সমুদ্রের স্রোতের গতি কমে যাচ্ছে, বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের
Published: 4th, August 2025 GMT
ধীরগতির সমুদ্রস্রোতের কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল শুকিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে আগামী কয়েক দশকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের কিছু আর্দ্র এলাকা নাটকীয়ভাবে শুকিয়ে যেতে পারে। এমনকি আমাজনের মতো জায়গায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ধীরগতির সমুদ্রের স্রোত নিয়ে গবেষণা করছেন। আটলান্টিক মেরিডিয়োনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন বা অ্যামক নামের স্রোতের সামান্য ধীরগতি বা দুর্বলতার কারণে বিশ্বব্যাপী বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এতে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক অবস্থা বিপন্ন হতে পারে। লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।
বিজ্ঞানী পেদ্রো ডিনেজিও জানান, সমুদ্রের স্রোতের গতি কমে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে আমাজন রেইনফরেস্টের কিছু অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। অ্যামক স্রোত একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা। এই স্রোতের মাধ্যমে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে উত্তর আটলান্টিকে উষ্ণ ও লবণাক্ত পানির সঞ্চালন হয়। এই প্রবাহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই স্রোত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টির বলয়কে ধরে রাখে। বিষুবরেখার কাছে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা কারণে সমুদ্রের স্রোত ধীর হচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণে বৃষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রের পৃষ্ঠের পানিতে কম লবণাক্ত ও কম ঘন হয়ে যেতে পারে। এই পরিবর্তন অ্যামক স্রোতকে ধীর করে দিতে পারে। আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে সরাসরি এই স্রোত পর্যবেক্ষণ করে আসছি। স্রোত পরিবর্তনের প্রাথমিক লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।
সমুদ্রের স্রোতের গতি কমে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে, তা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী ডিনেজিও বলেন, কয়েক বছর আগে পর্যবেক্ষণের সময় স্রোতের গতি হ্রাস রেকর্ড করা হয়েছে। এখন আবার ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় ১৭ হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক অ্যামক স্রোত ধীর হয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনা বিভিন্ন হ্রদের তল ও সমুদ্রের পলি পরীক্ষা করে জানা যায়। অতীতের সেই ঘটনার সঙ্গে বর্তমানের তথ্য জলবায়ু মডেলের মাধ্যমে তুলনা করা হচ্ছে। অ্যামক দুর্বল হয়ে পড়লে উত্তর আটলান্টিক ঠান্ডা হয়ে যায়। সেই শীতলতা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আটলান্টিক ও ক্যারিবিয়ানের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে মিলিত হয়ে সেই স্রোত মধ্য আমেরিকা, আমাজন ও পশ্চিম আফ্রিকায় বৃষ্টির তীব্রতা হ্রাস করে।
বিজ্ঞানী ডিনেজিও বলেন, স্রোত ধীর হওয়ার একটি খারাপ খবর। আমাদের আমাজনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। আমাজন প্রায় দুই বছরের সমান বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কার্বন নির্গমণকে সঞ্চয় করে। এই অঞ্চলে খরা দেখা গেলে বিপুল পরিমাণে কার্বন বায়ুমণ্ডলে চলে যেতে পারে। এতে একটি ভয়াবহ চক্র তৈরি হতে পারে। তখন দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে।
সূত্র: আর্থ ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র ত র গত আটল ন ট ক ধ রগত করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে ঈদগাহ মাঠে ‘মেলা’ আয়োজন ঘিরে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশঙ্কা
রূপগঞ্জে ঈদগাহ মাঠে বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে ফুসে উঠেছে স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসী। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা মুসল্লিদের মানববন্ধন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি।
দীর্ঘদিনের ধর্মীয় পবিত্রতার প্রতীক দড়িকান্দি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে গান-বাজনা, আনন্দমেলা আর অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ায় ধর্মপ্রাণ মানুষদের মাঝে নেমে এসেছে চরম ক্ষোভ। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছেন এই পবিত্র স্থানে মেলা নয়, যেন চলছে ধর্মের উপর প্রকাশ্য আঘাত।
ঈদগাহের পবিত্রতা রক্ষায় অবিলম্বে মেলা বন্ধ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে শুক্রবার (১ আগস্ট) জুমার নামাজের পর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেছে শতাধিক মুসল্লি ও স্থানীয় এলাকাবাসি। এসময় দ্রুত মেলা বন্ধের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃক্ষ মেলা নাম দিয়ে প্রচার চালানো হলেও পহেলা আগস্ট মাঠে শুরু হয় তথাকথিত “রূপগঞ্জ কৃষি ও কুটির শিল্প মেলা। অথচ ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র না আছে কৃষি, না আছে কুটির শিল্প। চোখে পড়ে বাহারি সাজসজ্জা, বেপরোয়া গান-বাজনা, উচ্ছৃঙ্খল যুবক-যুবতী, প্রেমিক যুগলের অবাধ বিচরণ এবং দোকানপাটে চলছে বাণিজ্যিক বিনোদনের নামে নানা অপকর্ম।
স্থানীয়রা বলেন, এমন পরিবেশ শুধু ঈদগাহের পবিত্রতাকেই অপমান করছে না, বরং ইসলামি সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধকেও চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
মেলার প্রতিবাদে মানববন্ধনের আগে এক মুসল্লির জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পাশের মাদ্রাসা মাঠে। ঈদগাহ দখল থাকায় মুসল্লিদের স্থান সংকট ও বিশৃঙ্খলার শিকার হতে হয়। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন উপস্থিত জনতা।
অভিযোগ রয়েছে, এই মেলার জন্য কোনো বৈধ অনুমতি নেই। তবুও একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে আয়োজকরা। মেলার পেছনে উপজেলার শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কনক ও তার অনুসারীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করা হলে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠবে। তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অবিলম্বে মেলা বন্ধ করে মাঠের পবিত্রতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এই ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু বলেন, ঈদগাহে মেলার ব্যাপারে কনক নামে এক ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিলো । কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ঈদগাহ্ মাঠে মেলা হবে শুনে আমি কোন সমর্থন করিনি মেলার সাথে আমি এবং আমার দলের জড়িত না। কেউ যদি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে করে থাকে তাহলে এই বিষয়ে আমার জানা নেই।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, মেলার অনুমতির জন্য আমার কাছে আবেদন নিয়ে আসছিল কনক নামে এক ব্যক্তি।
আমি আবেদনটি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে মেলা বন্ধের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুসল্লীরা মানববন্ধন করেছে বলে আমি শুনেছি বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি ।