দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনেকে সংশয়ী হলেও কোনো সংশয় নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

আজ সোমবার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, অবশ্যই নির্বাচন করার মতো পরিবেশ আছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে এই মতবিনিময় ও প্রাক্‌–প্রস্তুতিমূলক সভা হয়। তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানসহ সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বৈঠকে কেউ কোনো আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কি না, এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের কারও মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। বরং সবাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরোত্তর উন্নতি আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইসি সচিবও বলেন, পরিস্থিতির আরও উন্নতির জন্য এমন আলোচনা চলমান থাকবে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর ইসিও তাদের প্রস্তুতি শুরু করে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে নানা মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। তার পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসির সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আজ আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠকে বসে ইসি। সেখানে ১৩টি বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে জানান জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। এর মধ্যে ছিল ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সমন্বয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ, বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা, ডাকযোগে ভোটের (পোস্টাল ভোট) ব্যবস্থাপনা, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা, পার্বত্য এলাকায় নির্বাচনী সরঞ্জাম পরিবহন, হেলিকপ্টার সহায়তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো।

ইসি সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পাঁচ দিনের পরিবর্তে আট দিন মাঠে রাখার প্রস্তাব এসেছে—নির্বাচনের আগে তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং পরবর্তী চার দিন। বিষয়টি তাঁরা যাচাই করবেন। এআই প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গাপূজার সময় এনটিএমসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সফলভাবে ৩৫ হাজারের বেশি মণ্ডপ মনিটর করা হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা নির্বাচনে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ইসি সচিব জানান, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নির্বাচনী সামগ্রী পরিবহনসহ দুর্গম এলাকায় সহায়তা দেবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে কি না, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।

সব বাহিনী তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে বলে বৈঠকে জানানো হয়, যাতে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও সমন্বয় বাড়ে। নির্বাচনী তদারকি বাড়াতে বডি-ওর্ন ক্যামেরা, ড্রোনসহ আধুনিক মনিটরিং ব্যবস্থাও থাকবে।

নির্বাচনে দেড় লাখ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক জানান। সবচেয়ে বড় বাহিনী হিসেবে থাকছেন আনসার ও ভিডিপির সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ সদস্য।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাজেট প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, এখনো বাজেট নির্ধারণ করা হয়নি, তবে প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার খরচসহ প্রতিটি সংস্থা প্রস্তাব দেবে। ধাপে ধাপে আলোচনা করে বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।

ইসি সচিব জানান, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় ড্রোন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করবে।

লুট হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, সভায় জানানো হয়েছে, লুট হওয়া ৮৫ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলোর জন্য কাজ চলমান।

আখতার আহমেদ সবশেষে বলেন, আজকের সভা ছিল প্রস্তুতিমূলক। এটা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। তাঁরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। তাঁদের লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

সভায় সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, নৌবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, বিমানবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম অংশ নেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো.

জিয়াউল হক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, র‍্যাব হেডকোয়ার্টার্সের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জি এম আজিজুর রহমান ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্লাহও ছিলেন সভায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখত র আহম দ ব যবহ র কর রক ষ ক র পর স থ ত প রস ত এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

বিমানবন্দরের আগুন নেভাতে গিয়ে আহত ১৪ জন সিএমএইচে

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ সদস্যকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 

রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিমানবন্দরে আগুনে এখন পর্যন্ত বিমানবাহিনীর একজন, ফায়ার সার্ভিসের তিনজন, পুলিশের একজন, আনসারের ১০ জন সদস্য সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।

আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আইএসপিআর জানায়, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। 
আইএসপিআর আরো জানায়, গতকাল আনুমানিক দুপুর আড়াইটায় হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তে আগুন বিকট আকার ধারণ করলে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে অগ্নিনির্বাপন এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া, আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। 

কার্গো ভিলেজে রক্ষিত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ আগুনের মাত্রা কে তীব্রতর করে দেয়। অগ্নি নির্বাপনকালে রাসায়নিক পদার্থের ধোঁয়া ও আগুনের তীব্রতায় ১০ জন আনসার সদস্য, ৩ জন ফায়ার ফাইটার এবং ১ জন পুলিশ সদস্য প্রবল শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সিএমএইচ ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। যেকোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে থেকে সহায়তা প্রদান করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে সেনা-পুলিশ মিলিয়ে ৮ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে
  • আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছি—উনি এটা প্রমাণ করুক: এ কে আজাদ
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক
  • ‘আমার সন্তানের মতো কোনো শিশু বাবাহারা না হোক’
  • সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সোমবার
  • বিমানবন্দরের আগুন নেভাতে গিয়ে আহত ১৪ জন সিএমএইচে
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্চ লাইট জ্বালিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩০
  • লালন উৎসবে লাখো মানুষের ভিড়