মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কুস্তা এলাকায় ইছামতি নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অচল পড়ে আছে। ২০০২ সালে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ হয়। এরপর নদীভাঙন ও বন্যায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর পশ্চিম পাশের একটি বড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর পূর্ব পাশের দুটি পাটাতন ধসে অচল হয়ে পড়েছে।

আরো পড়ুন:

বান্দরবানে ভাঙা সেতুতে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো  

অবশেষে গ্রামবাসীর টাকা-শ্রমেই তৈরি হচ্ছে সেতু

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ দিনেও সেতুর কোনো ধরনের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ হয়নি। ফলে গ্রামবাসী নিজেরাই ভাঙা সেতুর উপরে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে কোনোরকমে চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন।

এই বাঁশের সাঁকোয় প্রতিদিন কুস্তা, ঠাকুরকান্দি, ভররা, বিনোদপুর, খলসী, কুমুরিয়া, বনগাঁও, নারচি ও জিয়নপুর ইউনিয়নের অন্তত ১২-১৪ গ্রামের হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। শিশু থেকে বয়স্ক, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হচ্ছেন প্রতিদিন এই বিপজ্জনক পথ ব্যবহার করতে।

কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা প্রকাশ দাশ বলেন, “আমরা অনেকবার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কাজটি হয়নি। কয়েক বছর আগে গ্রামের মানুষ নিজেরা টাকা তুলে বাঁশের সাঁকো বানিয়েছিল। এখন সেটিও ভেঙে নাজুক হয়ে গেছে। প্রতিদিন জানমালের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পারাপার করতে হচ্ছে।”

একই গ্রামের নিতিশ দাশ বলেন, “বন্যার সময় দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। তখন নদীর স্রোত এতটাই তীব্র থাকে যে সাঁকোর উপর দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে। অনেক সময় স্কুলের বাচ্চারা পানিতে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার উপক্রম হয়।”

ঘিওর হাটের ব্যবসায়ী শফিক দেওয়ান জানান, শুধু সাধারণ যাত্রী নয়, ব্যবসায়ীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। কারণ পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পারায় খরচ বেড়ে যায়।

হিমেল সুলতান বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা ও শিক্ষা-চিকিৎসার সঙ্গে সেতুটি সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। এ সেতু নির্মাণে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করি।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘‘সেতুটি পরিদর্শন করেছি। এটি এখনই ভেঙে নতুন করে নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

ঢাকা/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ