কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সপ্তাহে চার দিনের অফিস শুরু করেছে অনেক দেশের কোম্পানি। পরীক্ষামূলকভাবে শুরুর পর পদ্ধতিতে সফলতা পেয়ে অনেকেই সে পথেই হাঁটছে। চার দিনের কর্মসপ্তাহের নিয়মকে স্থায়ী করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কর্মঘণ্টা কমানোর প্রভাব কর্মীদের ও তাঁদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য অত্যন্ত উপকারী হিসেবে পাওয়া গেছে। চার দিনের অফিসে কর্মীরা ভালো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা জানিয়েছেন। এতে অফিস ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বেড়েছে। কাজের সময় আগের চেয়ে কম ক্লান্তিতে ভোগার কথা জানান কর্মীরা।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ২৮টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও সিইওরাও বলেছেন, চার দিনের সপ্তাহ তাঁদের কোম্পানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এগুলোর প্রভাব বাস্তবভিত্তিক ও দীর্ঘস্থায়ী।

চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষার পরে দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ দিনের জায়গায় চার দিন কাজ করলে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তা-ই নয়, ওই সব কোম্পানির রাজস্বও বেড়েছে। এ অবস্থায় দেখে নেওয়া যাক কোন কোন দেশ এখন চার দিনের অফিসের ক্ষেত্রে এগিয়ে। সম্প্রতি এই তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্বের অন্যতম একটি ম্যাগাজিন সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক ম্যাগাজিনটি সিইও, সিএফওসহ উচ্চস্তরের নির্বাহী পেশাদার, ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যক্তিদের জন্য নানা খবর প্রকাশ করে।

জাপান

২০২৫ সালের এপ্রিলে টোকিও সরকারি কর্মচারীদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করেছে। এ ঘোষণা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই দিয়েছিল দেশটি। এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য হলো ক্রমহ্রাসমান প্রজননহার মোকাবিলা করা এবং কারোশির (অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যু) বিরুদ্ধে লড়াই করা। চার দিনের এ কর্মসূচি চালু করার অন্যতম কারণ কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ–ভারসাম্য উন্নত করারও চেষ্টা করা। জাপানে শ্রমবাজারে ৭২ শতাংশ পুরুষের তুলনায় ৫৫ শতাংশ নারী কাজ করেন। কর্মীরা তিন দিনের ছুটিতে পরিবার ও কর্মজীবনের ভারসাম্য আনতে পারবেন বলেই দেশটি চার দিনের অফিস চালু করেছে।

বেলজিয়াম

বেলজিয়াম প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ২০২২ সালে চার দিনের অফিস শুরু করে। শ্রমচুক্তির অংশ হিসেবে চার দিনের কর্মসপ্তাহের আইন প্রণয়ন করে। করোনা–পরবর্তী সময়ে বেলজিয়ামের এ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়। এ উদ্যোগে কর্মীদের সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।

জার্মানি

জার্মানির ৪১টি কোম্পানি ৬ মাসের পাইলট প্রোগ্রাম চালু করে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে। পরে ৪১টি কোম্পানির মধ্য ৭৩ শতাংশই চার দিনের সপ্তাহের মডেলটি চালিয়ে যায়। জার্মানি বিশ্বে দক্ষ কর্মসংস্কৃতির জন্য পরিচিত একটি দেশ। দেশটির কর্মীরা সপ্তাহ ৩৪ ঘণ্টা কাজ করেন।

আইসল্যান্ড

ইউরোপের মধ্য আইসল্যান্ড যুগান্তকারী একটি কাজ করে সরকারি খাতের কর্মীদের কর্মঘণ্টা কমানোর মধ্য দিয়ে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটি পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি কর্মীদের বেতন না কমিয়ে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৪০ থেকে ৩৫–৩৬–এ কমিয়ে আনে। ২০২২ সালের মধ্যে দেশটির ৫১ শতাংশের বেশি কর্মী চার দিনের কর্মসপ্তাহে ঢুকে যান। এর ফলে শারীরিক সুস্থতা ও কর্মদক্ষতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। বেতন না কমিয়ে কর্মঘণ্টা কমানোর এই নীতি আইসল্যান্ডের অর্থনীতিতে কোনো বাধা তৈরি করতে পারেনি, তাই ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ এখনো আইসল্যান্ড।

আরও পড়ুনসপ্তাহে ১ দিন কাজ ছয় দিন ছুটি—বিশ্বের কোন দেশে আছে এমন চাকরি২২ এপ্রিল ২০২৫ডেনমার্ক

ডেনমার্ক আনুষ্ঠানিকভাবে চার দিনের কর্মসপ্তাহ গ্রহণ করেনি। তবে বিশ্বের অন্যতম সংক্ষিপ্ততম কর্মসপ্তাহে দেশগুলোর মধ্যে একটি ডেনমার্ক। ডেনিশ ছুটির আইন (২০২০) অনুযায়ী কর্মীরা বছরে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত বেতনভুক্ত ছুটি পান। এতে কর্মজীবনের ভারসাম্যের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরদার করে।

অস্ট্রেলিয়া

২০২২ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার ২৬টি কোম্পানি চার দিনের কর্মসপ্তাহের পাইলট প্রোগ্রাম চালু করে। এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ব্যাপারটি। এ উদ্যোগ দেশটি নিয়েছে প্রচলিত কর্মকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ হিসেবে।

স্পেন

স্পেন ভ্যালেন্সিয়ায় ২০২৩ সালে সপ্তাহে তিন দিন ছুটির পাইলট প্রোগ্রাম চালু করে। সরকারি ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শনি ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে প্রতি সোমবার ওই এলাকার কর্মীরা ছুটি পান। এ ছাড়া স্প্যানিশ সরকার দেশটির বিভিন্ন কোম্পানিকে এই মডেলে রূপান্তরিত হতে উৎসাহিত করে আসছে। এ জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প তিন বছরের জন্য ট্রায়াল হিসেবে চালু করেছে। যদিও দেশব্যাপী চার দিনের সপ্তাহ শুরু এখনো অনিশ্চিত, তবে কিছু স্প্যানিশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই চার দিনের কর্মসপ্তাহ গ্রহণ করেছে।

বিশ্বের অনেক দেশে চার দিনের অফিস চলছে। এবার সেই পথে সৌদি আরব.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র দ ন র অফ স ভ রস ম য কর ম দ র র জন য র অন য ক জ কর কর ম র সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত না হলে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির

জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর

দাবিগুলো হলো— আসন্ন জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত করতে হবে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে; সব সংগঠনকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জবির প্রধান সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যখন জকসুর দাবিতে অনশন করছিলাম, তখন প্রশাসন ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি মহল নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে।”

তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওই মাসে নির্বাচন অসম্ভব। তাই ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা জানতে চাই, নির্বাচন পেছানোর মধ্য দিয়ে জকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কিনা। পুরান ঢাকাকে অস্থিতিশীল করে একটি মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ভোট হবে জকসু নির্বাচন—তা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ