সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন ও দূরদর্শী সংস্কার চিন্তার হাত ধরে চাইলেই যে চোখের পলকে একটি সাধারণ ভূখণ্ডকে চকচকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা যায়। তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ চীনের সাংহাই।

গগণচুম্বি অট্টালিকা, সুনিপুণ নগর ব্যবস্থাপনায় আদর্শ এই মডেল নগরীর শুরুর দিকের পরিকল্পনাটা কেমন ছিল? কী করে একটার পর একটা মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়নে জেলেপল্লী হয়ে গেল বিশ্ব বাণিজ্যের ব্যস্ততম কেন্দ্র—চীন সফরে এসে এবার সেসবই হাতে-কলমে দেখেছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একঝাঁক তরুণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণাকর্মী, শীর্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতা ও সংবাদকর্মীদের সমন্বয়ে ২২ জনের একটি দল গত রবিবার (১৫ জুন) চীনের সাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টার পরিদর্শন করেন।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্র শুল্কচুক্তি ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছে: চীন

এর আগে, তারা ১১ জুন কুয়াংচৌ শহরে পৌঁছান। সফরটি আয়োজন করে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ও সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রতিনিধি দলের এ সফর নিঃসন্দেহে দেশের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারক ও নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য সাংহাইকে একটি অনুকরণীয় মডেল হিসেবে উপস্থাপন করবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নগর উন্নয়নে নতুন দিনের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরিদর্শন চলাকালে নগর পরিকল্পনা প্রদর্শনী কেন্দ্রের বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরে দেখেন তরুণ প্রতিনিধিরা। শুরুতেই তারা এক ঝলকে দেখে নেন সুবিশাল ডিসপ্লেতে ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা সাংহাইয়ের দীর্ঘ সাড়ে ৬ হাজার বছরের ইতিহাস এবং বিভিন্ন সময়ে সাংহাইয়ের জন্য তৈরি করা নগর-পরিকল্পনার মাস্টারপ্ল্যান।

চারটি স্তরে ভাগ করা এই প্রদর্শনী কেন্দ্রের মিনিয়েচার অংশে রয়েছে সাংহাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের খুদে সংস্করণ। তাতে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিসপ্লেতে দেখানো হয় সাংহাইয়ের নানারূপ।

ইয়াংজি নদীর অববাহিকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সঙ্গী করে সাংহাইয়ের এগিয়ে চলার নানা পরিকল্পনার সঙ্গে বাংলাদেশি তরুণ প্রতিনিধিদলকে পরিচয় করিয়ে দেন কেন্দ্রটির পরিদর্শন নির্দেশক। এ সময় সাংহাইয়ের উন্নয়নে জনগণের সম্পৃক্ততা ও নগরীর মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন-চিন্তার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন তিনি।

এরপর প্রতিনিধিদল উপভোগ করে সাংহাই নগরীর একটি অনবদ্য ভার্চুয়াল ট্যুর। ডিসপ্লে ও উন্নত ক্যামেরা প্রযুক্তিতে দর্শনার্থীরা নিমজ্জিত হয়ে যান নগরীর নদী, সবুজ ও আকাশছোঁয়া ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া পরিকল্পিত সড়কগুলো। সুবিশাল বাঁকানো ডিসপ্লের ওপর দাঁড়াতেই মনে হবে দর্শক নিজেও ডুব দিয়েছেন সাংহাই নগরীর প্রাণকেন্দ্রে।

সাংহাইয়ের মতো এমন নগর পরিকল্পনা প্রদর্শনী কেন্দ্র বাংলাদেশেও করা যেতে পারে বলে সিএমজি বাংলাকে জানিয়েছেন তরুণ প্রতিনিধিদলের টিম লিডার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড.

রাকিবুল হক।

অধ্যাপক রাকিবুল হক বলেন, “আমরা আমাদের চট্টগ্রাম ও সিলেটে এ ধরনের সেন্টার করতে পারি। এগুলো আমাদের টুরিস্ট জোন এবং এখানে নগর পরিকল্পনা প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণ করাও সহজ হবে। ঢাকায় ঘনবসতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”

সাংহাই আরবান প্ল্যানিং এক্সিবিশন সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের কেন্দ্র থাকলে আমরা আমাদের নগরীর বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যতে কী করতে যাচ্ছি, সেটা জনগণকে দেখাতে পারব। অন্যরা তখন এটা দেখে যার যার আইডিয়া শেয়ার করতে পারবে। এতে করে আরো বেশি ইন্টারেক্টিভ নগর পরিকল্পনার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর এ ধরনের কেন্দ্রের নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবার কিছু নেই। পুরো কাজটা চীন করে দিলে, তাদের গাইডও করতে হবে না। তাদের বিল্ট-ইন টেকনোলজি আমরা নিয়ে আসতে পারি।”

তিনি আরো বলেন, “চীনের অর্থায়নে ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানির বণ্টন ও পয়ঃনিষ্কাশন নিয়ে প্রকল্প চলছে। তাই আমাদের নগর পরিকল্পনা নিয়ে কিন্তু তাদের ভালো ধারণা আছে। এসব কাজে তারা যথেষ্ট ভালো ভবিষ্যদ্বাণীও করতে পারবে।”

নগর পরিকল্পনা নিয়ে সাংহাইয়ের এমন এক অনবদ্য আয়োজন দেখে তরুণ প্রতিনিধিরাও প্রকাশ করেছেন তাদের মুগ্ধতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম. আলি সিদ্দিকী বলেন, “সাংহাই প্রশাসন কী করে বাস্তুসংস্থান ও শহুরে জীবনের মধ্যে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করল, সেটা দেখলাম এখানে। তাছাড়া, নগরীর একটি টেকসই ভবিষ্যতের পাশাপাশি একটি কমিউনিটির প্রয়োজনীয়তা পূরণের আবহ পাওয়া যায় এখানে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সাংহাই প্রশাসন যে পরিকল্পনা করেছে, তা অন্যান্য বড় শহরগুলোর জন্য একটি ভিশন বা নির্দেশনা দিতে পারে।”

ঢাবির অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের লেকচারার মেহনাজ সাদেক বলেন, “সাংহাই একটি রিভার ডেলটা। ভৌগলিকভাবে আমাদের দেশের সঙ্গে মিল আছে। তাই এখানকার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি আমরা এখানে এসে শিখে নিতে পারি, তবে সেটা নিজেদের দেশেও প্রয়োগ করতে পারব।”

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এএএম ইয়াহিয়া বলেন, “সাংহাইয়ের এই ভার্চুয়াল ট্যুর এক কথায় ইমপ্রেসিভ। একটি ভবনের ভেতরই গোটা সাংহাই দেখানো হলো।”

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা দেখেছি চীন সরকার কিভাবে সাংহাইকে একদম নতুন করে সাজিয়েছে। পরিচ্ছন্ন একটা নগরী গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা দরকার এবং টেকসই কৌশলে সে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া দরকার, সেগুলো চীন খুব কৌশলে ও দক্ষতার সঙ্গে করেছে। এ পরিকল্পনার প্রতিটি অংশ দেখে আমরা আসলেই মুগ্ধ।”

অন্যদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. রাসেল মিয়া বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের প্রদর্শনী ও কৌশলের বিনিময় বেশি দরকার। এতে করে আমাদের নগরবিদরাও আরও আইডিয়া পাবেন। এই প্রতিনিধিদলকে সাংহাই কর্তৃপক্ষ যে পুরো নগর পরিকল্পনার আদ্যপান্ত দেখালো, এটাও কিন্তু এক ধরনের বিনিময়। তারা মূলত দেখাতে চাইল যে, একটি সুন্দর পরিকল্পনা থাকলে একটি নদী ব্যবহার করেও উন্নত শহর গড়ে তোলা যায়।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) মো. আসাদুল্লাহ আল গালিফ বলেন, “একটা দেশ আসলে কতটা আধুনিক চিন্তা করতে পারে, সেটা এখানে এলেই বোঝা যায়। চীন আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যে পরিকল্পনা করেছিল, সেগুলো এখন দৃশ্যমান। আমার কাছে মনে হয়, আমরা যদি এ রকম করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোতে পারি, তবে আমাদের পক্ষেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।”

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেলোয়ার হাসান শিশির বলেন, “একটি গ্রামকে শূন্য থেকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই আমরা চীনের এই প্রদর্শনীতে দেখলাম। আমার তো মনে হচ্ছে, কখন দেশে ফিরে এমন কিছু নিয়ে কাজ শুরু করব। আমার অনুধাবনটা হলো, তরুণদের মধ্যে যারা এখন রাজনীতি করতে চায়, তাদের সারা বিশ্বের এসব অগ্রগতির গল্পগুলো জানতে হবে। এর জন্য প্রচুর পড়তেও হবে।”

প্রতিনিধি দলে অন্যদের মাঝে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক তাওসিফ এহসান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আব্দুল করিম, সাজ্জাদুল করিম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান, বিআইআইএসএস-এর গবেষণা কর্মকর্তা নুর আহমেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট প্রীতিলতা খন্দকার হক, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট কাউন্সিলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মাহবুব আলম, সাইনো-বাংলা ইমপ্যাক্ট এর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. সাইব, সিএমজি বাংলার ফিচার এডিটর ফয়সল আবদুল্লাহ, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক মো. আব্বাস, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এডিটিং অ্যাসোসিয়েট মো. নাসিমুল হুদা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. সাইফুল ইসলাম, সবুজ খামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রমি দেওয়ান।

ঢাকা/হাসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য এ ধরন র আম দ র র জন য র একট র নগর নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ