১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর ও দুর্নীতির মামলায় জি কে শামীমের সাড়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড
Published: 27th, March 2025 GMT
এবার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীমকে (জি কে শামীম) পাঁচ বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তাঁর মা আয়েশা আক্তার।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই আদালতের বেঞ্চ সহকারী বিল্লাল হোসেন।
জি কে শামীম কারাগারে আছেন। তাঁর মা পলাতক। রায় ঘোষণার আগে জি কে শামীমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শামীমকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর অফিসে অভিযান চালিয়ে তাঁর মায়ের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) কাগজপত্র জব্দ করা হয়। এই টাকার তথ্য শামীম বা তাঁর মায়ের আয়কর নথিতে দেখানো হয়নি। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, আয়েশা আক্তার তাঁর ছেলে শামীমের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ নিজ নামে রেখে তাঁকে (শামীম) অপরাধে সহায়তা করেছেন।
এর আগে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় শামীম ও তাঁর সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। অন্যদিকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই শামীমকে ১০ বছর এবং তাঁর ৭ দেহরক্ষীর প্রত্যেককে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামীম ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর দুদক মামলা করে। মামলায় ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। শামীম ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন শামীম। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে পৃথক মামলা হয়।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, শামীমের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার জব্দ করে র্যাব। এই টাকার কোনো উৎস পায়নি দুদক। সব মিলিয়ে শামীমের ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
অর্থ পাচার মামলার অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে শামীমের। এ ছাড়া ঢাকায় দুটি বাড়িসহ প্রায় ৫২ কাঠা জমির মালিক তিনি। এসবের দাম ৪১ কোটি টাকা। শামীম তাঁর অস্ত্রধারী সাত দেহরক্ষীকে দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টেন্ডারবাজি, বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটে চাঁদাবাজি করে এসব অর্থসম্পদ অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুনজি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায়ের নতুন তারিখ ২৭ মার্চ২৩ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসাদুজ্জামান নূরের অর্জিত সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে তাঁর নামে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যেন তিনি হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য তা জব্দ ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই মামলা করেছে দুদক। তাঁর নামে ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুনআট মাসে ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ ১৭ মে ২০২৫