ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলার ঘটনার পর থানার ওসিকে প্রত্যাহার
Published: 31st, May 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনার পর নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফর আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শনিবার পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাঁকে নগরকান্দা থানা থেকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নগরকান্দা থানার ওসি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সফর আলী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো.
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভুবকদিয়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। একটি উত্ত্যক্তের ঘটনায় গতকাল থানায় অভিযোগ দেন বৈশাখী। অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে ভুবকদিয়া এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শাহ্ মো. আরাফাত বলেন, তাঁরা ভুবকদিয়ার ঘটনা শোনার পর ফরিদপুর থেকে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে হাজির হন। তাঁরা সেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ছিলেন। তাঁদের ওপর হামলা করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের কেউ আসেনি। যাঁরা চব্বিশে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়?—প্রশ্ন তোলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে শাহ আরাফাত বলেন, ‘আপনারা এসি গাড়িতে পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে ঘোরেন। আমরা যাঁরা জেলা পর্যায়ে আছি আমাদের নিরাপত্তা আপনারা নিশ্চিত না করে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন।’
এদিকে হামলার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করেছেন বৈশাখী ইসলাম। ফেসবুকের এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন মারছে আমাকে। একজন মেয়ে বলে ইচ্ছেমতো চুল ধরে লাথি মেরেছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা।
হামলার প্রতিবাদ, জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীর ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের জনগণ সন্ত্রাসের রাজনীতির পরিসমাপ্তি দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার মাধ্যমে সারা দেশে সন্ত্রাস এবং ত্রাসের রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসে। হামলা এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে পিছিয়ে নেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো। ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে তারা নিজেদের পুরোনো সন্ত্রাসী চরিত্রকেই সামনে নিয়ে আসছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক, বিপ্লবী ছাত্র যুব-আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিক প্রিয়া, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র নগরক ন দ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ভুয়া র্যাবকে ধাওয়া দিল আসল র্যাব, পথে দুই পক্ষকেই পেটাল জনতা
জোরে হর্ন দিতে দিতে দ্রুতগতিতে ছুটছিল একটি মাইক্রোবাস। সেটির কিছুটা পেছনে ছুটছিল আরেকটি মাইক্রোবাস। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় মহাসড়কে গাছ ফেলে প্রথম মাইক্রোবাসটিকে থামান স্থানীয় লোকজন। গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব বলে পরিচয় দেন। তবে তাঁদের কারও গায়ে র্যাবের পোশাক ছিল না। সন্দেহ হয় স্থানীয় লোকজনের। ওই ব্যক্তিরা পালাতে চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে মারধর শুরু করেন স্থানীয় লোকজন।
এমন সময়ে সেখানে পৌঁছে যায় দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি। এতে ছিলেন র্যাবের প্রকৃত সদস্যরাই। যদিও কয়েকজনের গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় লোকজনের রোষের মুখে পড়ে তাঁরাও পিটুনির শিকার হন। একপর্যায়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করে এই দুই পক্ষকেই উদ্ধার করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে; গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জনতার হাত থেকে র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নিয়ে আসা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের নিয়ে ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার উদ্দেশে যান।
মারধরের শিকার ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশপাড়া গ্রামের স্বপন খান (৪৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের মিন্টু গাজী (৪৫), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কুনসিবাড়ি গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর এলাকার মো. জামিল (৩২) এবং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের দিদার (২৯)। তাঁদের থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে র্যাব-১০–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা দুজন সোনা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতি করেছিলেন।
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম বলেন, র্যাব-১০–এর হেডকোয়ার্টার থেকে একটি টিম ডাকাত দলকে ধাওয়া করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে উভয় পক্ষের ওপর চড়াও হন। কিছু র্যাবের সদস্যরা সাদাপোশাকে থাকায় উত্তেজিত লোকজন তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত র্যাব বলে চিনতে ভুল করেন।
র্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভুয়া র্যাবের দলকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।’ নিজেরাও মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন ভুয়া র্যাব পরিচয়কারীদের মারপিট করছিলেন, তখন তাঁদের যাতে মেরে না ফেলেন, এই আশঙ্কায় আমরা জনগণের পিটুনি থেকে তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম পর্যায়ে জনগণ আমাদেরও ভুয়া র্যাব মনে করেছিলেন। এ কারণে আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেছিল, তবে তা আমলযোগ্য নয়।’