উত্তরবঙ্গ দীর্ঘ সময় উন্নয়নবৈষম্যের শিকার: আখতার হোসেন
Published: 9th, June 2025 GMT
উত্তরবঙ্গ দীর্ঘ সময় উন্নয়নবৈষম্যের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ সোমবার দুপুরে রংপুরের কাউনিয়ায় এক সম্প্রীতি ও ঐক্য সমাবেশ অনুষ্ঠানে আখতার হোসেন এ মন্তব্য করেন।
কাউনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড মেডিকেল স্টুডেন্সস অ্যাসোসিয়েশন (আমসা) এ সম্প্রীতি ও ঐক্য সমাবেশ এবং নবীণবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের অপ্রাপ্তির অসংখ্য জায়গা রয়েছে। শুধু কাউনিয়া উপজেলা নয়, গোটা উত্তরবঙ্গ যেভাবে উন্নয়নবৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে, প্রত্যেকটা বিষয়ে আমাদের দীর্ঘ সময়ের আক্ষেপ ও হতাশা রয়েছে। ঢাকা থেকে রংপুরে রেলপথে আসতে গেলে সিরাজগঞ্জ থেকে এত দূর ঘুরে বগুড়া হয়ে তারপর আমাদের আসতে হয়। যদি বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেললাইন থাকত, রংপুর অঞ্চলের মানুষের ঢাকা থেকে রংপুর আসতে অন্তত চার ঘণ্টা সময় কম লাগত।’
ঈদ উপলক্ষে ‘স্পেশাল’ ট্রেনেও উত্তরাঞ্চল বৈষম্যের শিকার উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘দুর্ভাগের বিষয়, আমাদের উত্তরাঞ্চেলের মানুষকে ঈদের সময় ট্রেনের ছাদে করে আসতে হয়। আমাদের জন্য স্পেশাল ট্রেন থাকে না। রংপুরের মানুষ যাতে সহজে ঢাকা-রংপুর যাতায়াত করতে পারে, সে জন্য সড়কপথ ও রেলপথের যে সংস্কার প্রয়োজন, সেই সংস্কারের জন্য এনসিপি, বিএনপি, জামায়াত—সকলকে এই সুরে কথা বলতে হবে। উত্তরাঞ্চেলের স্বার্থে আমরা কখনো মতপার্থক্যকে প্রাধান্য দেব না।’
সম্প্রীতি ও ঐক্য সমাবেশে তিস্তা নদী সমস্যা নিয়েও কথা বলেন এনসিপির সদস্যসচিব। আখতার হোসেন বলেন, ‘যদি তিস্তা নদীকে শাসন করা হতো, বাঁধ থাকত, নদীর গভীরতা থাকত, পানির প্রবাহ সঠিকভাব হতো, তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠত। তাহলে এই নদী আমাদের জন্য কয়েকগুণ সৌভাগ্যের প্রতীক হতো। সম্প্রতি আমরা সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা আশাবাদী, দলমতের পার্থক্য চাই না। আমরা আমাদের তিস্তা সমস্যার সমাধান চাই।’
কাউনিয়া উপজেলাকে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল থেকে এগিয়ে নিতে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান আখতার হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির উপযোগী করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গড়ে তোলা ও ভর্তি–ইচ্ছুদের যে ধরনের পরামর্শ ও উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন, তা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
আমসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, রংপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির এ টি এম আজম খানসহ স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন আম দ র ক উন য় এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদযাত্রায় পুরোনো গল্পের নতুন মাত্রা
বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় গাবতলী থেকে আরাফাত পরিবহনের বাসে রওনা দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে নেমেছেন বিকেল ৫টায় আসাদুল হক। পুরো ১৯ ঘণ্টা লেগেছে ৮ ঘণ্টার রাস্তা যেতে। সমকালকে শুক্রবার সন্ধ্যায় এমনটাই জানিয়েছেন একটি বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরিরত আসাদুল। যানজটে নাকাল তিনি। শুধু যমুনা সেতুর আগেই যানজটে আটকে ছিলেন ৮ ঘণ্টা। পরে সিরাজগঞ্জ মোড়, বগুড়া, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকাতেও যানজট ছিল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেরও বিভিন্ন অংশে প্রায় কাছাকাছি অভিজ্ঞতা অনেক যাত্রীর। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঠিক একইরকম না হলেও যাত্রীদের এ দুদিনের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। বরিশালমিুখী যাত্রাও তেমন স্বস্তিকর ছিল না। সব মিলিয়ে বলা যায় এবারের ঈদযাত্রা মানুষকে গত বছর বা তার আগের প্রায় সব বছরের দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
অথচ এবার এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত গত রোজার ঈদের প্রায় মসৃণ ঈদযাত্রার কথা ধরলে ঈদুল আজহায়ও তার ধারাবাহিকতা থাকার কথা ছিল। ওই ঈদে বেশ লম্বা ছুটি দেওয়া হয়েছিল। গ্রাম ও মফস্বল শহরে বসবাসরত প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যারা ঢাকা বা বড় শহরগুলো ছেড়েছিলেন তারা বেশ স্বস্তি বোধ করেছিলেন। সম্ভবত সেই অভিজ্ঞতা থেকেই, সরকারি সিদ্ধান্তের বদৌলতে, ঈদুল আজহায়ও, এবার টানা ১০ দিন ছুটি পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মীরা। কিন্তু এক যাত্রায় ভিন্ন হলো, অন্তত কোনো রুটেই যে গত ঈদের মতো স্বস্তি পাননি যাত্রীরা তা তো বলাই যায়।
গত কয়েক বছর বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ রুটে ঈদ মৗসুমে যানজটের কারণ খোঁজা হতো টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি অংশে চার লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান থাকার মধ্যে। গত রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতরে কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছিল বলে জানানো হয়। সেটাও ছিল স্বস্তিকর ঈদযাত্রার অন্যতম কারণ। কিন্তু ওই সমস্যা তো এ ঈদেও নেই। তারপরও পুরনো যানজট ফিরে এল কেন?
এটা ঠিক, ছুটিটা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। একইসঙ্গে প্রায় সবার ছুটি হওয়ায় সড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে, যা গত বছর বা তার আগের বছর গুলোর প্রায় সাধারণ দৃশ্য ছিল। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও তাই অতীতের মন্ত্রীদের মতো একসঙ্গে অনেক মানুষের বাড়িমুখো হওয়াকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন। কিন্তু তাতে গল্পটা কি একই হয়ে গেল না?
ঈদুল ফিতরে যানজটমুক্ত মহাসড়ক দেখে অনেকেই তাকে সরকারের ম্যাজিক নাম দিয়েছিলেন। সাংবাদিকেরা এ ম্যাজিকের উৎস জানতে চাওয়ায় স্বরাষ্ট উপদেষ্টা পরামর্শ দিয়েছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আশ্রয় নিতে। কিন্তু মাত্র দু মাসের মাথায় মনে হচ্ছে সেই ম্যাজিকটা কাজ করছে না। যানজটের কারণ নিয়ে সমকালকে দেওয়া বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য শুনলে তা বোঝা যায়।
যেমন: যমুনা সেতু পশ্চিম থানার অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জামান শুক্রবার দুপুরে বলেছেন, ‘ঢাকা ও উত্তরাঞ্চল অভিমুখে উভয়দিকেই চাপ রয়েছে। সেতুর ওপর দুর্ঘটনা ও টোল আদায় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ রাখায় মাঝেমধ্যে ঢাকা অভিমুখে যান চলাচলে অসুবিধা হয়েছে।’
যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদউদ্দিন বলেন, যমুনা সেতুর ওপরে ৭ নম্বর পিলারের কাছে গাড়ি হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যে কারণে উত্তরবঙ্গ-ঢাকাগামী লেনটি বন্ধ হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজির পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল অভিমুখে প্রায় ৬৪ হাজার ২শ ৮৩টি যানবাহন পারাপার হয়। যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় চার গুণ। হঠাৎ করে এত সংখ্যক যানবাহন পারাপার হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে দুরূহ হয়ে পড়ে।’
হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাসেক-২ প্রকল্পের কারনে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ীতে দুই পাশে সিঙ্গেল লাইন দিয়ে বর্তমানে যান চলাচল করছে। উত্তরাঞ্চলগামী চার লাইনের গাড়ি যখন এক লাইনে ঢুকে যায় তখন চালক যাত্রীদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই হয়। এর কোন বিকল্প নেই। চারশ গাড়ি আসছে, ঢুকতে পারবে একশ, আর বাকি তিন শো তখন যানজট তৈরি করে।’
সওজের সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল কোঅপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. ওয়ালিউর রহমান দুপুরে বলেন, ‘পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে দুইদিকে নির্মাণাধীন সার্ভিস রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের পাশে যত্রতত্র ঝুপড়ি মুদি দোকান ও শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশার অবৈধ দখলও যানজটের অন্যতম কারণ।
অর্থাৎ ঈদের সময় যানজটে নাকাল মানুষদের প্রবোধ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মর্তাদের মুখে সেই পুরনো গল্পগুলোই ফিরে এসেছে। সড়ক যতই চার লেন-ছয় লেন হোক, সড়ক ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে এ গল্প থেকে মুক্তি নেই, এটাই সত্য। সেখানে উন্নতির কী হলো?
তবে শেষ কথা হিসেবেও সেই পুরোনো কথাটাই বলা যায়। আসাদুল যেমন বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত যে বাড়ি আসতে পারছি, এটাই অনেক।’ এটাও বলা যায়, গত বছর তো উত্তরবঙ্গেরই অনেককে পথেই ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে, এবার অন্তত তা হয়নি, ঈদের আগে একদিন ছুটি বেশি থাকার কারণে। আর সব ভোগান্তি পুরোনো হলেও, অন্তত ঈদের নামাজ যে পথে পড়তে হয়নি, তার জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতেই পারে।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল