মরুর বুকে আরব্য রজনীর রূপকথার মতো ঘুরে দাঁড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করল বার্সা। জেদ্দায় খেলা শুরুর ৫ মিনিটে এমবাপ্পে দারুণ ১ গোল করে বসলে আনন্দের শিহরণ বয়ে গিয়েছিল রিয়াল শিবিরে।
লা লিগার বদলা সুপার কাপের ফাইনালে নেওয়ার পুলক অনুভব শুরু করেছিলেন তারা। কিছুক্ষণের মধ্যে ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় সবকিছু। রূপকথার গল্পের মতো রিয়ালের জালে গোলের বন্যা বইয়ে দেন ইয়ামাল-রাফিনিয়ারা। ৫-২ গোলে রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ১৫তম বারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে নিয়েছে বার্সা।
এল ক্ল্যাসিকোর ১২৩ বছরের ইতিহাসে দুই দল এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি মোট ২৫৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে গোলবন্যা অনেকবারই হয়েছে। কিন্তু কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল এল ক্ল্যাসিকোতে ৭ গোল এবারই প্রথম। রোববার রাতে জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে রেকর্ডের পথে বার্সার পথচলা শুরু হয় লামিনে ইয়ামালের হাত ধরে। অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে ৫ মিনিটে গোল করে বসেছিলেন এমবাপ্পে। ২২ মিনিটে রিয়ালের তিন ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে যাদুকরী এক শটে জালে বল জড়িয়ে দেন ইয়ামাল।
গোলমুখ খুলতেই বানের জলের মতো রিয়ালের রক্ষণে আছড়ে পড়তে শুরু করে বার্সা। প্রথমার্ধেই ৪-১ গোলে এগিয়ে যায় তারা। ৩৬ মিনিটে গাভিকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেওয়ায় পেনাল্টি থেকে গোল করেন লেভানডস্কি। ৩ মিনিট পর রাফিনিয়ার দারুণ হেড আশ্রয় নেয় রিয়ালের জালে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আলেজান্দ্রো বালদে ব্যবধান আরও বাড়ান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাফিনিয়া ব্যবধান ৫-১ করেন। এর পর ৫৬ মিনিটে বার্সার গোলরক্ষক শেজনি এগিয়ে এসে এমবাপ্পেকে ফেলে দিলে লাল কার্ড পান। ওই ফ্রি কিকে গোলও করেন রদ্রিগো। কিন্তু বাকি ৪৩ মিনিট ১০ জনের বার্সাকে পেয়েও কিছুই করতে পারেনি রিয়াল।
গত অক্টোবরে বার্সা বস হ্যান্সি ফ্লিক রিয়ালকে পর্যুদস্ত করেছিলেন হাইলাইন ডিফেন্স কৌশলে। এবার রিয়াল ধরা খেয়েছে রক্ষণ দুর্বলতায়। চোটের কারণে রক্ষণভাগের বেশ কয়েকজন মাঠের বাইরে থাকায় রুডিগারের সঙ্গে মিডফিল্ডার চুয়েমেনিকে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলান রিয়াল বস কার্লো আনচেলত্তি। ‘মেকশিফট’ রক্ষণ দেখেই পজিশন ভিত্তিক ফুটবলে যান ফ্লিক। এবারও জার্মান এ কোচের কৌশলের সামনে দাঁড়াতে পারেনি রিয়াল। আর অসংখ্য ভুলও করে রিয়ালের রক্ষণ। দানি কারভাহাল না থাকায় রক্ষণের ডানপ্রান্তটা প্রায়ই উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল। এই সুযোগই কাজে লাগান রাফিনিয়া ও বালদে।
রিয়ালের আক্রমণভাগের প্রধান ভরসা বেলিংহাম। ক্যাসাদো তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখায় ভিনিসিয়ুসও বলের জোগান পাননি। রিয়ালের এসব ভুল আনচেলত্তির চোখে ভালো মতেই ধরা পড়েছে, ‘আমরা ওপরে উঠে চাপ দেওয়ার এবং নিচে নেমে রক্ষণ দেয়াল তৈরির চেষ্টা করেছিলাম.
হতাশ আনচেলত্তি আরও বলেন, ‘এটা বাজে একটি রাত। সমর্থকদের মতো আমরাও হতাশ। আমাদের এটা আড়াল করা উচিত হবে না। এটাই ফুটবল।’ আর দারুণ জয়ে গর্বিত বার্সা বস ফ্লিক, ‘সত্যিই আজ আমি অনেক গর্বিত। অবিশ্বাস্য একটি ম্যাচ হলো। সমর্থকদের জন্য ভীষণ ভালো লাগছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে নতুন করে শুরু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সোমবার সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।