অন্নপূর্ণা-১ জয় করতে চান পর্বতারোহী বাবর
Published: 22nd, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের ছেলে পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী এবার পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত অন্নপূর্ণা-১ আরোহণের লক্ষ্যে নেপাল যাচ্ছেন। ভুমি থেকে ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উচ্চতার নেপালের গন্ডকী প্রদেশে অবস্থিত অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গটি একটি বিপজ্জনক পর্বত। এর আগে ২০২৪ সালে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসে আরোহণ করেন তিনি। বাবর সফলভাবে অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গে আরোহণ করতে পারলে এটি হবে তাঁর তৃতীয় আট হাজার মিটারের পর্বত অভিযান।
শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভিযানের ব্যবস্থাপক এবং ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি ফরহান জামান। বক্তব্য দেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এর উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বাবরের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল। দেশের পর্বতারোহণ মহলের পরিচিত মুখ ও পর্বত অনুরাগীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষে বাবরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বাবর বলেন, অন্নপূর্ণা-১ অভিযান নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। এভারেস্ট-লোৎসে অভিযানের পর থেকেই বিশ্বের ১৪টি আট হাজার মিটার পর্বত আরোহণের ইচ্ছা পোষণ করি। অন্নপূর্ণা-১ অভিযান সে লক্ষ্যের দিকে আরও একটি পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে বাকি পর্বতগুলোর চুড়া ছুঁতে চেষ্টা করব। সামিটের সঙ্গে পর্বতে প্রাণ হারানো আরোহীদের অনুপাত লক্ষ্য করলেই এই পর্বতের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বেশিরভাগ পর্বতারোহীই বিশ্বের উঁচু সব পর্বতে দেশের পতাকা হাতে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমি সব সময় চ্যালেঞ্জিং আর নতুন কিছু করতে পছন্দ করি বলেই অন্নপূর্ণা-১ এর মতো শৃঙ্গ বেছে নিয়েছি।
সোমবার নেপাল অভিযানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন বাবর। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানান সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে তাতোপানির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। চার দিন ট্রেক শেষে পৌঁছাবেন অন্নপূর্ণা নর্থ বেস ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হবে ওখান থেকেই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।