জনপ্রশাসনকে গতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক উপদেষ্টা ও সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। ইতিমধ্যে কমিশন ১০০ সুপরিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যা জনপ্রশাসনে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যকার বিরোধ আরও চাঙা করেছে।
বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ অন্য সব ক্যডারের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে ৫০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার ও বাকি ৫০ শতাংশ নিয়োগ অন্য ২৫ ক্যাডার থেকে নেওয়ার প্রস্তাব করে। এতে কোনো পক্ষই খুশি হয়নি। ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দ্রুত পদোন্নতি পেলেও অন্য ক্যাডাররা বঞ্চিত হচ্ছেন। উপসচিব পুলে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন তাঁরা।
২৫ ক্যাডারের অভিযোগ, জনপ্রশাসনে একটি ক্যাডারের আধিপত্য ও কর্তৃত্বের কারণে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। একই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাঁরা চাকরিতে ঢুকলেও শীর্ষ পদগুলোর বেশির ভাগ প্রশাসন ক্যাডার দখল করে আছে। অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডারের দাবি, চাকরিতে প্রবেশের সময়ই প্রার্থীরা পছন্দসই ক্যাডার বেছে নিয়েছেন। অতএব, তঁাদের প্রতি অবিচার করার অভিযোগ অমূলক।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে লিখেওছেন। এই লেখালেখির কারণে ২৫ ক্যাডারের ১২ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু একই ধরনের লেখালেখি করলেও প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেনি। ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রশাসন ক্যাডারের লোকজন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকায় এক যাত্রায় দুই ফল হয়েছে। ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিবাদ ও ক্যাডার বৈষম্য বিলোপের দাবিতে রোববার ২৫ ক্যাডার সারা দেশের ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে, যাতে জনগণ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি ফেসবুকে লেখালেখির মতো তুচ্ছ কারণে ২৫ ক্যাডারের ১২ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ধরনের কাজ প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বৈষম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ২৫ ক্যাডারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
একত্র হওয়া ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কলমবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণার পাল্টা হিসেবে এর আগে প্রশাসন ক্যাডারও কিছু কর্মসূচি পালন করে। তবে সেটি কর্মবিরতি পর্যন্ত গড়ায়নি।
সরকারি কর্মকর্তাদের দুই অংশ মুখোমুখি অবস্থান সরকার কিংবা প্রশাসন কারও জন্যই স্বস্তিদায়ক নয়। অভিযোগ আছে, সরকারের কোনো কোনো মহল এই বিরোধ জিইয়ে রেখে প্রশাসন ক্যাডারকে কিছু চাপে রাখতে চায়। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেবল প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয় না, জনগণও সেবা থেকে বঞ্চিত হন। ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশ সরকারের সেবা খাতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
আমরা মনে করি, সরকারের উচিত অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি তারা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চায়, তা–ও করতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আস্থায় নিয়ে। এ বিষয়ে ঔপনিবেশিক আমলের মতো ভাগ করো ও শাসন করো নীতি পরিহার করতে হবে। সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। এখানে কেউ বড়, কেউ ছোট এই ধারণা পুরোপুরি পরিহার করতে হবে।
আরেকটি কথা, নীতিমালা বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও ২৫ ক্যাডারের ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত প্রত্যাহার করে আলোচনার দরজা খোলা যেতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ড র র কর মকর ত কর মকর ত দ র ২৫ ক য ড র র কর মকর ত র ব যবস থ সরক র র স ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ
জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।
গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি।
উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।