ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ দেখছেন বাম নেতারা
Published: 7th, June 2025 GMT
‘ঈদের আগের দিন প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। উল্টো এতে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ ফুটে উঠেছে।’
শনিবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাত নেতার যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করেন, ‘রাখাইনের করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন, তা প্রকারান্তরে ‘মব সন্ত্রাস’কেই উসকে দিচ্ছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভাষণে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে ও এ বিষয়ের বিরোধিতাকারীদের নিয়ে যা বলা হয়েছে, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের যে সময় বলা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য বলছেন বাম নেতারা। তারা বিষয়গুলোকে দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সাত বাম নেতার ভাষ্য, ‘ঈদের আগে শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমিক-কর্মচারীরা অনেকে বেতন-ভাতা পাননি। ভাষণে বকেয়া বেতন-বোনাসের কোনো কথা নেই। এমনকি গত রোজার ঈদের সময় সরকার ও মালিকপক্ষ যে ওয়াদা, করেছিল তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারি তথ্যই বলছে, এ সময় বেকারত্ব বেড়েছে, অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। মব সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি চলছে, মানুষের জীবনে স্বস্তি নেই। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এসব কথার লেশমাত্র নেই।’
তারা বলেন, ‘তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) রাখাইনে করিডোর দেওয়ার প্রশ্নে যা বলতে চেয়েছেন, তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, জনমত উপেক্ষা করে হলেও রাখাইনে করিডোর দেওয়ার কার্যক্রম চলবে। খুব উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি চট্টগ্রামের বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে যেসব কথার অবতারণা করেছেন, তা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ গ্রহণ করতে পারে না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উল্টো এসব বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা (প্রধান উপদেষ্টা) দিয়েছেন, তা প্রকারান্তরে ‘মব সন্ত্রাস’কেই উসকে দিচ্ছে।সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কোনো পদে থেকে এ ধরনের উসকানি জনগণ গ্রহণ করবে না। বরং প্রত্যাখ্যান করবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরকে লাভজনক উল্লেখ করে বাম নেতারা বলেন, ‘এই বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার অর্থ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত হানার পথ পরিষ্কার করা। ইতোমধ্যে দেশের বামপন্থি গণতান্ত্রিক দল ও দেশপ্রেমিক মানুষ সরকারের এই পদক্ষেপ রুখে দাঁড়াতে আগামী ২৭ ও ২৮ জুন ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচি চলবে। কোনো হুমকি-ধামকি দিয়ে কর্মসূচি থেকে দেশপ্রেমিক জনগণকে পিছু হটানো যাবে না।’
দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও মানুষ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে, এমনকি তারও আগে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চায় বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছেন। রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা- ইত্যাদি সার্বিক বিবেচনায় ওই সময়ে নির্বাচন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা মনে করি, এ বছরের মধ্যেই এটি ভালোভাবে সম্ভব। এই সময়েই ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচারকাজ দৃশ্যমান করাও সম্ভব।’
বাম নেতারা বলেন, ‘কোনো অজুহাতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অর্থ হলো কোনো দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করা। এটি দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাব বলয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা; যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলতে পারে। এ ভাষণে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি, ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে কেন নির্বাচন- তা বোধগম্য নয়। উল্টো প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ ফুটে উঠেছে’ বলেও মনে করেন বাম নেতারা। এমনকি ভাষণটিকে সাধারণ মানুষের প্রতি অবজ্ঞা ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবেও উল্লেখ করেন তারা।
বিবৃতিদাতারা হলেন- বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক গ রহণয গ য সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
পুঁজিবাজারে মার্জিন হিসাবে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অনেক বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। তাই এ সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত ৯৬৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুন, ২০২৫ এর মধ্যে কমিশনে জমা প্রদানের শর্ত সাপেক্ষে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্টব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন।
আরো পড়ুন:
৭ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
ওই সময়সীমার মধ্যে শর্ত পরিপালনে অনেকে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা জমা দানের বিষয়ে আজকের কমিশন সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:
* গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে এবং স্টক ব্রোকারদের ডিলার অ্যাকাউন্ট ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিজস্ব পোর্টফলিওতে আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের একটি সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্য স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময় প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
* পূর্বে যারা বোর্ড অনুমোদন ব্যতিত কর্মপরিকল্পনা দাখিল করেছেন, সেসকল বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে পুনরায় বোর্ড অনুমোদনসহ কর্মপরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ