যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বিনা মূল্যে স্টেডিয়ামে বসে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ উপভোগ করেছেন। খেলা দেখার সময় সঙ্গে তাঁর ভাই-বোনও ছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সংসদ সদস্য তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।

শনিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছিল। টেলিগ্রাফের হাতে আসা একটি ছবিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওই বিশ্বকাপের একটি ম্যাচে দর্শক হিসেবে টিউলিপকে দেখা গেছে। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাই–বোন ও আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।

টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। ওই দিনই তিনি পালিয়ে ভারতে যান। তাঁর আমলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার, গোপনে বন্দী করে রাখা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন নাবিল আহমেদ। ৫ আগস্টের পর তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে শোনা যায়।

সরকারি নথিপত্রের বরাতে টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, স্টেডিয়ামে বসে ২০১৯ বিশ্বকাপের দুটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছিলেন লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। দুপুরের খাবারসহ প্রতিটি ম্যাচের টিকিটের দাম ছিল ৩৫৮ দশমিক ৮০ পাউন্ড (প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার টাকা)। ২০১৯ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত  ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডনের ওভাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেই ম্যাচ ও এক মাস পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্য লর্ডসে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি দেখেন টিউলিপ ও অন্যরা।

এর আগে টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন লেবার পার্টির নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার নেতা–কর্মীরা। দেশটিতে আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে টিউলিপের বসবাস নিয়েও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের জেরে তাঁর ওপর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের চাপ বাড়ছে।

এদিকে বাংলাদেশে ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিক, তাঁর খালা শেখ হাসিনা, মা শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মাসে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।

আরও পড়ুনটিউলিপকে লন্ডনে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট দেন আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী০৩ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনএবার লন্ডনে টিউলিপের বোনকে দেওয়া বিনা মূল্যের ফ্ল্যাটের সন্ধান০৫ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনযুক্তরাজ্যে কিয়ার স্টারমারের পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা০৯ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনটিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের চাপ বাড়ছে০৬ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • গোলাম রাব্বানীর ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ