Prothomalo:
2025-09-18@03:32:23 GMT

গরুর হাটে নগদহীন লেনদেন

Published: 2nd, June 2025 GMT

জমে উঠেছে ঈদের কোরবানির হাট। দেশের নানা প্রান্তে বিরাট বিরাট হাট জমে উঠেছে। ঈদের হাট মানেই ক্রেতা-বিক্রেতার দামদর। আগে ক্রেতারা নগদ টাকা নিয়ে ঘুরতেন বা অনেক ঝক্কিঝামেলার মধ্য দিয়ে কৃষক ও ব্যাপারীদের হাতে অর্থ তুলে দিতেন। কয়েক বছর ধরেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ও বিভিন্ন ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং সেবা, হাটে থাকা বুথ নগদহীন বা ক্যাশলেস লেনদেনের সুযোগ করে দিচ্ছে। এবারও বিভিন্ন হাটবাজারে এমন সুযোগ রয়েছে।

 

ক্যাশলেস লেনদেনে আগ্রহ বাড়ছে

দেশের বড় বড় কোরবানির হাটে ক্যাশলেস লেনদেন কয়েক বছর ধরেই চালু আছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও অনেক হাটে প্রথমবারের মতো ক্যাশলেস লেনদেনের সুযোগ রাখছেন ইজারাদার ও আয়োজকেরা। ঢাকার লালবাগে রহমতগঞ্জ খেলার মাঠে গরু-ছাগলের হাট আয়োজন করা হয়েছে। হাট আয়োজক কর্তৃপক্ষের সদস্য মো.

আকিল সাঈদ বলেন, ‘আমাদের এলাকার বিশাল হাটে দূরদূরান্ত থেকে পশু আনছেন ব্যাপারীরা। কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আসছেন আমাদের হাটে। এবারই আমাদের হাটে প্রথম আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন চালু করছি। এ ছাড়া ব্যাংকিং সেবা রাখছি আমরা। গ্রাহকেরা বাড়ি থেকে টাকা আনার পরিবর্তে হাট থেকেই যেন নগদহীন লেনদেন করতে পারেন সেই সুযোগ রাখছি আমরা।’

কয়েক বছর ধরেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ও বিভিন্ন ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং সেবা, হাটে থাকা বুথ নগদহীন বা ক্যাশলেস লেনদেনের সুযোগ করে দিচ্ছে।

মতিঝিলের কোরবানির পশুর হাট আয়োজন করা হচ্ছে কমলাপুর–সংলগ্ন বালুর মাঠে। মাঠের ইজাদার মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাটে কয়েক হাজার পশু বিক্রির লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা করছি। আমাদের হাটে নিয়মিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি ঢাকা ব্যাংকের বুথ ও ব্যাংকিং সেবা থাকবে। ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রেতারা ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারবেন। কোরবানির পশুর হাটে বসানো বুথ থেকে ক্রেতারা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি পিওএস মেশিন ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারবেন। নগদ অর্থ তুলে গরুর মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।’

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান বলেন, গত বছর বিভিন্ন হাটে ব্যাংকিং সেবা চালু ছিল। বিভিন্ন ব্যাংক বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করেছে। এবার বিভিন্ন হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। এখন ক্রেতা-বিক্রেতা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারছেন। বিভিন্ন গরুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা লেনদেন সহজে করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বেশ ব্যবহার করছেন। আশা করছি, এবারও ঈদে বিভিন্ন হাটে ক্যাশলেস লেনদেন করবেন ক্রেতারা।’

কেন নগদহীন লেনদেন জনপ্রিয় হচ্ছে

মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃতির কারণে এখন নগদহীন লেনদেনের ব্যবহার গরুর হাটের মধ্যেও চলে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘এখন মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনে আগ্রহী হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় লেনদেন করলে বিভিন্ন অফার অনেককে উৎসাহ দিচ্ছে। আবার কোরবানির ঈদে অর্থ পরিবহনে নিরাপত্তা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক কৃষক, খামারি ও ব্যাপারীদের জন্য লাখ লাখ টাকা হাতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয়। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক প্রতারণা বা ছিনতাইয়ের খবরও পাই। এসব কারণে মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনমুখী হচ্ছে আগের থেকে বেশি।’

সিটি ব্যাংক পিএলসির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব কার্ডস তৌহিদুল আলম বলেন, এখন মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনের দিকে ঝুঁকছে। বিভিন্ন হাটেও ক্যাশলেস লেনদেন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। মোবাইল ফোন, মোবাইল ফোনের অ্যাপ থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্ডের মাধ্যমে কোরবানির পশুর দাম পরিশোধ করছে মানুষ। আমাদের সিটি ব্যাংকের বিভিন্ন কার্ড ব্যবহার করে ৭৫টির বেশি খামার থেকে নগদহীন লেনদেনের মাধ্যমে গবাদিপশু কেনার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। এ ছাড়া বিভিন্ন হাটবাজারের আশপাশে সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথ, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা থেকেও মানুষ বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন করতে পারছে। এ ধরনের লেনদেনে বেশি সময় লাগে না আর সামগ্রিকভাবে নিরাপদ বলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় কমার্শিয়াল সব ব্যাংকই ডিজিটাল লেনদেন জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করছে। আমরা এবার ঢাকার অদূরে বছিলা গরুর হাটের খামারি ও কৃষকদের সচেতন করতে কাজ করব।’

তৌহিদুল আলম বলেন, ‘হাটে পিওএস মেশিন, কিউআর কোডের মাধ্যমে লেনদেন, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন সবাই। ক্রেতাদের উদ্দেশে অনেক ডিসকাউন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে বলে ক্রেতা পর্যায়ে ক্যাশলেস লেনদেন জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রান্তিক খামারি বা কৃষকদের মধ্যে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেন জনপ্রিয় করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি। এখন প্রান্তিক খামারি বা কৃষকেরাও পার্সোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ নিতে পারছে।’ 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল নদ ন র স য গ ল নদ ন করত আম দ র হ ট ক রব ন র ব যবহ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ