জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার ইউক্রেনের বিরোধী নেতাদের
Published: 7th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা গতকাল বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের বিরোধীদলীয় নেতারা। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হোয়াইট হাউসের কথিত ষড়যন্ত্রে তাঁদের যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা।
ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু যুদ্ধচলাকালে ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য ট্রাম্প যে দাবি জানিয়েছেন, তার বিরোধিতা করেছেন তিনি।
২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেলেনস্কির কাছে পরাজিত হওয়া পোরোশেঙ্কো আরও বলেছেন, ইউক্রেনে জারি করা সামরিক আইনের মেয়াদ শেষ হলেই শুধু নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।
এদিকে ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ুলিয়া টিমোশেঙ্কো বলেছেন, তিনিও যুদ্ধচলাকালে নির্বাচন দেওয়ার বিপক্ষে। তিনি আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শান্তি স্থাপনে যেসব মিত্রদেশ সহযোগিতা করতে পারে, তাদের সবার সঙ্গে তাঁর প্রতিনিধিদলের কথা হয়েছে।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলেনস্কিকে উৎখাত করতে হোয়াইট হাউসের চেষ্টার অংশ হিসেবে গোপনে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রতিনিধিদলের চার জ্যেষ্ঠ সদস্য আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। তাঁরা মনে করেন, ইউক্রেনে নির্বাচন হলে জেলেনস্কি এখন হারবেন।
আরও পড়ুনআলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করে জেলেনস্কি চিঠি পাঠিয়েছেন: ভাষণে জানালেন ট্রাম্প০৫ মার্চ ২০২৫ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী, দেশে সামরিক আইন জারি থাকা অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত থাকবে। যা–ই হোক, রাশিয়ার ছড়ানো অপতথ্যই গত মাসে ট্রাম্পের কণ্ঠেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি জেলেনস্কিকে ‘নির্বাচনবিহীন স্বৈরশাসক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, ইউক্রেনে জেলেনস্কির মাত্র চার শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডসহ ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারাও দাবি করছেন যে ইউক্রেনের নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে নাজেহাল করেছেন ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তাঁদের অভিযোগ, জেলেনস্কি শান্তি চান না।
আরও পড়ুন‘অনুতাপ’ জানিয়ে জেলেনস্কি বললেন, ট্রাম্পের ‘বলিষ্ঠ নেতৃত্বের’ অধীনে কাজ করতে প্রস্তুত আছেন০৪ মার্চ ২০২৫গতকাল ট্রাম্পের মিত্র ও শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এতে জেলেনস্কির বড় ধরনের পরাজয় হবে।’
তবে ব্রিটিশ জরিপ প্রতিষ্ঠান সারভেশনের জরিপ অনুযায়ী, ইউক্রেনে এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছেন জেলেনস্কি। সম্প্রতি ওভাল অফিসে ট্রাম্পের কাছে নাজেহাল হওয়ার পর দেশে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এখন জেলেনস্কির প্রতি ৪৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে। এ ছাড়া পোরোশেঙ্কোর প্রতি ১০ শতাংশ ও টিমোশেঙ্কোর প্রতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ‘নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বের ষড়যন্ত্র’ রুখে দিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন সেনপাড়ায় সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের এই শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন ও মহানগর কমিটির সদস্য রিয়াজ উদ্দিন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত চার মূলনীতি সমুন্নত রাখতে হবে। শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে শ্রমিক, কৃষক, যুব ও নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। বামপন্থীদের সরকার গঠন করতে সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাঁদের নেতৃত্বেই আগামী দিনের ক্ষমতায় লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।
সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল, আজ তারাই রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, ব্যবস্থার পরিবর্তনই সময়ের দাবি। কমিউনিস্টরা সেই ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আহ্বান জানাই, গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। আগামীকাল থেকেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) দেখতে চাই।’
নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু না হলে জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে জনগণের আন্দোলনে রূপ দেবে।’
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসরদের হাতে দেশের সম্পদ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখনো অনিশ্চিত যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না। কারণ, বর্তমান সরকার এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। জনগণ আজ অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্য ও দুর্নীতির শিকার। একদিকে জনগণের ঘামঝরানো টাকায় দেশ চলছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের সম্পদ লুট করছে। সমুদ্রবন্দর, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।