মহাবিশ্বের নিখোঁজ পদার্থ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
Published: 18th, June 2025 GMT
মহাবিশ্বে দৃশ্যমান পদার্থের পাশাপাশি অদৃশ্য অন্ধকার পদার্থ রয়েছে। বিশাল আকারে মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে অদৃশ্য পদার্থের খোঁজ চলছে অনেক বছর ধরে। বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস, ধুলা, তারা, গ্রহসহ বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুর মতো সাধারণ পদার্থ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, সাধারণ পদার্থ সব পদার্থের মাত্র ১৫ শতাংশ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এসব সাধারণ পদার্থের খোঁজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এদের প্রায় অর্ধেক পদার্থ এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত। মহাবিশ্বের ৬৯টি স্থান থেকে নির্গত রেডিও তরঙ্গের শক্তিশালী বিস্ফোরণের সাহায্যে গবেষকেরা নিখোঁজ পদার্থ খুঁজে পেয়েছেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লিয়াম কনর বলেন, ‘আমরা একটি প্রশ্নের সঙ্গে লড়াই করছি। এসব পদার্থ আসলে কোথায় লুকিয়ে আছে? উত্তরে মনে হচ্ছে, ছায়াপথ থেকে অনেক দূরে একটি ছড়িয়ে থাকা বিশৃঙ্খল মহাজাগতিক জালে লুকিয়ে আছে বাকি পদার্থ। অন্ধকার পদার্থ একটি রহস্যময় পদার্থ, যা মহাবিশ্বের পদার্থের বেশির ভাগ অংশ তৈরি করে। আমরা জানি না কোন নতুন কণা বা পদার্থ অন্ধকার পদার্থ তৈরি করে। আমরা জানি, সাধারণ পদার্থ কী। আমরা কেবল জানতাম না যে এটি কোথায় ছিল।’
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নিখোঁজ অনুপস্থিত পদার্থের একটি ছোট অংশ আমাদের মিল্কিওয়েসহ ছায়াপথ ঘিরে ছড়িয়ে থাকা পদার্থের বলয়ে অবস্থান করছে। সাধারণ পদার্থ বেরিয়ন দিয়ে গঠিত। পরমাণু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপপারমাণবিক কণা প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে গঠিত। যখন সুপারনোভাতে বিশাল নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয় বা যখন ছায়াপথের ভেতরে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল ঢেকুর তোলার মতো আচরণ করে, তখন ছায়াপথ থেকে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস নির্গত হয়। তারা বা গ্যাস গ্রাস করার পরে বিভিন্ন উপাদান ত্যাগ করে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী কনর বলেন, ‘মহাবিশ্ব যদি আরও বিরক্তিকর জায়গা হতো বা পদার্থবিদ্যার নিয়ম ভিন্ন হতো তাহলে আপনি সাধারণ পদার্থ দেখতে পেতেন। এসব পদার্থ তখন ছায়াপথে পড়ে ঠান্ডা হয়ে যেত বা তারা তৈরি করত। যতক্ষণ না প্রতিটি প্রোটন ও নিউট্রন একটি তারার অংশ হতো, ততক্ষণ এ প্রক্রিয়া চলতে থাকত। যদিও বাস্তবে তা ঘটে না।’
বিভিন্ন ভৌত প্রক্রিয়ায় সাধারণ পদার্থ বিশাল দূরত্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মহাবিশ্বের দূরদূরান্তে মহাজাগতিক মরুভূমিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। গ্যাসসমূহ তার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না বরং প্লাজমা আকারে অবস্থান করে। নিখোঁজ সাধারণ পদার্থ শনাক্তকরণ ও পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার সঙ্গে ফার্স্ট রেডিও বার্স্ট (এফআরবি) ঘটনা জড়িত। মহাবিশ্বের দূরবর্তী বিন্দু থেকে নির্গত রেডিও তরঙ্গের শক্তিশালী স্পন্দন জানার চেষ্টা করা হয়। যদিও এসব স্পন্দনের সঠিক কারণ এখনো রহস্যময়। ধারণা করা হয়, শক্তিশালী চৌম্বক নিউট্রন তারা থেকে এসব উত্পাদিত হয়। রেডিও তরঙ্গ ফ্রিকোয়েন্সিতে আলো ভ্রমণ করার সময় বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিচ্ছুরণের মাত্রা আলোর পথে কতটা পদার্থ রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পদ র থ পদ র থ র তরঙ গ
এছাড়াও পড়ুন:
বিত্তবানেরা পরিচিত, তাই চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবির সিদ্ধান্ত
চারদিকে সবাই নানাভাবে টাকা কামাই করছে। কীভাবে টাকা কামাই করা যায়, তা নিয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপির পাঁচ নেতা। টাঙ্গাইল পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে দেড় মাস আগে ওই বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনায় উঠে আসে এলাকার বিত্তবানেরা সবাই পরিচিত। তাই সরাসরি চাঁদা চাওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় ‘কিলার গ্রুপ, হত্যাকারী দল’-এর নামে প্যাডে চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হবে।
চাঁদা দাবির অভিযোগে শনিবার টাঙ্গাইলে গ্রেপ্তার বিএনপির পাঁচ নেতা–কর্মীর মধ্যে দুজন আদালতে এমন জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। তাঁরা হলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন ও সদস্য সাব্বির মিয়া।
পুলিশ সূত্র জানায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ ওই দুজনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে এই দুজনসহ গ্রেপ্তার পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। রাত আটটার দিকে তাঁদের কারাগারে নেওয়া হয়।
কারাগারে পাঠানো অপর তিনজন হলেন টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জুবায়ের আহমেদ, শহর বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও শহর বিএনপির সদস্য ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মিয়া।
এক মৎস্য খামারের মালিকের কাছে ‘কিলার গ্রুপ, হত্যাকারী দল’—এর নামে প্যাডে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বিএনপির এই পাঁচ নেতা–কর্মীকে আজ শনিবার ভোরে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই মৎস্য খামারের মালিক বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির মিয়া আরও বলেছেন, চাঁদা চেয়ে চিঠির ভাষা কী হবে এবং কাদের চিঠি দেওয়া হবে, সেই তালিকাও তাঁরা সেদিন তৈরি করেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে চিঠি দিয়েছেন। আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁর নিজের ল্যাপটপে চিঠি তৈরি করেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে পৌর এলাকায় সন্তোষে মৎস্য খামারের মালিক মো. আজাহার আলীর কর্মচারীর হাতে অচেনা একজন একটি চিঠি দিয়ে যান। সেই চিঠি শুক্রবার সকালে সেই কর্মচারী আজাহার আলীকে দেন। চিঠিটি ‘কিলার গ্রুপ, হত্যাকারী দল’—এর প্যাডে লেখা। প্যাডে স্লোগান লেখা ছিল ‘চাঁদা দে, নইলে জীবন দে।’ চিঠিতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। দাবি করা টাকা ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাতটার সময় একটি শপিং ব্যাগে করে কাগমারীতে মাহমুদুল হাসানের (সাবেক সংসদ সদস্য) বাসার সামনে একটি গাছের নিচে রেখে যেতে বলা হয়।
চিঠিটি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ শুক্রবার রাতে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগিতায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিন নেতাকে বহিষ্কারটাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জুবায়ের আহমেদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানী এবং সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার রাতে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যদিও এর আগে শহর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান (আলীম) ওই পাঁচজনের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ষড়যন্ত্রের শিকার। রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হেয় করার জন্য তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকায় কোনো বদনাম নেই।
আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে ‘কিলার গ্রুপ’ লেখা প্যাডে চাঁদা দাবি, বিএনপির ৫ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার৫ ঘণ্টা আগে