রাশিয়ায় সেতু ধসে পড়ে লাইনচ্যুত ট্রেন, নিহত ৭
Published: 1st, June 2025 GMT
ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি রাশিয়ার ব্রিয়ান্স্ক অঞ্চলে একটি মহাসড়কের সেতু ভেঙে রেললাইনের ওপর পড়ে গেলে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার (১ জুন) রাশিয়ার জরুরি পরিষেবা সংস্থার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার জরুরি সেবাবিভাগ জানিয়েছে, সেতুটি ধসে পড়ার সময় নিচ দিয়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের ওপর কয়েকটি ভারী ট্রাক পড়ে যায়। এতে ট্রেনের লোকোমোটিভ ও একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৩১ মে) রাতে ব্রিয়ান্স্কের ভিগোনিচস্কি জেলায়, যখন ট্রেনটি ক্লিমোভো শহর থেকে মস্কোর দিকে যাচ্ছিল।
আরো পড়ুন:
ময়মনসিংহে ধসে পড়েছে গহুর মোল্লার ব্রিজ, যোগাযোগ বন্ধ
আবরার ফাহাদের নামে সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন
জরুরি সেবাবিভাগ আরো জানিয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো রেলওয়ে টেলিগ্রামে দাবি করেছে, পরিবহন কার্যক্রমে ‘অবৈধ হস্তক্ষেপের’ কারণে সেতুটি ধসে পড়েছে।
ব্রিয়ানস্কের গভর্নর আলেকজান্ডার বোগোমাজ টেলিগ্রামে বলেছেন, “দুঃখজনকভাবে, সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত সকল যাত্রীকে ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
মস্কোর আন্তঃআঞ্চলিক পরিবহন প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। উদ্ধার কাজ চালাতে অতিরিক্ত জরুরি কর্মী, যন্ত্রপাতি ও রাতে কাজ চালানোর জন্য আলো সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে বলে জানায় রুশ বার্তা সংস্থা তাস।
ঢাকা/ফিরোজ-
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিভাগীয় মামলায় ছাড় পেয়েছেন ৪১ শতাংশ
কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তদন্ত করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গত এক দশকে প্রমাণের ভিত্তিতে বিভাগীয় মামলা হয়েছে ২৩৯টি। নিষ্পত্তি ২২৩ মামলা থেকে ৪০ দশমিক ৮০ শতাংশ অভিযুক্ত অব্যাহতি পেয়েছেন। অপরাধ বিবেচনায় গুরুদণ্ড হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৬২ শতাংশের। আর তিরস্কার, সতর্ক, বেতন কর্তন, ইনক্রিমেন্ট স্থগিতের মতো লঘু শাস্তি পেয়েছেন ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
কর্মকর্তারা বলছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ করার অঙ্গীকারে ডিএনসিতে চাকরি করতে এসে অনেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। মাদক দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফাঁসানো, কারবারিকে সহযোগিতা, জব্দ মাদক বাজারে ছেড়ে কড়ি কামানো, আবার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত আসামি বাণিজ্যে। শর্ষের মধ্যেই ভূত। এ জন্য অপরাধ করেও কর্মরতরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন।
ডিএনসি সূত্র জানায়, অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে এক দশকে ২৩৯টি বিভাগীয় মামলা করে ডিএনসি। এর মধ্যে
নিষ্পত্তি হয়েছে ২২৩ মামলা। ৯১ জন অব্যাহতি পেয়েছেন। গুরুদণ্ড হয়েছে মাত্র ১৭ জনের। তিরস্কারের মতো লঘুদণ্ড পেয়েছেন ১১৫ জন। বিচারাধীন মামলা ১৬টি।
এ ব্যাপারে ডিএনসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোস্তাক আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘বিভাগীয় মামলা তদন্তে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র যাচাই ও সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনা করা হয়। অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেই কেবল শাস্তি দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিভাগীয় মামলাগুলো নিষ্পত্তি করছে ডিএনসি।’
চট্টগ্রাম থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে ইয়াবার বড় চালান ঠাকুরগাঁওয়ে আসবে– সূত্রের তথ্য ডিএনসি ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের এসআই আজহারুল ইসলাম জানান পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর গ্রামের চব্বিশ টিউবওয়েল এলাকার মহাসড়কে আভিযানিক দল নিয়ে অবস্থান নেন এসআই আজহারুল। ১০টার দিকে যুক্ত হন ফরহাদ।
ডিএনসির তদন্তে বেরিয়ে আসে, ফরহাদ ইয়াবা কারবারিদের অভিযানের তথ্য জানিয়ে পথ থেকে চালানটি সরিয়ে ফেলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইয়াবা নিয়ে দুই বাহকের বাস থেকে নেমে যাওয়ার তথ্য পেয়ে হতাশ হন আজহারুল। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে বিভাগীয় তদন্ত হয়। তারা মাদক কারবারির সঙ্গে ফরহাদের কথোপকথনের অডিও থেকে বিস্তারিত তথ্য পান।
অডিও শুনেছেন– ডিএনসির এমন দুই কর্মকর্তা সমকালকে জানান, ফরহাদকে বলতে শোনা যায়, অভিযান চলছে। তিনি বাস থেকে ইয়াবা নিয়ে নেমে যেতে বলেন। তখন কারবারি তাঁকে বলেন, টাকা দিই, মাল কেন ধরবেন? জবাবে ফরহাদ বলেন, অভিযানে অনেকে আছেন, রক্ষা করতে পারবেন না তিনি।
শুধু এ ঘটনা নয়, ফরহাদ ঠাকুরগাঁওয়ে চার বছরের কর্মজীবনে অনেক মাদক কারবারিকে অভিযানের হাত থেকে সুরক্ষা দিয়েছেন। কয়েকটি ঘটনা জানাজানির পর সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মৌখিকভাবে তাঁকে সতর্ক করলেও ওই পথ ছাড়েননি। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় সম্প্রতি ফরহাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পরও ঠাকুরগাঁওয়ে বহাল আছেন তিনি।
এসআই আজহারুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বাসে ইয়াবা নিয়ে দু’জন কোথায় বসেছিলেন, চট্টগ্রাম থেকে বাস কখন ছেড়ে আসে– সব তথ্যই নিশ্চিত করেছিল আমার সোর্স। কিন্তু আমাদের মধ্যে থেকেই কারবারিকে অভিযানের তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিত দিয়েছিলাম।’
২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরে এক কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে গাঁজা জব্দ করে ডিএনসির একটি দল। জব্দ গাঁজার কিছু অংশ বিক্রি করেন আভিযানিক দলের সদস্যরা। তদন্ত শেষে বিভাগীয় মামলা হয়। পরে রায়ে পরিদর্শক বেলাল হোসেন ও এসআই শেখ আবুল কাশেমের দুই বছরের জন্য ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়। আবুল কাশেম ডিএনসির যশোর এবং বেলাল মাগুরা জেলায় কর্মরত। এ ছাড়া সিপাহি মামুনুর রহমানের এক বছরের ইনক্রিমেন্ট স্থগিত ও এসআই হাফিজুর রহমানকে শাস্তি হিসেবে বরগুনায় বদলি করা হয়।
২০২২ সালের ১৪ জুলাই গাজীপুর টঙ্গীর বাসা থেকে আশরাফুল আলম পল্টনকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ডিএনসির মতিঝিল সার্কেলের আভিযানিক দল। পুলিশের তৎপরতায় ছয় দিন পর ঘুষের টাকা তারা আশরাফুলের পরিবারকে ফেরত দিতে বাধ্য হন। সে অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার ও মতিঝিল সার্কেলের তৎকালীন পরিদর্শক মিজানুর রহমান। এ ঘটনায় তাদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং মিজানুর ‘প্রাইজপোস্টিং’ পেয়েছেন শ্রীমঙ্গল ওয়্যারহাউসে।
২০২৩ সালের ৬ জুন লালবাগ সার্কেলের তৎকালীন পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে ভাটারার একটি বাসায় অভিযানের নামে টাকা লুটের অভিযোগ ওঠে। মোফাজ্জলসহ চারজনকে আটক করে ডিবি। পরে মোফাজ্জলকে ছেড়ে দিয়ে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ ছিল, ডিবির তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর রশিদের শ্বশুরপক্ষের আত্মীয় হওয়ায় মোফাজ্জল ছাড়া পান। পরে বিভাগীয় মামলায়ও অব্যাহতি পান মোফাজ্জল। ২০২২ সালেও মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগে মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ডিএনসি।