অবকাঠামো ও যান চলাচল বিশ্লেষণে গুগল ম্যাপসের নতুন তথ্যসেবা
Published: 11th, April 2025 GMT
শহরের অবকাঠামো ও যানবাহন চলাচল বিশ্লেষণে সহায়তা করতে গুগল ম্যাপসে নতুন টুল চালু করছেগুগল। গুগলের দাবি,টুলটির সহায়তায় গুগল ম্যাপসের তথ্য কাজে লাগিয়ে সরকারি সংস্থা, উন্নয়ন প্রকল্পের গবেষক ও পরিকল্পনাকারীরা বর্তমানের তুলনায় কার্যকরভাবে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
গুগল জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো ক্লাউডভিত্তিক ডেটা বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘বিগকোয়েরি’র বিভিন্ন তথ্যগুগল ম্যাপসে যুক্ত করা হয়েছে।ফলে ব্যবহারকারীরা সরাসরি ‘ইমেজারি ইনসাইটস’,‘রোডস ম্যানেজমেন্টইনসাইটস’ও‘প্লেসেস ইনসাইটস’সুবিধা ব্যবহার করে বিস্তারিতভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাবেন। এসবতথ্যশহর উন্নয়ন,অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণওযানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণভূমিকা রাখতে পারে।
আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে থাকা অদ্ভুত এসব ছবির মানে কী১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গুগলের তথ্যমতে,‘ইমেজারি ইনসাইটস’সুবিধার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুতের খুঁটি, সড়ক চিহ্নসহ অন্যান্যঅবকাঠামোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ‘রোডসম্যানেজমেন্ট ইনসাইটস’সুবিধার মাধ্যমে সড়কের অতীত ও বর্তমান যান চলাচলের তথ্য বিশ্লেষণ করা যাবে। এসব তথ্য যানজট নিরসন, সঠিক রাস্তা নির্বাচন বা জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে, ‘প্লেসেস ইনসাইটস’সুবিধার মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার জনপ্রিয় স্থানগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যাবে।
এ ছাড়া ‘বিগকুয়েরি’সুবিধার মাধ্যমে গুগলের ‘আর্থ ইঞ্জিন’প্ল্যাটফর্মের তথ্য ব্যবহারের সুযোগ মিলবে। এর ফলে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে বন ধ্বংস, অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়নের কাজ আরও সহজ হবে। গুগলের মতে, তথ্যভিত্তিক এই উদ্যোগ বিভিন্ন শহর ও প্রতিষ্ঠানের জন্য টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
সূত্র: দ্য ভার্জ
আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে নিজের অবস্থানের তথ্য অন্যকে জানাবেন যেভাবে০২ জানুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।