ডিসেম্বরে নির্বাচন কেন দেবেন না, যুক্তি দেখান
Published: 3rd, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সরকারের উদ্দেশে তারা বলেছেন, নির্বাচনই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কার। আমরা সবাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। এই সময়ের মধ্যেই কেন দেবেন না, যুক্তি দেখান। যত ষড়যন্ত্র করেন না কেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতেই হবে। এটাতে কোনো টালবাহানা ও গড়িমসি চলবে না। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় থাকা বিপজ্জনক- এটা আমরা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তারা বুঝতে চায় না। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করার পেছনে পারলে একটি কারণ দেখান বরং ডিসেম্বরই অনেক দেরি। সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যই নির্বাচনকে বিলম্বিত করা।
তিনি বলেন, নির্বাচন সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়, বিচার স্বাধীনভাবে চলবে। যারা আগামীতে সরকারে আসবে কিংবা তারপরও যারা সরকারে আসবে- তারাও এই বিচারকে টেনে নিয়ে যাবে। কাজেই বিচারের সঙ্গে নির্বাচনকে মেলানো ঠিক হবে না। বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। শেখ হাসিনার এত অপরাধের বিচার অল্প সময়ে করা সম্ভব হবে না। তার অনেক অপরাধ।
এ দেশে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশ-বিদেশে বসে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা সৃষ্টির অনেক চেষ্টা হয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বন্ধের একমাত্র উপায় হচ্ছে- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ও সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। সেটি যত দ্রুত হবে, ততই জাতির জন্য মঙ্গল।
নির্বাচনই সবচেয়ে বড় সংস্কার: বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, নির্বাচন দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না, সবকিছু শেষও হবে না। কিন্তু নির্বাচনই জনগণকে ক্ষমতায়িত করার একমাত্র পথ। নির্বাচনই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কার। আর বাকি সব সংস্কার, সেটা সময়ের ব্যাপার। প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা আমরা বলিনি, আমাদের মুখ থেকে এটা আসেনি। আপনিই ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, আপনার সেই ওয়াদা আপনি রাখেন। ১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয়নি। আপনি মানুষের ক্ষমতাটা মানুষের হাতে দিয়ে দেন, মানুষ আপনাকে সব সময় স্মরণ রাখবে। আমরাও আপনাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখব।’
সকল রাজনৈতিক দলকে সতর্ক থাকতে হবে: নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রতিবেশী দেশের হুমকির কারণে হয়তোবা আমাদের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য রয়েছে। নাহলে আমরা এতদিন পরস্পরের বিরুদ্ধে লেগে যেতাম। প্রতিবেশী দেশ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে এ দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইছে, পুশইন করছে। এটা খুবই এলার্মিং। সবদিক বিবেচনায় এনে সকল রাজনৈতিক দলকে সতর্ক থাকতে হবে।
ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন হতে পারে: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু একটিমাত্র দলকে লালন-পালন করতে গিয়ে সরকার নয়-দশ মাস পার করে ফেলেছে। এখনও নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে। ওই দলটি এরই মধ্যে নাবালক হয়েছে, কিন্তু ফিডার ছাড়তে পারেনি। সরকার তাদের মুখে ফিডার ঝুলিয়েই যাচ্ছে।
দেশের ৯০ শতাংশ দল ও মানুষ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়: বাংলাদেশ এলডিপি’র সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “দেশের ৯০ শতাংশ দল ও মানুষ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। ৫ আগস্টের পর গঠিত ‘ন্যাশনাল চিলড্রেনস পার্টি’ (এনসিপিকে ইঙ্গিত করে) একটিমাত্র দল, যাদের কেয়ামত পর্যন্ত নির্বাচন দিলেও অসুবিধা নেই। সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে।”
নির্বাচন নিয়ে জনমনে অসন্তোষ ও সংশয় দেখা দিয়েছে: খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন- এই লম্বা সময়ের কথা বলায় নির্বাচন নিয়ে জনমনে অসন্তোষ ও সংশয় দেখা দিয়েছে। অতি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে এই সংশয় দূর হতে পারে। তার আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে হবে। অতি দ্রুত দুই-একটা বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতিও জাতি দেখতে চায়।
.
গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র ব চনই র জন ত ক আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৩ টি দল বাদে বাকি সবাই ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চেয়েছে : নুরুল হক
তিনটি রাজনৈতিক দল বাদ বাকি সব দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, নিক্কেই এশিয়া ফোরামে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে একটি বক্তব্য এসেছে, যে একটি মাত্র দল ডিসেম্বর এর আগে নির্বাচন চেয়েছে, যে বক্তব্যটি সঠিক নয়।
আজ সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নুরুল হক।
নির্বাচনের বিষয়ে নুরুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় বলা আছে আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা। তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ আমরা বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছি। এটাও প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত রোডম্যাপ এর মধ্যে আছে। যেহেতু সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যেই তাদের প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, এখন চাইলে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন হতে পারে।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকে তিনটি রাজনৈতিক দল বাদ বাকি সব দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে।
ওই তিনটি রাজনৈতিক দলের নাম জানতে চাইলে নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এটা তিনি বলবেন না। নামগুলো সাংবাদিকদের বুঝে নিতে বলেন তিনি।
সংস্কারের বিষয়ে নুরুল হক বলেন, যে সংস্কারগুলোর বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে, সে সংস্কার গুলো বাস্তবায়ন হোক। সব সংস্কার চাইলে এখন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ কিছু সংস্কার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে, কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সংসদ লাগবে। তিনি বলেন, ‘সে জন্য আমরা বলেছি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যতটুকু সংস্কার করা যায় সেদিকে হাঁটা উত্তম।’
নুরুল হক নুর বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্যকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা আপত্তি তৈরি হয়েছে। ফলে উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠনটাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের এই বৈঠকের জন্য গণঅধিকার পরিষদসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই বৈঠকে অংশ নেন।