টিউলিপ বিনা মূল্যে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখেছেন, সঙ্গে ভাই-বোন ও আ.লীগের এমপি
Published: 11th, January 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বিনা মূল্যে স্টেডিয়ামে বসে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ উপভোগ করেছেন। খেলা দেখার সময় সঙ্গে তাঁর ভাই-বোনও ছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সংসদ সদস্য তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
শনিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছিল। টেলিগ্রাফের হাতে আসা একটি ছবিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওই বিশ্বকাপের একটি ম্যাচে দর্শক হিসেবে টিউলিপকে দেখা গেছে। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাই–বোন ও আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।
টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। ওই দিনই তিনি পালিয়ে ভারতে যান। তাঁর আমলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার, গোপনে বন্দী করে রাখা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন নাবিল আহমেদ। ৫ আগস্টের পর তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে শোনা যায়।
সরকারি নথিপত্রের বরাতে টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, স্টেডিয়ামে বসে ২০১৯ বিশ্বকাপের দুটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছিলেন লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। দুপুরের খাবারসহ প্রতিটি ম্যাচের টিকিটের দাম ছিল ৩৫৮ দশমিক ৮০ পাউন্ড (প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার টাকা)। ২০১৯ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডনের ওভাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেই ম্যাচ ও এক মাস পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্য লর্ডসে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি দেখেন টিউলিপ ও অন্যরা।
এর আগে টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন লেবার পার্টির নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার নেতা–কর্মীরা। দেশটিতে আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে টিউলিপের বসবাস নিয়েও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের জেরে তাঁর ওপর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের চাপ বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশে ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিক, তাঁর খালা শেখ হাসিনা, মা শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মাসে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।
আরও পড়ুনটিউলিপকে লন্ডনে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট দেন আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী০৩ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনএবার লন্ডনে টিউলিপের বোনকে দেওয়া বিনা মূল্যের ফ্ল্যাটের সন্ধান০৫ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনযুক্তরাজ্যে কিয়ার স্টারমারের পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা০৯ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনটিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের চাপ বাড়ছে০৬ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা