ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনার পর নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফর আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শনিবার পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাঁকে নগরকান্দা থানা থেকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নগরকান্দা থানার ওসি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সফর আলী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো.

শামসুল আজম বলেন, প্রশাসনিক কারণে নগরকান্দা থানার ওসি সফর আলীকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আজ শনিবার ফরিদপুরের পুলিশ সুপার এ আদেশ দেন।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভুবকদিয়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। একটি উত্ত্যক্তের ঘটনায় গতকাল থানায় অভিযোগ দেন বৈশাখী। অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে ভুবকদিয়া এলাকায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শাহ্ মো. আরাফাত বলেন, তাঁরা ভুবকদিয়ার ঘটনা শোনার পর ফরিদপুর থেকে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে হাজির হন। তাঁরা সেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ছিলেন। তাঁদের ওপর হামলা করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের কেউ আসেনি। যাঁরা চব্বিশে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়?—প্রশ্ন তোলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে শাহ আরাফাত বলেন, ‘আপনারা এসি গাড়িতে পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে ঘোরেন। আমরা যাঁরা জেলা পর্যায়ে আছি আমাদের নিরাপত্তা আপনারা নিশ্চিত না করে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন।’

এদিকে হামলার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করেছেন বৈশাখী ইসলাম। ফেসবুকের এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন মারছে আমাকে। একজন মেয়ে বলে ইচ্ছেমতো চুল ধরে লাথি মেরেছে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা।

হামলার প্রতিবাদ, জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীর ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের জনগণ সন্ত্রাসের রাজনীতির পরিসমাপ্তি দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার মাধ্যমে সারা দেশে সন্ত্রাস এবং ত্রাসের রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসে। হামলা এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে পিছিয়ে নেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো। ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে তারা নিজেদের পুরোনো সন্ত্রাসী চরিত্রকেই সামনে নিয়ে আসছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক, বিপ্লবী ছাত্র যুব-আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিক প্রিয়া, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র নগরক ন দ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী সংগঠককে মারধর, দোষীদের আটক করতে এসে পুলিশ হামলার শিকার

ফরিদপুরের নগরকান্দায় বোনকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠকের হামলা ও মারধর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ভবুকদিয়া এলাকায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার বৈশাখী ইসলাম ওরফে বর্ষা (১৮) সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ভবুকদিয়া এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএনপির নেতা–কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা করেছেন। তবে উপজেলা বিএনপির নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে খবর পেয়ে মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আসে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা ছিলেন। তখন পুলিশ ও ছাত্রদের ওপর হামলা করা হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টা থেকে ১০ পর্যন্ত ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া এলাকায় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ভবুকদিয়া এলাকায় নিজ বাড়ির পাশের রাস্তার বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বৈশাখী তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ বক্তব্যে হামলা ও মারধরের অভিযোগ করেন। ওই লাইভ বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি বৈশাখী ইসলাম। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত। আমি একটা ইভ টিজিংয়ের কেস নিয়ে প্রতিবাদ করায় বিএনপির লোকজন আমাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করছে। আমাদের কি জুলাই আন্দোলন করা ভুল ছিল, যার কারণে রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন আমাকে মারছে? তারা আমাকে, একজন মেয়ে বলে, ইচ্ছেমতো চুল ধরে লাথি মেরেছে। আমার আব্বাকে খুঁজছে মারার জন্য। আমি খুব বাজে অবস্থায় আছি। আমি কী করব, বুঝতে পারছি না।’

বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার খবর পেয়ে নগরকান্দা থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। একই সময় ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও সেখানে যান। পুলিশ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক  ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে আসে।

হামলায় আহত নগরকান্দা থানা–পুলিশের গাড়ি চালক আবদুল হান্নান শরীফ (৫৬) বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমরা আসামি ধরে আনতে গেলে স্থানীয় দেড় শতাধিক লোক আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে। হামলাকারীরা আমার হাত ও মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়; গাড়ির পর্দা ছিড়ে ফেলে। তবে তাঁরা আসামি ছিনিয়ে নিতে পারেনি। আমরা তাদের ধরে থানায় এনেছি।’

ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টা থেকে ১০ পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া এলাকা অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।  

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ছয়জনকে আটক করেছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ভবুকদিয়া গ্রামের জালাল ব্যাপারীর ছেলে শরীফ ব্যাপারী (২১)। তাঁর বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফর আলী বলেন, হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নগরকান্দার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল বলেন, এ ঘটনায় নগরকান্দা থানায় তিনটি মামলা করা হবে। একটি বৈশাখীর ওপর হামলার ঘটনায় নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইনে, একটি হবে বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এবং অপর মামলাটি হবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায়।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ও প্রতিকার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিএনপির এক প্রার্থী ও তাঁর ছেলে প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ষাকে (বৈশাখী ইসলাম) চুল ধরে টেনে মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা আমরাই প্রতিরোধ করেছি। আমাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

তবে ওই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, ওই সমন্বয়ক (বৈশাখী) এবং যে ছেলের সঙ্গে এ ঘটনা, তাঁদের দুই পরিবারই আওয়ামী লীগ ঘরানার। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী নেত্রীকে মারধরের আগে কী ঘটেছিল
  • বৈষম্যবিরোধী নারী সংগঠককে রাস্তায় ফেলে মারধর, ওসি প্রত্যাহার
  • ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলা, এক দিন পর ওসি প্রত্যাহার
  • বৈষম্যবিরোধী সংগঠককে মারধর: নগরকান্দা থানায় তিনটি মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ৬
  • বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বৈষম্যবিরোধী নেত্রীকে মারধর, গ্রেপ্তার ৬
  • ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী সংগঠককে মারধর, দোষীদের আটক করতে এসে পুলিশ হামলার শিকার
  • ফরিদপুরে রাস্তায় ফেলে কলেজছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ