প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে আগে থেকে তিনটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চললেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাড়া না মেলায় ‘প্রক্সি পদ্ধতি’ থেকে সরে এসেছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। আপাতত আইটি বেইজ্‌ড অনলাইন পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে একটি ‘পাইলট প্রকল্প’ গ্রহণের সম্ভাব্যতা নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। সীমিত পরিসরে চালু হতে পারে ভোটগ্রহণের অত্যাধুনিক এই পদ্ধতি।

এই অবস্থায় বিদ্যমান পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিতেই আস্থা রাখতে চাইছে ইসি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে কীভাবে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে আরও কার্যকর করা যায়, সেটা নিয়েও পর্যালোচনা চলছে। তবে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির আধুনিকায়নে বিশাল অংকের ব্যয় নিয়েও কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিতে ভোটার প্রতি ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় উঠে আসায় এটি ইসির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নাসির উদ্দিন নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ করা হলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে এসেছেন বলে ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্নে ইসির সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বুধবার সমকালকে বলেছেন, অনলাইনে ভোটগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে ইসির একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছেন। হয়তো ‘পাইলটিং’ করে সীমিত পরিসরে এই ভোটদান পদ্ধতি চালু করা হতে পারে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটা অনেকটাই কঠিন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও কিছু এলাকায় এটা চালুর সম্ভাব্যতা নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।

তিনি বলেন, তবে এটাও ঠিক, বিশ্বের অনেক দেশেই অনলাইন পদ্ধতি চালু করেও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশী ভারতেও এটা চালু রাখা যায়নি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে প্রবাসী ভোটারদের জন্য ‘প্রক্সি পদ্ধতি’র প্রয়োগ থেকে সরে আসার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রক্সি পদ্ধতি সহজ ও অর্থ সাশ্রয়ী ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এর পক্ষে তেমন একটা নেই। মাত্র আটটি দল এ পদ্ধতিতে মত দিয়েছে। তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী বিদ্যমান পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিটি এগিয়ে নিতে চাই আমরা। সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে আরও কার্যকর ও সহজতর করার জন্য কাজ চলছে। আর প্রক্সি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা যেভাবে রয়েছে, আপাতত সেভাবেই থাকছে। ভবিষ্যতের জন্য এটার সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা চলবে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ। এর মধ্যে ৪০টি দেশে বসবাসকারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ। যদিও হালনাগাদ ভোটার তালিকা হলে নতুন করে আরও ৫০ লাখ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রবাসী ভোটারের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এসব প্রবাসী ভোটার দীর্ঘদিন থেকেই ভোটাধিকারের সুযোগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত প্রবাসীদের ভোটাধিকার চালুর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

এরপর এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের পদ্ধতির ইস্যুতে গত ৮ এপ্রিল কর্মশালা ও ২৯ এপ্রিল সেমিনার করে। সেমিনারে অংশ নেওয়া ২৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র আটটি প্রক্সি পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দেয়। এছাড়া একাধিক পদ্ধতি সমর্থন করে দেওয়া মতামতের ক্ষেত্রে ১৮টি দল অনলাইনের পক্ষে এবং ১৫টি দল পোস্টাল ব্যালটে সমর্থন জানায়।

পরে একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত অ্যাডভাইজরি কমিটি গঠন করে ইসি। গত ২৪ জুন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটি আইটি বেইজড পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালুর সম্ভাব্যতা নিয়ে ডাক বিভাগ ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফেডএক্স ও ডিএইচএল প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভোট দিতে আগ্রহীদের পোস্টাল ব্যালট পাঠানো ও ভোট শেষে তা ফেরত আনার বিষয়ে প্রতিনিধিরা মতামত তুলে ধরেন।

ডাক বিভাগ থেকে জানানো হয়, ডাক বিভাগের ইএমএস/রেজিস্টার্ড সার্ভিসে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো এবং ফেরত আনতে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ব্যয় হতে পারে। আর বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলো জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘পোস্টাল ব্যালট সার্ভিস’ চালু করলে ভোটার প্রতি গড়ে ৪০-৪৫ ডলার (প্রায় ৫ হাজার টাকা) ব্যয়  হতে পারে।

এছাড়া প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোস্টাল ব্যালট প্রেরণ এবং সংগ্রহের আনুমানিক খরচের তথ্য চেয়ে বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠিও দিয়েছে ইসি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ এক্সপ্রেস কোম্পানি লিমিটেড, মার্ক লাইন এন্টারপ্রাইজ এবং ডিএইচএল ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেস (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড।

ইসির তথ্য ব্যবস্থাপনা অধিশাখার সিস্টেম এনালিস্ট মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে গত ২৫ জুন পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যালট পেপারের ওজন হবে ১২ গ্রাম এবং প্যাকেটসহ আনুমানিক ওজন ৫০ গ্রাম। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এর আলোকে খরচের হিসাব পাঠাবে। ব্যয় সমন্বয়সাপেক্ষে ইসি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

এ বিষয়ে ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার সমকালকে বলেন, প্রবাসীদের ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়- তা নিয়ে পর্যালোচনা করছে। সব মিলিয়ে অনলাইনে সীমিত পরিসরে পাইলটিং করার বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব স প রব স দ র ভ ট গ রহণ র র জন য প রক স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন

সময়ের আলোচিত রাজনৈতিক নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী হয়েছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নিয়ে এই সংসদীয় আসন গঠিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ এই আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন পেলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ফজলুর রহমান

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

পরিবর্তীত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির অসুস্থ চেয়ারপারসন এবং লন্ডনে অবস্থান করা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সালাহউদ্দিন আহমেদ। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চলমান আলোচনায় তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গেছে।

ঢাকা/তারেক/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ