নিম্নচাপ কেটে যাওয়ার পরও উত্তাল বঙ্গোপসাগর। প্রবল জোয়ার আছড়ে পড়ছে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উপকূলে। জোয়ারের আঘাতে দ্বীপের বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়েছে। পাশাপাশি সৈকতসংলগ্ন ১১টি হোটেল-রিসোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো রিসোর্টের সীমানাদেয়াল, কোনোটির আঙিনা, আবার কোনোটির ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢেউয়ের আঘাতে।

আজ সোমবার দুপুরে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১-৩ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন অংশের গাছপালা ও হোটেল রিসোর্টের প্রতিরক্ষার দেয়াল ও কক্ষ ভেঙে পড়েছে। দ্বীপের বিভিন্ন স্থান দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। এমন ভাঙন এর আগে দেখেনি দ্বীপবাসী। ঢেউয়ের আঘাতে ১১টির মতো হোটেল-রিসোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সেন্ট মার্টিনের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন দিনে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে বড় বড় ঢেউ দ্বীপের সৈকতে আঘাত হেনেছে। হোটেল-মোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এতে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে।

ক্ষতির শিকার হোটেল-রিসোর্টগুলো হলো হোটেল অবকাশ, নোনাজল বিচ রিসোর্ট, আটলান্টিক রিসোর্ট, বিচ ক্যাম্প রিসোর্ট, নীল হাওয়া বিচ রিসোর্ট, শান্তিনিকেতন বিচ রিসোর্ট, মেরিন বিচ রিসোর্ট, পাখি বাবা রিসোর্ট, সি-ভিউ রিসোর্ট, ড্রিমার্স প্যারাডাইস রিসোর্ট ও সানডে বিচ রিসোর্ট।

সেন্ট মার্টিন উত্তর সৈকতের ড্রিমার্স প্যারাডাইসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হোটেলের প্রতিরক্ষাদেয়ালের পাশাপাশি কর্মচারীদের রেস্টহাউসের সেমিপাকা টিনশেড ভবনের কক্ষ জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেঙে গেছে। শুধু তা–ই নয়, উত্তর ও পশ্চিম সৈকতে আরও কয়েকটি হোটেল-রিসোর্টের প্রতিরক্ষাদেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হলেও সেন্ট মার্টিনে আইন অমান্য করে বহু হোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে বলে পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে সরকার প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে এই ইসিএ এলাকায় শুধু আবাসিক হোটেল নির্মিত হয়েছে দুই শর ওপরে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আদালত আদেশ দিলেও কার্যকর করা হয়নি।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনে জোয়ারের পানির আঘাতে বেশ কয়েকটি হোটেল-রিসোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমরা দেখছি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ