প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।

আজ বুধবার জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের (জেবিপিএফএল) সভাপতি তারো আসো টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।

চার দিনের সরকারি সফরে প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সময় আজ বেলা দুইটায় টোকিও পৌঁছান। সফরকালে তিনি নিক্কেই ফোরামে অংশগ্রহণের পাশাপাশি জাপানি নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

তারো আসো অধ্যাপক ইউনূসকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর করার জন্য ধন্যবাদ জানান। একটি মসৃণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি প্রধান বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে—সংস্কার, খুনিদের বিচার ও সাধারণ নির্বাচন আয়োজন। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন ও ঋণ পরিশোধে সরকার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকার আমাদের দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। ফলে তরুণসমাজের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়েছে। সেই তরুণেরাই আমাকে এই বিশৃঙ্খলা দূর করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। গত ১০ মাসে জাপান আমাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। আমি জাপানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এক অর্থে, এটি একটি কৃতজ্ঞতা সফর।’

অধ্যাপক ইউনূস তারো আসোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি নিজের চোখে পরিবর্তনগুলো দেখতে পারেন।

সাক্ষাতের সময় তারো আসোর সঙ্গে থাকা কয়েকজন জাপানি সংসদ সদস্য বলেন, ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) স্বাক্ষর বাংলাদেশে বৃহত্তর পরিসরে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বাংলাদেশ আগামী আগস্টের মধ্যে আলোচনার কাজ শেষ করে সেপ্টেম্বর মাসে ইপিএ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রত্যাশা করছে। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে জাপান হবে বাংলাদেশের ইপিএ স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ।

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জাপানি সংসদ সদস্যদের অবহিত করেন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে তাঁদের সহায়তা কামনা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট অন্যান্য শরণার্থী সংকটের থেকে ভিন্ন। কারণ, তারা অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য অনুনয় করছে না; বরং নিজ দেশে ফেরার দাবি করছে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুরে মেলায় জুয়ার আসরে অভিযানে সংঘর্ষ, পুলিশের বন্দুক ছিনতাই

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়িতে গণেশ পাগলের কুম্ভমেলায় পুলিশের সঙ্গে জুয়াড়িদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করে ৩০টি গুলি ছিনিয়ে নিয়েছে জুয়াড়িরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কদমবাড়ি গণেশ পাগল সেবাশ্রমের মেলা প্রাঙ্গণে ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে গতকাল রাতে মেহেদি হাসান ও জুবায়ের হাসান নামের দুই কনস্টেবলকে মাদারীপুর পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাদাপোশাকে ওই দুই পুলিশ সদস্য মেলার মাঠে জুয়ার আসরে গেলে জুয়াড়িদের সঙ্গে তাঁদের তর্ক হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে এবং কনস্টেবল মেহেদির সঙ্গে থাকা শটগানের গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ছিনিয়ে নেয় জুয়াড়িরা। ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মেলার আয়োজক কমিটি জানায়, বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গণেশ পাগলের কুম্ভমেলা শুরু হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও কিছু অসাধু চক্র মেলায় জুয়া ও মাদকের আসর বসিয়েছে। তবে এসব প্রতিরোধে প্রশাসনের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ তাদের।

সেবাশ্রম কমিটির সভাপতি মিরণ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা যতবার জেনেছি, পুলিশের সহায়তায় জুয়ার আসর বন্ধ করেছি। তবে এবার তারা কিছুটা দূরে গিয়ে জুয়ার আসর বসিয়েছে।’ প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছি না। প্রশাসনও পারেনি। এখন আমরা কী করব?’গতকাল রাতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হালকা বৃষ্টির কারণে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম। কালীমন্দিরসংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন ও বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। সেখানে শতাধিক মাদকসেবীকে একত্রে বসে গাঁজা সেবন করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় মেলার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

মেলার মাঠে জুয়ার আসর পরিচালনাকারী মাসুদ নামের এক জুয়াড়ি বলেন, ‘জুয়ার খোটের বিষয় সব কমিটির (গণেশ পাগল সেবাশ্রম কমিটি) লোকজন জানেন, আমি কিছু জানি না। আমাকে দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করাত। পুলিশের সঙ্গে জুয়াড়িদের মারামারির পরে সবগুলো আসরই এখন বন্ধ।’

মেলায় আসা দর্শনার্থী সুজয় কর্মকার বলেন, ‘মেলার দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টিতে ভিজেই এসেছি। এখানে সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ভালো হলেও মেলায় মাদক সেবন বন্ধ করা অতিজরুরি। এতে চারপাশের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। যারা দূরদূরান্ত থেকে এসেছে, তাদের মধ্যেও ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে।’

প্রত্যাহার হওয়া পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী হাসান মুঠোফোনে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে মাদারীপুর পুলিশ লাইনসে আছেন। তাঁর কাছ থেকে ৩০টি গুলি ছিনতাইয়ের বিষয়টা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা দেখছেন।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনার পর দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। মেলায় মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ