সাংহাইয়ের নগর পরিকল্পনার মানচিত্র দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশের তরুণ প্রত
Published: 17th, June 2025 GMT
সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন ও দূরদর্শী সংস্কার চিন্তার হাত ধরে চাইলেই যে চোখের পলকে একটি সাধারণ ভূখণ্ডকে চকচকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা যায়। তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ চীনের সাংহাই।
গগণচুম্বি অট্টালিকা, সুনিপুণ নগর ব্যবস্থাপনায় আদর্শ এই মডেল নগরীর শুরুর দিকের পরিকল্পনাটা কেমন ছিল? কী করে একটার পর একটা মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়নে জেলেপল্লী হয়ে গেল বিশ্ব বাণিজ্যের ব্যস্ততম কেন্দ্র—চীন সফরে এসে এবার সেসবই হাতে-কলমে দেখেছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একঝাঁক তরুণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণাকর্মী, শীর্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতা ও সংবাদকর্মীদের সমন্বয়ে ২২ জনের একটি দল গত রবিবার (১৫ জুন) চীনের সাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টার পরিদর্শন করেন।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র শুল্কচুক্তি ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছে: চীন
এর আগে, তারা ১১ জুন কুয়াংচৌ শহরে পৌঁছান। সফরটি আয়োজন করে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ও সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রতিনিধি দলের এ সফর নিঃসন্দেহে দেশের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারক ও নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য সাংহাইকে একটি অনুকরণীয় মডেল হিসেবে উপস্থাপন করবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নগর উন্নয়নে নতুন দিনের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিদর্শন চলাকালে নগর পরিকল্পনা প্রদর্শনী কেন্দ্রের বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরে দেখেন তরুণ প্রতিনিধিরা। শুরুতেই তারা এক ঝলকে দেখে নেন সুবিশাল ডিসপ্লেতে ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা সাংহাইয়ের দীর্ঘ সাড়ে ৬ হাজার বছরের ইতিহাস এবং বিভিন্ন সময়ে সাংহাইয়ের জন্য তৈরি করা নগর-পরিকল্পনার মাস্টারপ্ল্যান।
চারটি স্তরে ভাগ করা এই প্রদর্শনী কেন্দ্রের মিনিয়েচার অংশে রয়েছে সাংহাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের খুদে সংস্করণ। তাতে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিসপ্লেতে দেখানো হয় সাংহাইয়ের নানারূপ।
ইয়াংজি নদীর অববাহিকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সঙ্গী করে সাংহাইয়ের এগিয়ে চলার নানা পরিকল্পনার সঙ্গে বাংলাদেশি তরুণ প্রতিনিধিদলকে পরিচয় করিয়ে দেন কেন্দ্রটির পরিদর্শন নির্দেশক। এ সময় সাংহাইয়ের উন্নয়নে জনগণের সম্পৃক্ততা ও নগরীর মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন-চিন্তার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন তিনি।
এরপর প্রতিনিধিদল উপভোগ করে সাংহাই নগরীর একটি অনবদ্য ভার্চুয়াল ট্যুর। ডিসপ্লে ও উন্নত ক্যামেরা প্রযুক্তিতে দর্শনার্থীরা নিমজ্জিত হয়ে যান নগরীর নদী, সবুজ ও আকাশছোঁয়া ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া পরিকল্পিত সড়কগুলো। সুবিশাল বাঁকানো ডিসপ্লের ওপর দাঁড়াতেই মনে হবে দর্শক নিজেও ডুব দিয়েছেন সাংহাই নগরীর প্রাণকেন্দ্রে।
সাংহাইয়ের মতো এমন নগর পরিকল্পনা প্রদর্শনী কেন্দ্র বাংলাদেশেও করা যেতে পারে বলে সিএমজি বাংলাকে জানিয়েছেন তরুণ প্রতিনিধিদলের টিম লিডার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড.
অধ্যাপক রাকিবুল হক বলেন, “আমরা আমাদের চট্টগ্রাম ও সিলেটে এ ধরনের সেন্টার করতে পারি। এগুলো আমাদের টুরিস্ট জোন এবং এখানে নগর পরিকল্পনা প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণ করাও সহজ হবে। ঢাকায় ঘনবসতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”
সাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের কেন্দ্র থাকলে আমরা আমাদের নগরীর বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যতে কী করতে যাচ্ছি, সেটা জনগণকে দেখাতে পারব। অন্যরা তখন এটা দেখে যার যার আইডিয়া শেয়ার করতে পারবে। এতে করে আরো বেশি ইন্টারেক্টিভ নগর পরিকল্পনার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর এ ধরনের কেন্দ্রের নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবার কিছু নেই। পুরো কাজটা চীন করে দিলে, তাদের গাইডও করতে হবে না। তাদের বিল্ট-ইন টেকনোলজি আমরা নিয়ে আসতে পারি।”
তিনি আরো বলেন, “চীনের অর্থায়নে ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানির বণ্টন ও পয়ঃনিষ্কাশন নিয়ে প্রকল্প চলছে। তাই আমাদের নগর পরিকল্পনা নিয়ে কিন্তু তাদের ভালো ধারণা আছে। এসব কাজে তারা যথেষ্ট ভালো ভবিষ্যদ্বাণীও করতে পারবে।”
নগর পরিকল্পনা নিয়ে সাংহাইয়ের এমন এক অনবদ্য আয়োজন দেখে তরুণ প্রতিনিধিরাও প্রকাশ করেছেন তাদের মুগ্ধতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম. আলি সিদ্দিকী বলেন, “সাংহাই প্রশাসন কী করে বাস্তুসংস্থান ও শহুরে জীবনের মধ্যে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করল, সেটা দেখলাম এখানে। তাছাড়া, নগরীর একটি টেকসই ভবিষ্যতের পাশাপাশি একটি কমিউনিটির প্রয়োজনীয়তা পূরণের আবহ পাওয়া যায় এখানে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সাংহাই প্রশাসন যে পরিকল্পনা করেছে, তা অন্যান্য বড় শহরগুলোর জন্য একটি ভিশন বা নির্দেশনা দিতে পারে।”
ঢাবির অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের লেকচারার মেহনাজ সাদেক বলেন, “সাংহাই একটি রিভার ডেলটা। ভৌগলিকভাবে আমাদের দেশের সঙ্গে মিল আছে। তাই এখানকার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি আমরা এখানে এসে শিখে নিতে পারি, তবে সেটা নিজেদের দেশেও প্রয়োগ করতে পারব।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এএএম ইয়াহিয়া বলেন, “সাংহাইয়ের এই ভার্চুয়াল ট্যুর এক কথায় ইমপ্রেসিভ। একটি ভবনের ভেতরই গোটা সাংহাই দেখানো হলো।”
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা দেখেছি চীন সরকার কিভাবে সাংহাইকে একদম নতুন করে সাজিয়েছে। পরিচ্ছন্ন একটা নগরী গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা দরকার এবং টেকসই কৌশলে সে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া দরকার, সেগুলো চীন খুব কৌশলে ও দক্ষতার সঙ্গে করেছে। এ পরিকল্পনার প্রতিটি অংশ দেখে আমরা আসলেই মুগ্ধ।”
অন্যদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. রাসেল মিয়া বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের প্রদর্শনী ও কৌশলের বিনিময় বেশি দরকার। এতে করে আমাদের নগরবিদরাও আরও আইডিয়া পাবেন। এই প্রতিনিধিদলকে সাংহাই কর্তৃপক্ষ যে পুরো নগর পরিকল্পনার আদ্যপান্ত দেখালো, এটাও কিন্তু এক ধরনের বিনিময়। তারা মূলত দেখাতে চাইল যে, একটি সুন্দর পরিকল্পনা থাকলে একটি নদী ব্যবহার করেও উন্নত শহর গড়ে তোলা যায়।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) মো. আসাদুল্লাহ আল গালিফ বলেন, “একটা দেশ আসলে কতটা আধুনিক চিন্তা করতে পারে, সেটা এখানে এলেই বোঝা যায়। চীন আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যে পরিকল্পনা করেছিল, সেগুলো এখন দৃশ্যমান। আমার কাছে মনে হয়, আমরা যদি এ রকম করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোতে পারি, তবে আমাদের পক্ষেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।”
ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেলোয়ার হাসান শিশির বলেন, “একটি গ্রামকে শূন্য থেকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই আমরা চীনের এই প্রদর্শনীতে দেখলাম। আমার তো মনে হচ্ছে, কখন দেশে ফিরে এমন কিছু নিয়ে কাজ শুরু করব। আমার অনুধাবনটা হলো, তরুণদের মধ্যে যারা এখন রাজনীতি করতে চায়, তাদের সারা বিশ্বের এসব অগ্রগতির গল্পগুলো জানতে হবে। এর জন্য প্রচুর পড়তেও হবে।”
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মাঝে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক তাওসিফ এহসান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আব্দুল করিম, সাজ্জাদুল করিম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান, বিআইআইএসএস-এর গবেষণা কর্মকর্তা নুর আহমেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট প্রীতিলতা খন্দকার হক, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট কাউন্সিলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মাহবুব আলম, সাইনো-বাংলা ইমপ্যাক্ট এর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. সাইব, সিএমজি বাংলার ফিচার এডিটর ফয়সল আবদুল্লাহ, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক মো. আব্বাস, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এডিটিং অ্যাসোসিয়েট মো. নাসিমুল হুদা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. সাইফুল ইসলাম, সবুজ খামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রমি দেওয়ান।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য এ ধরন র আম দ র র জন য র একট র নগর নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম নগরে করোনার টিকাদান শুরু আজ
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফাইজারের বুস্টার ডোজ টিকাদান কার্যক্রম আবারও শুরু করছে সিটি করপোরেশন।
আজ বুধবার প্রথম ধাপে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও প্রসূতিরা এ টিকা নিতে পারবেন। নগরকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে ৩০০ ডোজ করে ফাইজারের টিকা পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ভায়ালে রয়েছে ছয় ডোজ টিকা। প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানায় সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, নগরে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে বয়স্ক ও প্রসূতিদের অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। গত ২৭ মে চট্টগ্রামে ৬৭ হাজার ডোজ ফাইজারের টিকা আসে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনা টিকা সবার জন্য উন্মুক্ত। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।