েছি। যখন যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয় তখন আমি স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেই, এই ছাত্র সংগঠনে আমি থাকবো না। এইটা জানিয়ে দেয়ার পর আর কোনো মিটিং, সংগঠন গঠনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি এবং লিটারেচার টিমের কোনো কাজের সাথেই যুক্ত ছিলাম না। আমি পুরোপুরি এই সংগঠন গঠনের সমস্ত প্রসেস থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। প্রাইভেট ও মহানগর থেকে সার্চ কমিটিতে রিপ্রেজেনটেটিভ দিয়ে গিয়েছিলাম।তাদেরকে পজিট করানো আমার দায়িত্ব ছিল, আমি সেই দায়িত্ব পালন করে সরে গিয়েছি।
আমাকে যখন প্রতিদিন নতুন প্রস্তাবনায় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে এইটা ক্ষোভ জন্ম দেয় সেই সকল গ্রুপের মাঝে যারা আমার হাত ধরে প্রথমবার রাজনীতিতে এসেছে। তারা চাইছিলো আমি আমার সদস্য সচিব পদ আঁকড়ে ধরে রাখি, কিন্তু আমি জানিয়ে দেই সংগঠন এর স্বার্থে আমাকে যদি সংগঠন থেকে সরেও যেতে হয় আমি সেইটাই করবো। আমি আসলে সেটাই করেছিলাম। জ্বরে অসুস্থ ছিলাম, বের হইনি, সারাদিন ঘরে বসে সিনেমা দেখেছি। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি কালেক্টিভ স্বার্থের কথা চিন্তা করে। (অনেকেই আমাকে মাইনাস করার পেছনে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা বলে, অনেকগুলো প্রমাণিত সত্য আকারেও এসেছে।আমি এইগুলো পাবলিক স্ফেয়ারে আনার জন্য আগ্রহী নই।)
বাকের-কাদের ভাই গতকাল সকাল পর্যন্ত আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি যুগ্ম-আহ্বায়ক বা যুগ্ম সদস্য সচিব পদে আসবো না বলে সাফ জানিয়ে দেই। সেইসাথে জানাই যে, প্রাইভেট এর শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিদ্যমান আছে। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হৃদি আপুকে নিয়ে তাদের একটা এলিগেশন রয়েছে (সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পেজ থেকে তারা এই নিয়ে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভও জানায়)। আমি এই কনসার্ন দেই যে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ, বৈছাআ এর অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাও ক্ষুব্ধ। প্রাইভেট এর পোলাপান পাল্টাপাল্টি প্রেস কনফারেন্স করতে পারে। আপনারা তাদের দাবিগুলো নিয়ে ভাবেন, তাদের সাথে বসে ডিসিশন নেন।
আমি নতুন ছাত্র সংগঠনে থাকবো না এইটা গতকাল সকালে ক্লোজ সার্কেলে জানিয়ে দেই। আমার সাথে প্রাইভেট, সাত কলেজ, রাবি-চবি সহ অনেকগুলো গ্রুপ যোগাযোগ করে যে তারাও বেশ ক্ষুব্ধ এই প্রসেসে। আমি সবাইকে বলি বার্গেইন টুলস হিসেবে আপনারা আপনাদের প্রস্তাবিত নাম উইথড্র করতে পারেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে। আপনারা এইটা করলে আপনাদের সাথে আলোচনা টেবিলে বসা হবে কারণ পলিসি আকারেই ছিল আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জনসম্মুখে ঘোষণা করবো। এইটা আলাপ শেষে আমি ঘুমিয়ে পরি। ঘুম থেকে উঠি তিনটার পর। ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি অনেকগুলো কল এসেছে ফোনে। কলব্যাক করে শুনি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অনেক স্টুডেন্টরা সংগঠিত হয়ে তাদের স্টেক নিশ্চিত এর জন্য মধুতে অবস্থান নিয়েছে। সেইসাথে মহানগর এর অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের সংগঠিত করেছে যাতে আমার অবস্থান কেন্দ্রীয় কমিটির টপ চার পদের একটিতে রাখা হয়। ঢাকার অনেক ছেলেমেয়েই এসেছিল তাদের ছাত্র সংগঠন এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে। সব মিলিয়ে এখানে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদেরই উপস্থিতি ছিল। মূলত দুপুরে মধুতে গিয়েই তারা সবাই জানতে পারে আমি মধুতে আসি নাই এবং ছাত্র সংগঠনেও আসছি না। অলরেডি বাজারেও এইটা চাওড় হয়ে গিয়েছিলো আমাকে মাইনাস করা হয়েছে। ফলে সেখানের কেউ কেউ আমার নামেও স্লোগান দেয়া শুরু করে। মোদ্দাকথা এইখানে সুসংগঠিত কিছুই ঘটে নাই। আমাকে ওই মব থেকে একজন কল দিয়ে বলছিলো, সিচুয়েশন উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে, হাতাহাতি হতে পারে। আমি তাকে স্পষ্ট করে বলেছিলাম, সিচুয়েশন যদি উত্তপ্ত হয়ে উঠে তাহলে প্রয়োজনে মার খেয়ে আসবা তাও নিজেদের মাঝে মারামারি করবা না।
আমি পোস্ট-পদবির জন্য গ্যাঞ্জাম করি না এইটা আমার ক্লোজ সার্কেলের সবাই জানেন। আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি সংগঠন। পদ-পদবী আমাকে লিডার হওয়া থেকে কোনোদিন আটকায় নাই। আমি ছাত্র অধিকার পরিষদে সদস্য ছিলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিতেও সেই সদস্য ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমার হাতে গড়া সংগঠন।কোটা আন্দোলন ঘোষণা করেছিলাম আমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট সিআর+হল রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়ে গোটা ক্যাম্পাসও আমার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে আমি প্রমিনেন্ট ছিলাম এইটা মোটাদাগে সবাই স্বীকারও করে।
ঢাকাকে সংগঠিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আসিফ ভাই আর আমাকে। সাত কলেজ, জগন্নাথ থেকে শুরু করে অনেক জায়গাতেই আমি অন্যতম সংগঠক ছিলাম। "কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না" গ্রুপটাও আমারই খোলা, আমিই দায়িত্ব নিয়ে একদম ফার্স্ট দিনে এই গ্রুপটাকে মেইনস্ট্রিম বানিয়েছিলাম যেখানে আরও অনেকগুলো গ্রুপই তৈরি করেছিলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডাররা। পরবর্তীতে সমন্বয়ক কমিটি বানানো হলে আমাকে সমন্বয়ক বানানো হয় নাই, আমি হলাম সহ-সমন্বয়ক। অথচ কোটা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানের যাত্রায় আমি লিডারশিপ ও স্ট্র্যাটেজি মেকিং এ সবসময়ই শুরুর একজনই ছিলাম। ২ তারিখ রাতে নেয়া আমাদের যেই স্ট্যান্ড অভ্যুত্থানকে রক্ষা করেছে বলে সবাই বলে সেই স্ট্যান্ডটাও প্রথমে আমার নেয়া। আমাকে সহ সমন্বয়ক বানানো হইলো শুরুতে অথচ শেষদিকে পুরো ১৫৮ জন সমন্বয়কের লিস্টটা আমার হাতেই হয়েছে। এমন অনেক উদাহরণ আছে আমার লাইফে। পদ পদবি আমাকে কোনোদিন নেতা হওয়া থেকে আটকায় নাই। মূলত ডিগনিটির প্রশ্নে মিল না খাওয়ার জন্যই ছাত্র সংগঠন থেকে আমার সরে আসা।
আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একদম টিএসসির ছেলে বলতে ক্যাম্পাসে যা বোঝায় আমি সেইটাই। হাসিনার পতনের আগে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ঢাবিতে চান্স পাওয়ার মুহূর্তটা। গতকাল যারা ছাত্র সংগঠন এর ঘোষণা দিয়েছে তারা আমার ভাই ব্রাদার। আমি এই মানুষদের জন্য ক্যাম্পাসে মার খেয়েছি, মার দিয়েছি। রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য এই মানুষদের বিরুদ্ধে মব জড়ো করে হামলা করবো এমন ভাবনা কস্মিনকালেও আমি কল্পনা করতে পারি না।
ঢাবি বলি আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বলি,যারা আহত হয়েছেন তারা আমার ভাই ব্রাদার। আমি এই ঘটনার সুস্পষ্ট তদন্ত চাই। যারা জড়িত তাদের উপর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দকে। সেইসাথে যারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমি হামলার নির্দেশ দাতা তাদেরকে বলবো সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসুন। ঘটনার সাথে-সাথেই যখন ঢাবিতে আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হইসে তখনই আমি ঢাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মুখোমুখি হতে চেয়েছিলাম। কাদের-বাকের ভাইকে কল দিয়ে তাদের রিচ করতে পারি নাই। পরে জাহিদ ভাইকে কল দিয়ে জানাই আমি ঢাবির শিক্ষার্থীদেরকে ফেইস করবো। তিনি বলেছেন, সিচুয়েশন পজিটিভ না। আগে আমরা সবাই মিলে অর্গানোগ্রাম ফোরামে আলোচনা করে নেই আমি,তারপর আসো। সেই আলাপ শেষ করতে করতে রাত প্রায় শেষ হয়ে যায়। তাই গতকাল আর শিক্ষার্থীদেরকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ হয়নি।
ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তি ব্যতীত কেউই আমার শত্রু না, আমি তাদের কাউকেই শত্রুজ্ঞান করি না আমি। গতকালকের ঘটনায়ও আমি কাউকে বন্ধুজ্ঞান বা শত্রুজ্ঞান করছি না। ঢাবির শিক্ষার্থীরাও আমার ভাই,আমার বোন।প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও আমার স্ট্যান্ড সেইম। আমি সবাইকে ওউন করতে চাই। যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত, আমি ঘটনার সুস্পষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে একটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গতকালের হামলার নির্দেশদাতা বলে আমাকে যেই দাবি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গতকালের এই ঘটনার পরেই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দেয় যে তারা তাদের স্টেক বুঝে নিতেই সেখানে গিয়েছে। রাতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠক এর সাথে মিটিং এ বসে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। সেখানেও তারা পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করে এবং ব্যাপারটা স্পষ্ট করে। তারা সেখানে স্পষ্ট করেই বলে যে, মধুতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শুধু তাদের স্টেক নিশ্চিত করার জন্যই গিয়েছিলো। সেখানে আমার নাম ধরে স্লোগান দেয়ার যেই ব্যাপারটা সেটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা এবং আমি মধুতে আসিনি এইটা শোনার পর কয়েকজনের ইন্সট্যান্ট রিয়্যাকশন। আশা করি আমি আমার অবস্থান স্পষ্টভাবেই ব্যাখ্যা করতে পেরেছি।
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র স গঠন এ স গঠন এর সমন বয়ক র জন ত ক অন ক ব শ আম র ন ম অন য ন য ঠ ত কর ছ স ত কল জ ব সরক র র জন য আম র স হয় ছ ল র অন ক ত কর র কর ছ ন র র জন ন স কর ন র পর ও আম র ষ ট কর কম ট ত র একট স গঠক ঘটন র গ রহণ গঠন ক গঠন র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের সঙ্গে দেখা হলে অবশ্যই বিষয়টি জানতে চাইব
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে সম্প্রতি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ক্রিকেটে নিজের সেকাল-একাল, রাজনীতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, বিসিবিতে যুক্ত হওয়ার গুঞ্জনসহ নানা বিষয়ে সমকালের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তামিম ইকবাল। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সেকান্দার আলী।
সমকাল : সম্প্রতি চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি তারুণ্য উৎসব মঞ্চে আপনাকে দেখা গেছে। এর পর অনেকে ভাবছেন, আপনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। আসলে কী?
তামিম ইকবাল : আমার একদমই রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা নেই। তাই বলে আমি রাজনীতিকে খারাপভাবে দেখি না। একজন সংগঠক বা ক্রিকেটারকে যেমন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হয়, তেমনি একজন রাজনীতিবিদকেও রাজনীতিতে প্রজ্ঞাবান হতে হয়। আমার রাজনীতিতে আসার সুযোগ ছিল, কিন্তু সম্পৃক্ত হওয়ার তাগিদ বোধ করিনি। আমার ওই রাজনৈতিক যোগ্যতা নেই। হ্যাঁ, চট্টগ্রামে বিএনপির তারুণ্য উৎসবে গিয়েছিলাম, তবে রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়। আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে, চট্টগ্রামের স্পোর্টস নিয়ে কথা বলার জন্য। আমি বক্তব্য দেওয়ার শুরুতেই বলেছিলাম, আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না। আমার বক্তব্যের পুরোটা জুড়ে তাই ছিল খেলা। ২০ বছর পরে গিয়ে কী হবে, কেউ বলতে পারে না। তবে এ মুহূর্তে রাজনীতি নিয়ে ভাবছি না।
সমকাল : বিএনপি ঘরানার ক্রীড়া সংগঠকদের অনুষ্ঠানেও আপনাকে দেখা গেছে।
তামিম : ওখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চেয়ে খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা বেশি ছিলেন। যে কমিটি হয়েছে, দেখবেন সেখানে আমার নাম নেই। ক্লাব ক্রিকেট নিয়ে একটা কমিটি হতে পারে, সেখানে আমি থাকতেও পারি, নাও পারি।
সমকাল : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রীড়া সংগঠক হতেও তো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকতে হয়।
তামিম : আমি আশা করব, এমন একজন রাজনৈতিক নেতা আসবেন, যিনি দেশের স্পোর্টসের স্বার্থে ক্রীড়াবিদদের বেছে নেবেন। স্পোর্টসের উন্নয়নে সঠিক মানুষ খুঁজে বের করবেন। আমি বলব না, আমিই সেই সঠিক মানুষ। তারা যাঁকে সঠিক মনে করবেন, তাঁকে খুঁজে নেবেন। আমি ওটার জন্য অপেক্ষা করব।
সমকাল : আপনি যে ধরনের নেতার কথা চিন্তা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে কি তাঁকে দেখা যাবে?
তামিম : এটি বলা কঠিন। আমি যেহেতু রাজনীতি করি না, তাই সব দলের কথাই বলব। নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের কথা কখনোই বলব না। নির্বাচন হলে কে জিতবে জানি না; তবে ধারণা করতে পারি। আমার কাছে মনে হয়, যারাই আসুক, তারা স্পোর্টসের লোকদের দিয়ে স্পোর্টস পরিচালনা করবেন।
সমকাল : এত আগে আন্তর্জাতিক খেলা ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কারণ কী?
তামিম : ২০২৩ সালে আমি যখন অবসরের ঘোষণা দিই তখন অনেক মিডিয়ার ধারণা ছিল, আবেগে ছেড়েছি। আসলে আমি ছয় থেকে আট মাস ধরে সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে কোনোরকম সহযোগিতা করা হচ্ছিল না। সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় অবসরের ঘোষণা দিই। হ্যাঁ, যেদিন ঘোষণা দিয়েছি, সেদিন আবেগাপ্লুত ছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
সমকাল : তাহলে দলে কি আপনি একা হয়ে গিয়েছিলেন?
তামিম : আমি সব সময় সবাইকে নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করি। আড্ডা দিতে ভালোবাসি। এসব থেকে আমাকে একা করে দেওয়া হলে ভেঙে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাই না।
সমকাল : ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে সাকিবের একটি সাক্ষাৎকারে আপনার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তোলা হয়। সে বিষয়ে কিছু বলবেন?
তামিম : যা কিছু হয়েছে বা বলেছে, তা বলা কতটা উচিত ছিল, তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয়, জিনিসটা কেউই ভালোভাবে নেয়নি। ওই সময়ে যা কিছু হয়েছে, তা না হলে এখন আমরা আরও ভালো জায়গায় থাকতাম।
সমকাল : সাকিবের মন্তব্যে কষ্ট পেয়েছিলেন?
তামিম : কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম বেশি। সে তার মতামত দিয়েছে। কিছু ভুল তথ্য দিয়েছে। ওখানে সাকিব একটা কথা বলেছে– আমি বেছে বেছে ম্যাচ খেলতে চেয়েছি। এটা সে কোথায় পেয়েছে? ফিজিও বলেননি, নির্বাচকরা বলেননি, আমিও বলিনি। কোনো দিন সাকিবের সঙ্গে দেখা হলে, আমরা আড্ডায় বসলে অবশ্যই বিষয়টি জানতে চাইব তাঁর কাছে।
সমকাল : গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে নিউজ হয়েছে, আপনি সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে গালি দিয়েছিলেন। এটা কি সত্য?
তামিম : না, না। একদম মিথ্যা কথা। তাঁর সঙ্গে খুবই ক্রুদ্ধ আচরণ করেছি। আমি বেশি আক্রমণাত্মক ছিলাম। তাঁর দিক থেকে কোনো খারাপ কথা বা খারাপ জবাব আসেনি। আমি শতভাগ নিশ্চিত করতে চাই– কোনো বাজে শব্দ বা গালাগাল যাকে বলা হয়, ও রকম কিছু হয়নি। হ্যাঁ, অনেক শক্ত কথা বলেছি। যেভাবে বলেছি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। হয়তো আরও ভালোভাবে বলতে পারতাম। তবে যা বলেছি, তার জন্য আমি দুঃখিত না। যেভাবে বলেছি, ওটার জন্য দুঃখিত হতে পারি।
সমকাল : সাকিব-তামিমের সম্পর্কে বিভেদ তৈরি করে রাখা হয়েছিল। বিষয়টা কি এমন?
তামিম : যে মানুষগুলো এখন তাদের পদে নেই, তাদের নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। কোনো দিন মুখোমুখি হলে অবশ্যই বলব। তবে সাকিব আর আমার ঝামেলার কথা মিডিয়া অনেক আগে থেকে জানত। খেলায় প্রভাব না পড়ায় মিডিয়া কিছু লিখেনি। বিসিবি সভাপতি (নাজমুল হাসান পাপন) প্রকাশ্যে বলে দেওয়ার পর থেকে মিডিয়া লেখা শুরু করে। ২০২৩ সালে কেন বিষয়টি সামনে এনে বিভেদ তৈরি করতে হলো? এ প্রশ্নের উত্তর তারা (পাপন) ভালো দিতে পারবেন।
সমকাল : আপনাদের সম্পর্কের অবনতির কারণ কী ছিল? তারকা খ্যাতি?
তামিম : না। একদমই না। অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না। আমার মনে হয় না, সাকিবও কখনও এভাবে চিন্তা করেছে। বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব অনেক কারণেই হতে পারে। তবে আমাদের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচাতে বিসিবি থেকে কেউ চেষ্টা করেননি। তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি।
সমকাল : আপনি নিজে উদ্যোগ নিয়েছেন?
তামিম : অধিনায়ক হিসেবে আমি সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা করেছি। কয়েকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। তবে ভবিষ্যতে হবে না, তা মনে করি না।
সমকাল : আপনার অসুস্থতার সময়ে সাকিব তাঁর ফেসবুক পেজে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তাঁর বাবা-মা আপনাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন।
তামিম : আমরা দু’জনই পরিণত। আমাদের দু’জনের প্রতি দু’জনের কিছু রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে আমরা কখনও সামনাসামনি হলে এবং নিজেরা কথা বলা শুরু করলে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।
সমকাল : ভারতে শেষ টেস্ট খেলেছেন সাকিব। ওই সিরিজে আপনি ছিলেন ধারাভাষ্যকার। তখন কি কথা হয়েছে?
তামিম : ওই সফরে ওর শেষ ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, ওটাই ওর শেষ ম্যাচ কিনা। ওটা শেষ ম্যাচ হলে আমি বক্তব্য দিতাম সাকিবের ক্যারিয়ার নিয়ে। আমি ম্যানেজারকে সেভাবে বলে রেখেছিলাম। ওকে যতটা কাছ থেকে আমি দেখেছি বা সে আমাকে যতটা দেখেছে, তা অনেকে দেখেনি। আমার মনে হয়, সবাই ‘ডিজার্ভ’ করে, সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কী করেছে– সেটা আমার মুখ থেকে শোনার। আমি খেলোয়াড় সাকিবকে নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। আমার অন্য কোনো মতামত দেওয়ারও প্রয়োজন নেই, নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। খেলোয়াড় সাকিব আমার কাছে অনেক বড়।
সমকাল : বিদেশে সাকিবের সঙ্গে দেখা হলে কী করবেন?
তামিম : আমি জিজ্ঞেস করব, তুমি কেমন আছ। সব ঠিকঠাক আছে তো (হাসি)। আমি নিশ্চিত ও আমাকে জিজ্ঞেস করবে, কেমন আছি। পরিবার ভালো আছে কিনা। আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি– ও আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেবে না, আমি তাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেব না। এটা সম্ভব না।
সমকাল : তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেগুলো দেখা যায়?
তামিম : যেগুলো দেখেন, সেগুলো নোংরামি। তার সঙ্গে বিমানবন্দর, প্লেন বা কোনো জায়গায় দেখা হলে অবশ্যই আমরা কুশল বিনিময় করব। ওই আত্মসম্মান বোধটুকু আমাদের আছে।
সমকাল : মাশরাফির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বা হয়?
তামিম : মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে এবং যোগাযোগ আছে। আমি হাসপাতালে থাকার সময় তিনি ফোন করেছিলেন। আমার জন্য দুশ্চিন্তায় ছিলেন। দোয়া করেছেন। ক্রিকেটার হিসেবে একটা সম্পর্ক তো থাকেই। এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়।
সমকাল : মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এখনও ক্রিকেটে আছেন। আপনার পরিকল্পনা কী?
তামিম : আগামী মাসে সিঙ্গাপুরে আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা আছে। ৪ জুলাই ওখানে যাব। ৫ ও ৬ জুলাই টেস্টগুলো হবে। রিপোর্ট ভালো হলে আশা করছি, চিকিৎসক খেলার অনুমতি দেবেন। যেহেতু একটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে, তাই বুঝেশুনে কাজকর্ম করতে হবে আমাকে। আল্লাহ সুস্থ রাখলে বিপিএল খেলার ইচ্ছা আছে। প্রিমিয়ার লিগের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। সবকিছুই নির্ভর করছে সিঙ্গাপুরের রিপোর্টের ওপর।
সমকাল : আলোচনা আছে, আপনার ফোকাস এখন ক্রিকেট বোর্ড। আপনি কি বিসিবিতে যুক্ত হতে চান?
তামিম : আমি যেভাবে চিন্তা করছি, সেটা একটু ভিন্ন। আমরা বোর্ডে গেলে ক্রিকেটের ভালো করার জন্যই যাওয়া উচিত। এখন যেভাবে বিসিবি চলছে, ওইভাবে যেতে হলে না যাওয়াই ভালো। এ ব্যাপারে আমি খুবই পরিষ্কার। অনেকে প্রতিশ্রুতি দেন এই করবেন, ওই করবেন। আমার কাছে মনে হয়, কেউ বলে পরিবর্তন করতে পারে না, চেষ্টা করতে পারে। আমিও তাই বলব, আমি গেলে ভালো করার চেষ্টা করব। তবে শুধু শুধু বোর্ডের পরিচালক হওয়া বা কোনো পদ নেওয়ার শখ আমার নেই। কারণ আল্লাহ খেলার মাধ্যমে আমাকে অনেক দিয়েছে।
সমকাল : বড় পরিবর্তন আনতে হলে তো বিসিবির নির্বাচিত সভাপতি হতে হবে। সেটা কি সহজ?
তামিম : একদম সত্যি কথাই বলেছেন। নির্বাচনটা কীভাবে হয়, তা আমরা জানি। আমি যে সুন্দর একটা বোর্ডের চিন্তা করছি, বাস্তবে সে সুযোগ কম। পরিবর্তন করা না গেলে আমাদের মতো লোকজনের দরকার কী? যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলুক।
সমকাল : কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে কি নির্বাচিত পরিচালক হবেন?
তামিম : অবশ্যই চিন্তা করব। বলেছিলেন ভালো কাজ করতে হলে বোর্ডের শীর্ষ কর্তা হতে হবে। বিসিবিতে ২৫ জন পরিচালক থাকে। সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো থাকবে না। সবার সঙ্গে সবার বোঝাপড়া ভালো থাকবে না। তবে সবাইকে একটি দল হিসেবে কাজ করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা। ২৫ জনের ১০ জনের উদ্দেশ্য ব্যক্তিস্বার্থ দেখা হলে তা আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করবে। ওই রকম পরিবেশে কাজ করা কঠিন।
সমকাল : দেশের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থাকে কীভাবে দেখছেন?
তামিম : বর্তমানে জাতীয় দলের তিন সংস্করণে তিনজন অধিনায়ক। আমার কাছে জিনিসটা কার্যকর মনে হয় না। আমরা এমনিতেই ধুঁকছি। সেখানে যেভাবে শান্তকে সরানো হলো, তা দুঃখজনক। বিসিবি যে কাউকে অধিনায়ক করতে পারে। মিরাজ খুবই ভালো প্রার্থী। কিন্তু শান্তকে সম্মান দিয়ে সরাতে পারত। উচিত ছিল আগে শান্তর সঙ্গে কথা বলা, পরে নতুন অধিনায়কের সঙ্গে। সবকিছু চূড়ান্ত করে মিডিয়ায় জানাতে পারত। হয়েছে উল্টোটা।
সমকাল : পঞ্চপাণ্ডবের শূন্যতা পূরণে বিসিবির কী করা উচিত?
তামিম : পাঁচজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সরে গেছে, যাদের ১৫ থেকে ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা। তারা হাজারের মতো ম্যাচ খেলেছে। তারা শীর্ষ পারফরমার ছিল। এই মানের ক্রিকেটার সরে গেলে যে কোনো দলে শূন্যতা তৈরি হবেই। কথা হচ্ছে বিসিবি কি ক্রান্তিকালের জন্য প্রস্তুত ছিল? বোর্ড সচেতন থাকলে এত সমস্যা হতো না। এখন যারা আছে, তাদের বেশির ভাগই ৭ থেকে ১০ বছর ধরে খেলছে। আমি বলব, জাতীয় দলকে সব সুবিধা দেন, সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলতে থাক। কিন্তু ফোকাস দেন এইচপি, টাইগার্স এবং ‘এ’ দলে। এই জায়গাগুলোতে বেশি বিনিয়োগ না করলে, ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব না হলে জাতীয় দল সব সময় ধুঁকতে থাকবে।
সমকাল : আগামী বছর টি২০ বিশ্বকাপ, ২০২৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এই দুই টুর্নামেন্ট নিয়ে বিসিবির পরিকল্পনা কেমন হলে ভালো হয়?
তামিম : আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেটারদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেশি। দল হিসেবে ভালো করতে পারছে না। বোর্ডের ভেতরে অস্থিরতা। অধিনায়ক পরিবর্তন হলো। জিনিসগুলো খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে হয়তো। বিসিবির জন্য এ মুহূর্তে করণীয় হলো– দলের ভেতরে আস্থা ফিরিয় আনা। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস দেওয়া যে– যা কিছুই ঘটুকু বোর্ড তোমাদের সঙ্গে আছে। এই খেলোয়াড়রাই কিন্তু ২০২৬ ও ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে খেলবে।
সমকাল : তাহলে কি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ ঠিকভাবে চলছে না?
তামিম : আমার কাছে মনে হয়, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের সিলেকশন মিটিংয়ে বসা উচিত না। একাদশ নিয়ে নাক গলানো উচিত না। তাঁর অধীনে তিনজন নির্বাচক আছেন; কোচ, সহকারী কোচ আছেন। সবাইকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এর পর দল ফেল করলে জবাবদিহি চাইবেন। নিজেই সবকিছুতে জড়িয়ে গেলে নির্বাচক, কোচিং স্টাফকে প্রশ্ন করবে কে?
সমকাল : আপনি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান হলে কী করবেন?
তামিম : আমি চেষ্টা করব খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে। নির্বাচক প্যানেল, কোচিং স্টাফকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের কাছ থেকে পারফরম্যান্স আদায় করতে। অফ সিজনে এক-দু’জন ক্রিকেটারকে হলেও কাউন্টিতে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া। কাউন্টি দলের সঙ্গে নিজেদের টাকায় হলেও দু’জন কোচকে প্রতিবছর জুড়ে দেওয়া, যাতে তারা উন্নত কোচিংটা শিখতে পারেন। তারা শিখলে তাদের কাছ থেকে দেশের অনেক কোচ শিখতে পারবেন।
সমকাল : আপনার চোখে দেশের ভবিষ্যৎ তারকা কে বা কারা?
তামিম : বর্তমান দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই আমাদের সঙ্গে খেলেছে। অনেকের ভালো পারফরম্যান্স আছে। পেস বোলিং বিভাগে তাসকিন আহমেদ আছে, নতুন এসেছে নাহিদ রানা। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল খুবই ভালো একজন বোলার। তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলীরা ভালো করছে। তাদের ভেতর থেকেই কেউ কেউ বড় তারকা হয়ে উঠতে পারে।
সমকাল : শেষ প্রশ্ন– বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
তামিম : আমি খুবই আশাবাদী। আমরা হয়তো সাময়িকভাবে ভালো করছি না। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে ফল দেখতে পাব। আমরা আসলে তিন সংস্করণে একসঙ্গে কখনোই ভালো খেলিনি। এই দলটাকেও এক বছর সময় দিলে ঘুরে দাঁড়াবে। আমি চাইব, বিসিবি ক্রিকেটারদের সর্বাত্মক সাপোর্ট দেবে, তারা যেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারে।
সমকাল : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তামিম : সমকালকেও ধন্যবাদ।