Samakal:
2025-06-15@22:06:07 GMT

চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকুক

Published: 8th, April 2025 GMT

চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকুক

শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে যেই উদাহরণ তৈয়ার করিয়াছিল, উহা এখন ঝুঁকিতে পড়িয়াছে। সোমবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ সংকটে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়াছে। ১০ মাস ধরিয়া অনেক কেন্দ্রে বিনামূল্যের ঔষধ মিলিতেছে না। এমনকি সন্তান প্রসব-পূর্বকালে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের লক্ষ্যেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছিল। নিম্ন আয়ের অধিকাংশ নাগরিক এই সকল কেন্দ্র হইতে সেবা গ্রহণ করিয়া আসিতেছিল। বর্তমানে যেইভাবে কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হইতেছে, উহাতে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধির স্পষ্ট ঝুঁকি তৈয়ার হইয়াছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে যেইখানে দেখা যাইতেছে দেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার বৃদ্ধি পাইয়াছে, গত ১০ মাসের চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতায় পরিস্থিতির অবনতি হইবে বলিয়াই আমাদিগের আশঙ্কা। বস্তুত ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই সেবামূলক কার্যক্রম চলিয়াছিল স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি-এইচপিএনএসপির মাধ্যমে। গত বৎসরের জুন মাসে ইহার চতুর্থ কর্মসূচির মেয়াদ সমাপ্ত হইলেও পুনরায় উহা সূচিত হয় নাই। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৎসরের জুলাইয়ে নূতন করিয়া ১ লক্ষ কোটি টাকার পঞ্চম এইচপিএনএসপি সূচিত হইবার কথা ছিল। বিবিধ জটিলতায় ১০ মাসেও এই কর্মসূচির অনুমোদন মেলে নাই। এমনকি পরে দেড় বৎসরের জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হইলেও উহাতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলির নিকট হইতে সাড়া পাওয়া যায় নাই। 

এতদিন ধরিয়া এহেন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হইবার পরও উহা পুনরায় চালু না করিবার দায় সরকার এড়াইতে পারে না। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করিয়া থাকে। এই সকল কেন্দ্রের বদৌলতে স্বাস্থ্যসেবার যেই সাফল্য দেখা যাইতেছে, উহা ধরিয়া রাখিতে হইলে সেইখানে ঔষধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকা জরুরি। অস্বীকার করা যাইবে না, এই ক্ষেত্রে বিগত সরকারের ব্যর্থতাও স্পষ্ট। যেইখানে গত বৎসরের জুনেই ঐ প্রকল্পের মেয়াদ সমাপ্ত হইয়াছিল, সেইখানে জুলাই হইতেই নূতন করিয়া প্রকল্পটি চালু করা উচিত ছিল। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিগত সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করিবার পরও বিষয়টি বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা জরুরি ছিল। 
স্মরণে রাখিতে হইবে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি সহস্রে ৭০ জনের নিম্নে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি সহস্রে ১২ জনের নিম্নে আনিতে হইবে। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পূর্বের ন্যায় জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন সেবাসহ ঔষধ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হইলে এই দুইটি লক্ষ্যে উপনীত হওয়া কঠিন হইবে। 
স্বস্তির বিষয় এই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সমকালকে বলিয়াছেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিশ্চিত করিতে আগামী মাসের মধ্যেই সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হইবে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত ছিল দাতা সংস্থার তহবিল না পাইলেও পূর্বেই সরকারের তরফে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া। আমরা প্রত্যাশা করি, যত দ্রুত সম্ভব তৃণমূলের এই সকল সেবা চালু করিতে হইবে। কোনো রোগী যাহাতে ঔষধ ও সেবা না লইয়া শূন্য হস্তে ফিরিয়া যায়– উহা নিশ্চিত করিতেই হইবে। এতদ্ব্যতীত, কেবল অস্থায়ীভাবে নহে বরং শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে না যাওয়া পর্যন্ত এই সকল সেবা অব্যাহত রাখিবার বিষয়ও ভাবিতে হইবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বৎসর র জ সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনের অপচয় রোধ জরুরি

দেশে পানিতে ডুবিয়া শিশুর প্রাণহানির যেই চিত্র শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ঈদুল আজহার ছুটি আরম্ভ হইবার পূর্বের ১০ দিবসেই বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছে, যাহাদের মধ্যে ১৩ জন ছিল শিশু। উপরন্তু, ঈদুল ফিতরের পূর্বাপর ১২ ছুটিতে মোট ৪৯ জন অনুরূপভাবে প্রাণ হারাইয়াছে, যথায় শিশুর সংখ্যা ৪৭। এদিকে ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঈদুল ফিতরে ৫৮ জন ও ঈদুল আজহায় ৬৫ শিশু পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছিল। এই ধারণা অমূলক নহে যে ঈদের ছুটিতে শহরবাসী অনেকে ছুটিয়া যায় গ্রামাঞ্চলে, যেইখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ শিশুদের আকৃষ্ট করিয়া থাকে। তাহারা পানির আশপাশে খেলার বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকে না, জানে না খাল-বিল, ডোবা-পুকুর কতটা বিপজ্জনক পরিণতি ডাকিয়া আনিতে পারে। গ্রামের বিস্তৃত ও অপেক্ষাকৃত নির্জন পরিবেশে শিশুদের তদারকির অভাবও প্রকট। অভিভাবকগণ সাধারণত গৃহকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তেমন নজর থাকে না শিশুর গতিবিধির উপর। এই সকল কিছু মিলাইয়া সংশ্লিষ্ট শিশুর জন্য সৃষ্টি হয় মৃত্যুফাঁদ। দুর্ভাগ্যজনক হইল, এই সকল বিয়োগান্তক ঘটনার কারণে গ্রামের মুক্ত পরিবেশে অনেক পরিবারে ছুটির উচ্ছ্বাস নিমেষে মাটি হইয়া যাইবার পরও জনচেতনতা পরিলক্ষিত হইতেছে না। ফলস্বরূপ, এহেন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়াই চলিয়াছে।

প্রতিটি শিশুর প্রাণই মূল্যবান। একটি জীবন অকালে ঝরিয়া যাইবার অর্থ একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু, একটি ভবিষ্যতের হারাইয়া যাওয়া। এই ক্ষতি শুধু সংশ্লিষ্ট পরিবারের নহে, সম্পূর্ণ সমাজের এবং রাষ্ট্রের। অথচ এহেন মৃত্যু রোধে রাষ্ট্রীয়ভাবেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নহে। প্রতিবেদনমতে, ২০১১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবিয়া শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে চিহ্নিত করিবার পর ২০২২ সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ সহস্র কমিউনিটিবেজড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল এক হইতে পাঁচ বৎসর বয়সী শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও সাঁতার শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি। বাস্তবে কয়েকটি প্রশিক্ষণ ব্যতীত কিছুই হয় নাই। ২০১৫ সালে স্কুল-কলেজে সাঁতার শিখাইবার নির্দেশনা প্রদান করা হইলেও তাহা এখনও উপেক্ষিত। জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা নির্ধারিত থাকিলেও বাস্তবায়নের চিত্র প্রায় শূন্য। এই অবস্থায় দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় ধরা পড়িয়াছে, দেশে প্রতিবৎসর প্রায় ১৪ সহস্র শিশু পানিতে ডুবিয়া মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু প্রাণ হারায়। তাদের ৭৫ শতাংশের বয়স পাঁচ বৎসরের নিচে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে পানিতে ডুবিয়া প্রতিবৎসর আহত হয় অন্তত এক লক্ষ শিশু। ইহাদের মধ্যে প্রায় ১৩ সহস্র পঙ্গু হইয়া যায়। পরিণামে ঐ শিশুরা পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের বোঝা হইয়া দাঁড়ায়।

বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেন, দেশে অপঘাতজনিত শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবিয়া যাওয়া। এমনকি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় যত শিশু মৃত্যুবরণ করে, ততোধিক শিশু মারা যায় পানিতে ডুবিয়া। এতদসত্ত্বেও এই প্রাণহানি লইয়া কোনো তথ্যপ্রবাহ ব্যবস্থা নাই, অতএব সরকারি কোনো তথ্যভান্ডারও গড়িয়া উঠে নাই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তথ্যাদি নথিভুক্তি শুরু হইলে বৎসরান্তে ইহার অন্তত হিসাব মিলিত। বিলম্বে হইলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটুক, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। এই বিষয়ে প্রয়োজনে ইউনিসেফের ন্যায় সংস্থাসমূহকেও কাজে লাগানো যায় বলিয়া আমরা মনে করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জীবনের অপচয় রোধ জরুরি