পুলিশ আগের মতোই শ্রমিকদের দমনকারী হিসেবে রয়ে গেছে: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
Published: 25th, March 2025 GMT
বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিক ও ছাত্রনেতাদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, পুলিশ সংস্কারের কথা উঠলেও পুলিশ সেই আগের মতোই শ্রমিক ও জনতাকে দমনকারী হিসেবেই রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ের সামনে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলার পর রাতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যদের পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড.
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রমিকের প্রসঙ্গকে আমল না নেওয়া এবং এসব সংকটে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের সঙ্গে সংলাপ না করে, সমাধান, নিরসনের পথে না গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নামিয়ে ন্যায্য দাবি আদায়কে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টা আমাদের ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলের চেনা চিত্র। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র–জনতার রক্তক্ষয়ী জীবনদানের মাধ্যমে সংঘটিত গণ–অভ্যুত্থানের পর আবারও এই চিত্রের অবতারণা প্রশ্ন তৈরি করছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদৌ গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার ন্যূনতম চেষ্টা করছে কি না! নইলে মন্ত্রণালয়ে শ্রমিক যেতে চাইলে পুরোনো কায়দায় কেন বাধা দেওয়া হবে?’
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সামনে পালন করা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় শ্রমিক আমিনুল, হাফিজুর আসরিনসহ ১৮ শ্রমিক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আরাফ ও নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, দিলীপ রায় শেখ হাসিনার আমলেও গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলন করার কারণে নির্যাতিত হয়েছিলেন।
টিএনজেড অ্যাপারেলস, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, রোর ফ্যাশন, স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস ও ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শত শত শ্রমিক বেতন ও বোনাস আদায়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে মালিক ও সরকারপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে আসছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কিন্তু মালিক ও সরকার, কেউ শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনা করেনি।’
শ্রমিকদের থেকে পাওয়া সূত্রের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ১৬ কোটি টাকার সংস্থান হলেই টিএনজেড গ্রুপের দুটি কারখানার সব বকেয়া, খোরাকি ও বোনাস মেটানো সম্ভব। অথচ মালিকপক্ষ সেই টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা না করে শ্রমিক ও ছাত্রর ওপর পুলিশকে লেলিয়ে দিচ্ছে নিপীড়নের জন্য।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে অবিলম্বে দেশের সব শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দ্রুত সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং হামলার নির্দেশদাতাদের অব্যাহতি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।