চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দলছুট হয়ে একটি বন্য হাতি কাদায় আটকে পড়ে। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় বন বিভাগের লোকজন টানা ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় হাতিটি উদ্ধার করেন। দুই দিন ধরে ওই হাতিকে সারিয়ে তুলতে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন চিকিৎসকেরা। উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত বুধবার সন্ধ্যা সাতটার সময় চুনতি অভয়ারণ্যের আওতাভুক্ত নাপোড়া এলাকায় পাহাড়ের ঢালে কাদামাটিতে আটকে যায় একটি হাতি। দীর্ঘ সময় হাতিটি আটকে থাকলেও ওই পথে লোকজনের আনাগোনা কম থাকায় বিষয়টি তাড়াতাড়ি কারও নজরে পড়েনি। পরে স্থানীয় লোকজন হাতিটি দেখতে পেয়ে বন বিভাগে খবর দিলে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে বন বিভাগ। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয়দের ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতিটি উদ্ধার করা হয়।

বন বিভাগ জানায়, পানির পাম্প দিয়ে পানি ছিটিয়ে কাদা নরম করে হাতিটি তোলা হলেও দীর্ঘ সময় কাদামাটিতে আটকে থাকায় হাতিটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং দাঁড়াতে পারছিল না। তাই তাৎক্ষণিকভাবে হাতিটিকে স্যালাইনযুক্ত পানি খাওয়ানো হলেও চলাফেরার শক্তি পুরোপুরি ফিরে পায়নি হাতিটি। উদ্ধার হওয়া হাতিটির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর এবং এটি একটি মাদি হাতি। এটি পুষ্টিহীনতায় ভোগায় কাদায় আটকে গিয়ে উঠতে পারেনি এবং কাদায় আটকে আরও দুর্বল হয়ে যায়।

জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে হাতিটিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন চকরিয়া সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাত জুলকার নাঈমের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল। আজ শনিবার সারা দিন চিকিৎসার পাশাপাশি হাতিটির স্বাস্থ্যগত দিক নজর দেওয়া হয়েছে। তবে আগে থেকে হাতিটি আগে থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও চলাফেরা করার মতো সুস্থ হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক দ য় আটক বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ