পাকিস্তান দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছিল, তার যোগ্য জবাব তারা পেয়েছে: মোদি
Published: 6th, June 2025 GMT
জম্মু–কাশ্মীরের মাটি থেকে এবার সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বললেন, মানবতাবিরোধী পাকিস্তান কাশ্মীরের পর্যটনের ওপর আঘাত হেনে দেশে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সেই অপকর্মের যোগ্য জবাব পেয়েছে।
কাশ্মীর উপত্যকায় চন্দ্রভাগা নদীর ওপর বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতুর উদ্বোধন এবং পরে জম্মুর কাটরা স্টেশন থেকে দুটি ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন চলাচল শুরু করিয়ে শুক্রবার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পর্যটননির্ভর অর্থনীতির ওপর হামলা চালিয়ে পাকিস্তান চেয়েছিল জম্মু–কাশ্মীরসহ সারা ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে। সে কারণে যেমন হিন্দু পর্যটকদের আক্রমণ করেছে, তেমনই মেরে ফেলেছে স্থানীয় সহিস আদিল হুসেনকে। ঘোড়াচালক কিংবা গাইড সবাইকে শেষ করার ষড়যন্ত্র করেছিল পাকিস্তান। চেয়েছিল দেশে দাঙ্গা বাধাতে। কিন্তু জম্মু–কাশ্মীর ও সারা দেশের মানুষ সেই চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে। মোদি বলেন, পেহেলগামের হামলা ছিল মানবতা ও কাশ্মীরিয়তের বিরুদ্ধে।
গত এপ্রিল মাসের ১৯ তারিখে চন্দ্রভাগা নদীর ওপর ‘অঞ্জি সেতু’ উদ্বোধনে কাশ্মীর যাওয়ার কথা ছিল নরেন্দ্র মোদির। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকায় সেই সফর বাতিল করা হয়। তিন দিন পর ২২ এপ্রিল ঘটে যায় পেহেলগাম–কাণ্ড। সশস্ত্র আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন ২৫ জন পর্যটক ও স্থানীয় ঘোড়াচালক আদিল হুসেন। ৬ মে গভীর রাতে শুরু প্রত্যাঘাত। চার দিনের মাথায় ১০ এপ্রিল অপারেশন সিঁদুর স্থগিত রাখা হয়। দুই দেশ যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়। পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুরের পর এই প্রথম মোদির জম্মু–কাশ্মীর সফর।
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় অঞ্জি সেতু উদ্বোধন এবং এরপর কাটরা থেকে নতুন দুই ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনও চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু উদ্বোধন ও নতুন ট্রেন চলাচলের ফলে জম্মু থেকে শ্রীনগর হয়ে বারামুল্লা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ হলো। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী জানান, এখন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী রেলপথে যাওয়া সম্ভব হবে। এতে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে কাশ্মীরের যোগাযোগ আরও বেড়ে যাবে। সড়কপথের ওপর চাপ কমে যাবে। তুষারপাত বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা কমে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক কম সময়ে যাত্রী ও পণ্যের আদান–প্রদান সম্ভব হবে, যা জম্মু–কাশ্মীরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জরুরি।
অপারেশন সিঁদুরের আগে–পরে পাকিস্তানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কাশ্মীরিদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা জানিয়ে মোদি বলেন, কিছুতেই উন্নয়ন বন্ধ হতে দেবেন না। পাকিস্তানের উদ্দেশে তিনি বলেন, এবার থেকে যখনই তারা অপারেশন সিঁদুরের কথা মনে করবে, তখনই তারা তাদের সর্বনাশের ছবিটা দেখতে পাবে। সন্ত্রাসবাদের যে ইমারত তারা গড়ে তুলেছিল, অপারেশন সিঁদুর তা ধূলিসাৎ করেছে।
জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা ও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি পৃথিবীর এই সর্বোচ্চ রেলসেতুর উদ্বোধন করেন। চন্দ্রভাগা নদীর ওপর এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার। তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি রুপি।
জম্মু–কাশ্মীরের জন্য বরাদ্দ মোট ৪৬ হাজার কোটি রুপির উন্নয়ন প্রকল্পের অঙ্গ এই রেলসেতু। চন্দ্রভাগা নদীবক্ষ থেকে ১ হাজার ১৭৭ দশমিক ৮২ ফুট উঁচুতে (৩৫৯ মিটার) এই সেতু তৈরি করা হয়েছে। এমন কারিগরি দক্ষতায় এই সেতু তৈরি, যা রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। নির্মাতাদের দাবি, ১২০ বছর এই সেতু টিকে থাকবে। এর ওপর দিয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে যাত্রীবাহী ট্রেন।
উদ্বোধনের আগে মোদি নতুন সেতু ঘুরে দেখেন। সেতুসহ গোটা এলাকা সাজানো হয়েছিল ভারতের জাতীয় পতাকার রংয়ে। গেরুয়া, সাদা ও সবুজের সমারোহের প্রতীকী বার্তা ছিল এটাই যে জম্মু–কাশ্মীর বরাবরই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল, আছে ও থাকবে। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশ খানিকক্ষণ সেতুর ওপর হাঁটাহাঁটিও করেন। সেখান থেকে জম্মুর কাটরা গিয়ে উদ্বোধন করেন দুটি বন্দে ভারত ট্রেনের। এই ট্রেন ও নতুন সেতুর কারণে কাটরা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় শ্রীনগরে পৌঁছানো যাবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় বিএনপির জনসভা ও এনসিপির পদযাত্রা আজ, নিরাপত্তা জোরদার
সাভার উপজেলার আশুলিয়ার কাছাকাছি স্থানে বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পৃথক কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ বুধবার দুপুরের পর আশুলিয়ায় শ্রীপুর এলাকায় বিএনপির জনসভা করার কথা আছে। সেখান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বাইপাইল এলাকায় বিকেলে পদযাত্রা ও পথসভার কর্মসূচি রয়েছে এনসিপি।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পরিবারের সম্মানে আজ বেলা ৩টার দিকে শ্রীপুরের দারুল ইহসান মাদ্রাসা মাঠে জনসভা করবে দলটি। ঢাকা জেলা বিএনপির আয়োজনে এই সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা আছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এ ছাড়া সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকতে পারেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। সভা পরিচালনা করবেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী।
নিপুণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ সবার উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। তাঁর নির্দেশনায় জনগণের স্বার্থ, অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা থাকবে। কাছাকাছি দূরত্বে এনসিপির কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, একে অপরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের কর্মসূচি দেবে এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কর্মসূচি পালন করবে—এটাই রাজনৈতিক সৌন্দর্য। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে। তবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সবার মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচির সময়টি আগে পরে নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ঢাকা জেলার সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মেহরাব সিফাত প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল ৫টায় আশুলিয়ার বাইপাইলে পদযাত্রা ও সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকবেন। কাছাকাছি দূরত্বে বিএনপির সমাবেশ হলেও সময় ভিন্ন হওয়ায় কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাইপাইলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চন্দ্রামুখী সার্ভিস লেনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভার জন্য তৈরি মঞ্চ