১. যেকোনো বিষয় ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া

আপনিও কি সেই দলে, যাঁরা প্রতিনিয়ত অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের সময় শব্দ, বাক্যগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে নেয়? উল্টো দিকের ব্যক্তিটি আপনার সম্পর্কে কী ভাবল, কী বলল, আপনি যদি প্রতিনিয়ত তা বিশ্লেষণ করতে থাকেন, তাহলে আপনি অযথাই আপনার জীবনে স্ট্রেসকে দাওয়াত দিয়ে আনছেন!

প্রথমত, আপনি নিজে ছাড়া আপনাকে নিয়ে কেউ এত ভাবছে না। কারও বিশেষ কিছু আসে–যায় না। আপনাকে যে সবচেয়ে বেশি ‘জাজ’ করছে, সেই মানুষটা আপনি নিজে হবেন না। দ্বিতীয়ত, কে আপনাকে নিয়ে কী মনে করল, তাতে সত্যিই কিছু আসে–যায়? বরং নিজের ভালো থাকাই আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া জরুরি।

২.

অতীত নিয়ে পড়ে থাকা

কে কবে আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, সেসব আপনি মনের ভেতর পুষে রেখেছেন? মনে রাখবেন, এতে পৃথিবীর কারও কিছু আসছে-যাচ্ছে না। একমাত্র যাঁর ক্ষতি হচ্ছে, সে আর কেউ নয়, আপনি নিজে। আপনি বর্তমানে, ইতিবাচকতায় ফোকাস করতে পারছেন না। আপনি নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। যা ঘটে গেছে, সেসব চলে যেতে দিন। ক্ষমা করুন। সামনে এগোন।

৩. প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চেক করতে থাকা

এসব কাজের জন্য দিনের নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন। ই–মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বার্তা অথবা নোটিফিকেশনকে আপনার সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দিন।

৪. প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তা করা

ছোটখাটো বিষয়, মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবার ফলে আপনি বিচ্যুত হচ্ছেন জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে। আর সেই মূল লক্ষ্য হলো ভালো থাকা। একটা ভালো জীবন যাপন করা।

আরও পড়ুনঅফিসে যে ৬টি বিষয়ে সচেতন হলে আপনার মন খারাপ হবে না১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪৫. চারপাশে কেবল সমস্যা আর সমস্যা?

জীবনের সমস্যার ওপর থেকে আপনার মনোযোগ বা নজর সরছেই না। আপনি সমস্যার সাগরে ভাসছেন? চোখের সামনে সমস্যা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না? তাহলে প্রকৃত সমস্যা আপনি নিজেই। এর ফলে আপনি নিজের ও আশপাশের সব মানুষের ইতিবাচক এনার্জি শুষে নিচ্ছেন। সমাধানের ওপর নজর দিন। ইতিবাচকতার শক্তিকে উদ্‌যাপন করুন।

৭. অতিরিক্ত ঘুম

বেশি ঘুমালেই আপনি বেশি এনার্জি পাবেন, বিষয়টি ঠিক নয়। বরং অতিরিক্ত ঘুম আপনার এনার্জি শুষে নেয়। আপনাকে অলস বানিয়ে ফেলে। ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম যথেষ্ট।

৮. খাদ্যাভ্যাসের দফারফা

দিন শেষে সেই আপ্তবাক্যটাই সত্য, ‘আপনি তা–ই, যা আপনি খান’। আপনি টাটকা, স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে সুস্থ থাকবেন, বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে দিতে পারবেন। আর যদি অতিরিক্ত চিনি, ভাজাপোড়া, অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খান, তাহলে আপনার ভালো না থাকার দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে।

৯. অভিযোগ

কোনো মানুষ পরিণত হয়েছে কি না, তা বোঝার একটা উপায় আছে। কেউ যদি প্রতিনিয়ত জীবনসঙ্গী, বন্ধু, সহকর্মী, সন্তান, মা–বাবা, কর্মক্ষেত্র—সবকিছু নিয়ে অভিযোগ করেন, অভিযোগ করতেই থাকে, তাহলে মূল সমস্যা ওই ব্যক্তি নিজেই। তাকে ‘ইমম্যাচিউর’ ট্যাগ দেওয়াই যায়। বরং যা কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেসবে মন দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

১০. আপনি কি নিজের জীবনের যাত্রী

আপনি নিজের জীবনের ‘ড্রাইভার’ বা চালক হোন। মানে আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আপনিই নিন। তাহলে নিজের অবস্থার জন্য অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কোনো সুযোগই থাকবে না। বরং আপনি যেমন, যে অবস্থায় আছেন, তেমনভাবেই নিজেকে মেনে নিতে, গ্রহণ করতে পারবেন। এর ফলে আপনি নিজেকে ‘ভিকটিম’ বা পরিস্থিতির শিকার বানানো থেকেও বেঁচে যাবেন।

আরও পড়ুনঅফিসে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বুঝুন ১০ লক্ষণ দেখে০২ ডিসেম্বর ২০২৪১১. পরচর্চা

অন্যদের নিয়ে আলাপ, সমালোচনা করার মাধ্যমে আপনি আসলে নিজেকেই অসম্মানিত করলেন। পরোক্ষভাবে নিজের চেয়ে অন্যকে গুরুত্ব দিলেন। নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময়, মনোযোগ, এনার্জি অযথাই খরচ করলেন।

১২. ড্রামা

যেকোনো পরিস্থিতিতে ‘ড্রামা’ বা ‘সিনপাট’ এড়িয়ে কীভাবে সেটি কাটিয়ে উঠে সামনে এগোনো যায়, সেদিকে মন দিন। ‘ড্রামা কিং’ বা ‘ড্রামা কুইন’ হয়ে আপনি আদতে নিজের এনার্জির অপচয় করছেন। আপনি যে নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী নন, সেটিই ফুটে উঠছে। কেননা ড্রামার ভেতর দিয়ে নিজের অজান্তেই আপনি আসলে অন্যের মনোযোগ চাইছেন।

১৩. অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক

এমন মানুষদের আপনার আশপাশে রাখুন, যাঁরা আপনাকে ইতিবাচক এনার্জি দেয়। আপনাকে উদ্‌যাপন করে আর তুলে ধরে। টক্সিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার দায় আপনার না থাকলেও আপনি ওই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে দায়ভার আপনার ওপরেই বর্তায়।

১৪. অন্যকে খুশি করে বাঁচা

আপনি কি নিজেকে নিয়ে খুশি? গর্বিত? আপনি নিজেকে নিজে খুশি করে বেঁচে থাকুন। নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।

সূত্র: ফোর্বস

আরও পড়ুননতুন বছরে নিজের উন্নতি চাইলে এই ৭টি ভুল করবেন না৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বন র র জ বন র আপন সমস য আপন র র ওপর ই আপন আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ