আলোচনা

কামাল আহমেদ

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক;

প্রধান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন

গণ–আন্দোলনের মাধ্যমে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটার পর দেশ ও জাতির মধ্যে একটা বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল যে সত্যিই একটা বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পাব। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও সে রকমই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। দেশে একটা অত্যন্ত ভাইব্রেন্ট মিডিয়া আমরা তৈরি করতে পারব, যা গণতন্ত্রকে সাহায্য ও সমৃদ্ধ করে। আশা ছিল, আমরা সাংবাদিকেরা মন খুলে, কলম খুলে লিখব। কিন্তু এখন কী হচ্ছে, একটা ‘মব–ভীতি’। এই মবের ভীতি কেন থাকবে? কারণটা হচ্ছে, সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি যেমন, ঠিক তেমনি এটা ঠেকানোরও চেষ্টা নেই।

গণমাধ্যম সংস্কারের জন্য যখন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আমরা ঠিক করেছিলাম যে আমরা একতরফাভাবে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেব না। আমরা চেয়েছিলাম, অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে এই সংস্কারের সুপারিশমালা তৈরি করতে। এ জন্য আমরা মালিক, সম্পাদকসহ শিল্পের প্রধান অংশীজন এবং পাঠক ও দর্শকদের মতামত জানার জন্য জাতীয় জনমত সমীক্ষা করেছি। প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের মতামত সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য ও মতামতের ওপর ভিত্তি করেই আমরা সংস্কারের সুপারিশমালা তৈরি করেছি।

গণমাধ্যম সুপারিশমালায় আমরা মূলত গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের রূপান্তরের পর্যালোচনা করেছি। প্রথমে প্রিন্ট মিডিয়া, পরে টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন, সর্বশেষ মাল্টিমিডিয়া—এই রূপান্তর ও সাংবাদিকতার গুণগত পরিবর্তন আমরা বিশ্লেষণ করেছি। সম্পাদকীয় চ্যালেঞ্জগুলো এবং গণমাধ্যমশিল্পের আর্থিক দিকও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছি। গণমাধ্যম তখনই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, যখন তারা অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হবে। সব সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের সাংবাদিকতার নূন্যতম মান, মর্যাদা, পেশার মর্যাদা বজায় রাখার জন্যে অন্তত এখানে নূন্যতম একটা ডিসেন্ট বেতন–ভাতা নিশ্চিত করা দরকার। কমিশন থেকে সেটাও আমরা সুপারিশ করেছি।

আমরা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে সুপারিশগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। গত মার্চ মাসে সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আমাদের বলা হলো যে আশু করণীয় ঠিক করে দেন, যেগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই করে দিলাম সেটা। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, অন্তত আশু করণীয়গুলোর ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগী হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো যে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়নি।

কমিশন থেকে সাংবাদিকতার সুরক্ষা আইন করার জন্য বলেছিলাম। যাতে আইনের কাজটা খুব দ্রুতগতিতে সরকার করতে পারে, সে জন্য একটা খসড়াও তৈরি করে দিয়েছিলাম। সরকার যদি জনমত নেওয়ার জন্য তা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দিত, তাহলে ভালো হতো। কিন্তু দেখা গেল, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁদের নিজেদের মধ্যে ওটার মূল্যায়ন করার একটা উদ্যোগ নিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছেন। মূল্যায়ন করে তাঁরা যে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছেন, তাতে আর ওই আইন না করাই ভালো। কারণ, ওই আইন করার যে উদ্দেশ্য ছিল, সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি খর্ব করে তাঁরা এই নাম অপব্যবহার করে একটা আইন করতে চাইছেন।

আমরা যতগুলো বিষয়ের পরামর্শ দিয়েছিলাম, সেগুলোর কোনোটার ক্ষেত্রেই কোনো অগ্রাধিকার লক্ষ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে অনেকবার আমরা সরকারের তরফ থেকে বক্তব্য শুনেছি। বিশেষ করে তথ্য উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন যে তাঁরা এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।

আমরা বলেছিলাম যে সরকার যদি রাষ্ট্রীয় পরিচালনাধীন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যে দুটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান—বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার—এ দুটির স্বায়ত্ত্বশাসন না দেয়, এটাকে যদি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করে, তাহলে এটা আবারও অপব্যবহৃত হবে রাজনৈতিক কারণে, রাজনৈতিকভাবে দলীয় স্বার্থে। আমরা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) কথা বলেছিলাম, এদের লোকবলের চাহিদা ছিল ৬৫ জন, কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক স্বার্থে ৯৯ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার মানে, এক–তৃতীয়াংশ উদ্বৃত্ত জনবল ছিল সেখানে। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, অন্তবর্তী সরকারের আমলে সেখানে আরও ৪৫ জন নিয়োগ পেয়েছেন!

আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো, যারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে, তারা যেন গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে, যাতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।

মাহ্ফুজ আনাম

সম্পাদক, দ্য ডেইলি স্টার;

সভাপতি, সম্পাদক পরিষদ

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যে প্রস্তাবটি আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি সেটা হচ্ছে, ‘স্বাধীন মিডিয়া কমিশন’ গঠন। এখানে যে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন হবে, এটা থেকে আমরা স্বাধীন সাংবাদিকতার দিকে যেতে পারব। আমার অনুরোধ থাকবে যে ভবিষ্যতে যাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা যেন এই প্রস্তাব খুবই জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করেন এবং সেদিকে পদক্ষেপ নেন।

দ্বিতীয়ত, আমাদের সংবাদমাধ্যম কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংঘাতিকভাবে দায়বদ্ধ। যত দিন এই দায়বদ্ধতা থাকবে এবং ক্রমাগত না কমবে, তত দিন স্বাধীন সাংবাদিকতার সত্যিকারের বিকাশ খুবই কঠিন হবে।

বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। যত দিন পর্যন্ত সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করে বিভক্ত থাকবে, তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতা হবে না।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার কতদূর আগ্রহী হবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমি মনে করি যে সাংবাদিকেরা নিজেরা, অর্থাৎ সাংবাদিক, সম্পাদক ও সংবাদপত্রের মালিকেরা—আমরা নিজেরা যেন আরও বেশি আমাদের স্বার্থের বিষয়ে সচেতন হই এবং আমরা নিজেরা আমাদের নিজের কতগুলো আদর্শিক জায়গাকে দৃঢ় করি।

জবাবদিহি যদি সরকারের কাছে থাকে, তাহলে সাংবাদিকতার বিকাশ কঠিন। পাঠক, দর্শক ও শ্রোতার কনফিডেন্স অর্জন করা হচ্ছে সাংবাদিকের মূল কাজ। সাংবাদিকতার এথিক্স, সম্পাদকের এথিক্স, মালিকের এথিক্স; মালিকের কোথায় অধিকার কতটুকু থাকবে, কতটুকু থাকবে না; সম্পাদকের কী দায়িত্ব এবং সাংবাদিকদের কী দায়িত্ব, তা নিজেদেরই ঠিক করে নিতে হবে।

গীতি আরা নাসরীন

অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;

সদস্য, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন

শিক্ষক হিসেবে দুর্ভাগ্য হচ্ছে, ক্লাসে যখন শিক্ষার্থীদের বই বা প্রবন্ধ পড়তে দিই, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তা পড়েন না। ঠিক তেমনি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ক্ষেত্রেও দেখলাম যে আমরা বহুজনের সঙ্গে মতবিনিময় করে একটা প্রতিবেদন তৈরি করলাম, এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলাপও করলাম, কিন্তু অনেকের কথা শুনেই বোঝা যায় যে তাঁরা প্রতিবেদনে আসলে কী বলা হয়েছে, এটা পড়েননি বা আংশিক পড়েছেন। সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে যে আশ্বাস আমরা পেয়েছিলাম, তা–ও বাস্তবে রূপ পায়নি।

অডিয়েন্স হিসেবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, মিডিয়া দায়বদ্ধতার পরিচয় দিচ্ছে না। মিডিয়াকে একই সঙ্গে মুক্ত ও দায়বদ্ধ রাখার জন্য কমিশনের সুপারিশের মধ্যে ছিল, একটি স্বাধীন কমিশন তৈরি। আরেকটি ছিল, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা। সম্প্রতি আমরা সংবাদকক্ষের মানুষদের আত্মহত্যার খবর পাচ্ছি। জীবনযাপনে অনিশ্চিত থাকলে সংবাদকক্ষ থেকে আমরা ‘সাংবাদিকতা’ আশা করি কীভাবে?

আমরা আশা করব, নির্বাচনের আগেই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে মিডিয়া জগতের পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। কাজ যা বাকি থাকবে, তা রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবে। আমি তাদের কাছ থেকে পরিষ্কারভাবে এই অঙ্গীকার দেখতে চাই, স্পষ্টভাবে জানতে চাই, সংবাদমাধ্যমকে তারা কোন জায়গায় রাখতে চায়। তাদের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও থাকতে হবে। সেই কবে থেকেই তো বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন কিন্তু করতে দেখা যায়নি।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁরা পরিবর্তন আনতে সক্রিয় না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

এ কে আজাদ

সভাপতি,

নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)

শুরুতেই সংবাদপত্রের অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরি। এক কপি পত্রিকার উৎপাদন খরচ ২৫–২৮ টাকা। আমরা বিক্রি করি ১০–১২ টাকায়।

বিভিন্ন ধাপে হকারদের ৩৫ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। পত্রিকার আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন। বেসরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ খুব কম। সারা দেশের ৬০ শতাংশ পত্রিকা শুধুই সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। কিছু পত্রিকা আছে যেখানে সরকারি বিজ্ঞাপন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত থাকে। দুঃখজনক হচ্ছে, সরকারের কাছে আমাদের পাওনা ১০০ কোটি টাকার বেশি।

এখানে চারজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আছেন। আপনারা যাঁরা আগামী দিনে দেশ চালাবেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে গণমাধ্যম কমিশন গঠন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এমন একটি ধারা থাকা উচিত—সরকার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করবে, যেগুলো সত্যতা স্বীকার করে সংশোধন করবে, আর যেগুলো ভুল, সেগুলোও জানাবে। এতে সরকারের সুনাম যেমন বাড়বে, গণমাধ্যমও দায়িত্বশীল হবে।

আমি আশা করি, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অর্থনীতি ঠিক করা, আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করতে অগ্রাধিকার দেবেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অতীতের ভুল পুনরায় হওয়া উচিত নয়। অতীতের রাজনৈতিক দলগুলো যে ভুল করেছে, সেই ভুল যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব পুনরাবৃত্তি না করে, তাহলেই কিন্তু সংবাদপত্র স্বাধীনতা পাবে।

আমাদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখলে শুধু সাংবাদিকেরাই নন, ভবিষ্যতের সরকারও এর সুফল পাবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সত্যিকার অর্থে গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করে, তবেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্না

সভাপতি, নাগরিক ঐক্য

গণমাধ্যমের সংস্কার বিষয়ে আমাকে যদি বলেন আমি কী চাই, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি চাই গণমাধ্যম যাতে দেশের রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক বাস্তবতা যথাযথভাবে তুলে ধরে এবং এর মধ্যে একধরনের নির্দেশনাও থাকে।

গণমাধ্যমের মালিক ও কর্মীদের উদ্দেশে বলব, যে প্রপোজাল আপনারা দিয়েছেন, সেগুলো চালু রাখেন, চর্চা চালু রাখেন। পারলে আপনারা একটা টিম করে সব রাজনৈতিক দলের কাছে যান। গিয়ে বলেন, এটা আমাদের প্রস্তাব, আপনাদের বক্তব্য কী, এই সরকার তো কিছু করেনি এই পর্যন্ত, আপনাদের কমিটমেন্টটা কী?

শেষ পর্যন্ত সমাজের সর্বময় নিয়ন্ত্রক হলো রাজনীতি। বাকি যা–ই আছে, সাংবাদিকতা বলেন, কালচার বলেন, স্পোর্টস বলেন, সবকিছুই রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রাজনীতি যে রকম করে চলবে, সবকিছু সে রকমই চলবে। তাই আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য। রাজনৈতিক দলের প্রতি আমি বলছি, এই বিষয়ে আপনাদের কমিট করতে হবে। তাদের কাছে আমি পুরো দেশের জন্য একটা গাইডলাইন চাইতে পারি। যাতে আমার দেশ সে রকম করে একটা গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে।

আমরা চাই সরকারি বা যেকোনো অশুভ প্রভাবমুক্ত সংবাদপত্র বা মিডিয়ার জগৎ তৈরি করা হোক। এটা কারও কাছে কোনো করুণা চেয়ে হবে না, কারও কাছে সাপোর্ট চেয়ে হবে না। এটা একটা মুভমেন্ট, মানে সংবাদপত্র বা মিডিয়ার স্বাধীনতার আন্দোলন। সেই আন্দোলনকে কী রকম করে গড়ে তোলা যায়, কীভাবে জয়ী করা যায়, সেই কথা ভাবতে হবে।

গণমাধ্যমকে সরকারি বা যেকোনো অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হলে কারও কাছে করুণা চেয়ে হবে না। এর জন্য আলাদা করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

মওদুদ হোসেন আলমগীর

মিডিয়া সেলের প্রধান,

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

স্বৈরাচার মুক্তির ব্যাপারটাকে যখন একটা স্বপ্নের কাছাকাছি মানুষ দেখছিল, ঠিক সেই সময় কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে যে কথা বলা হয়েছে, তার ১১ নম্বর ধারায় কিন্তু তারা মিডিয়া কমিশন গঠন করার কথা আগেই বলেছে। সুতরাং মিডিয়া কমিশন গঠন করার ক্ষেত্রে আমাদের দাবি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি আমাদের একটি অঙ্গীকার।

যদি বলেন যে ম্যানিফেস্টোতে সে কথাগুলো থাকবে কি না, আপনাকে আমি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি, ম্যানিফেস্টোতে শুধু কথাগুলো থাকবে না। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা সেখানে থাকবে। কারণ, আমরা তো প্রতিটি কমিশন রিপোর্ট কিংবা ম্যানিফেস্টো—এগুলোতে সব সময় আমরা ভালো কথার ফুলঝুরি দেখতে পাই। অন্তত এবারের ম্যানিফেস্টোতে আমরা সেটির চেয়ে বাস্তবসম্মত উপায়ে পরবর্তী পর্যায়ে কোন সময় আমরা কী করতে চাই, সে কথাগুলো নিশ্চয় আমরা বলতে পারব। সেখানে মানবাধিকার হরণকারী কালাকানুনের কথাগুলো ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট অবস্থান যেমন থাকবে, ঠিক তেমনি সংবাদপত্রকে শক্তিশালী করবার জন্য আমাদের কর্মপরিকল্পনা কোন জায়গাতে আমরা কেমন করে আছি, সেটি বলার চেষ্টা আমরা নিশ্চয়ই করব।

তবে একটি কথা বোধ সবারই জানা দরকার, সেটি হচ্ছে সংবাদপত্রজগৎ কিংবা মিডিয়া–জগতের বেশির ভাগটাই কিন্তু বেসরকারি জায়গায় রয়েছে। সরকারের কাছে এই জায়গাতে ঠিক প্রাতিষ্ঠানিক অধিকারের জায়গাটা কিন্তু খুবই সীমিত। ফলে নীতিমালা, আইন, কমিশন অথবা যাই বলি না কেন, সেটিকে কিন্তু সরকার হয়তো তৈরি করতে পারবে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিপালনের দায় বা দায়িত্ব সেটি কিন্তু স্টেকহোল্ডার হিসেবে আপনাদেরই। সে বিবেচনাটাকে অগ্রাধিকারে রেখে কিন্তু ভাবনাটা ভাবতে হবে।

মতিউর রহমান আকন্দ

কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান,

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

বিগত সময়ের রাজনৈতিক দলগুলোর লিফলেট যদি সামনে আনা হয়, তাহলে দুটি বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার আছে। একটা হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা—বিচারকেরা বিচার করবেন বিবেকের তাড়নায়, আর গণমাধ্যম তাদের স্বাধীনতা ভোগ করবে—বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবে নীতি–নৈতিকতার দ্বারা তাড়িত হয়ে, কারও প্রতি বায়াসড হয়ে নয়। এটা নিশ্চিত করার কথা প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর সবাই এটা ভঙ্গ করেছে। এটাই হলো বাস্তবতা। আমরা ৫ আগস্টের পর সবাই এই প্রত্যাশায় ছিলাম যে অন্তত এবার একটু পরিবর্তন হবে। কিন্তু আজ প্রায় সবাই হতাশার সুর এখানে ব্যক্ত করেছেন।

আমি মনে করি, গণমাধ্যমের শক্তিশালী নীতিমালা হওয়া উচিত। এখানে যে সংস্কারের বিষয়গুলো আসছে সুপারিশ, আমি জানি না জুলাই সনদের ভেতরে সব বক্তব্য আছে কি না। গণমাধ্যম কীভাবে চলবে, তার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য বোধ হয় জুলাই সনদে নেই। আমরা বলছি যে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম, সংবাদপত্র। আর এই সংবাদপত্র আমাদের সংস্কারের মধ্যেই নেই।

আমি বলব যে দুটি জিনিসকে আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে। একটা হলো বিচার বিভাগ, আরেকটা গণমাধ্যম। গণমাধ্যমও একটা নীতির মাধ্যমে চলবে। এটা তাদের যে নেতৃত্বাধীন, যাদের আওতায় তারা থাকবে, তারাই এটা ঠিক করবে যে কে সীমালঙ্ঘন করল, কে বেআইনি কাজ করল—তাদের মাধ্যমে সেটা কন্ট্রোল হবে। এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা করে যেতে পারি, রাষ্ট্র শক্তিশালী হবে এবং এই দেশ বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেই প্রত্যাশাটা যেন পূরণ হয়। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে সেটা কামনা করি এবং আমরা সে ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করব, সহযোগিতা করব।

মুশফিক উস সালেহীন

যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক,

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

৫ আগস্ট (২০২৪ সালের) থেকে দেখছি মিডিয়া দখল করা শুরু হয়েছে, মিডিয়ায় রিভার্স এক ধরনের দলীয়করণ হয়েছে। যেখানে আগে একধরনের ছিল, এখন অন্য মতাবলম্বী লোকদের নিয়ে রিপ্লেস করার বিষয়টি ছিল।

গত এক বছরে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে যে আসলে পরিবর্তন বা বদল এত সহজ কিছু না। হয়তো হতাশা বা একধরনের আফসোস তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমকেন্দ্রিক পুরো বিষয়েই আমি সেটার প্রতিফলন দেখেছি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দ্রুত বাস্তবায়ন হবে—এমন কথা আমি কয়েকবার শুনেছি, কিন্তু আমি এখনো কোনো অগ্রগতি দেখিনি। এটা অবশ্যই আমার বড় হতাশার জায়গা।

এনসিপির পক্ষ থেকে আমি খুব সহজভাবে বলতে চাই, আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে, আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে এবং আমরা

গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতার পক্ষে। গণমাধ্যমের জায়গা থেকে এনসিপির

যখন সুযোগ হবে—সরকারে থেকে বা সরকারের বাইরে থেকে, সংসদে থেকে

বা না থেকে, কোনো জোটে থেকে বা না থেকে—আমি সব সময় এর পক্ষে কথা বলে যাব।

সাংবাদিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল, তা হলো গণমাধ্যমকর্মীরা যে পরিমাণ নজরদারির অধীনে থাকেন, গত ১০ বছরে আমাদের রাষ্ট্র যেভাবে একটি নজরদারি রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি হয়েছে, এর ফলে সাংবাদিকের কাজ করার সুযোগ সংকুচিত হয়েছে, নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

আমি মনে করি, গণমাধ্যমের মূল সংকট হলো কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষার অভাব। আমি মনে করি যে ন্যূনতম বেতনের কথাটা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে বলা হয়েছে, সেটির অতি জরুরি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সরকারের এ ক্ষেত্রে নীতিগত হস্তক্ষেপ যেভাবে করা দরকার, তা করা উচিত। ভবিষ্যতে যদি আমার সুযোগ আসে, আমি সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।

কামরুন্নেসা হাসান

সদস্য, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন

গণমাধ্যম বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতা কতটুকু পেয়েছি? আসলে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বলা হলেও আমরা দেখেছি, এটি একটি দলীয় প্রতিষ্ঠান। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, আমরা চাকরি করার সুবাদে বাধ্য হয়েছি সেই দলের কথা বলতে। আমরা কখনো বিরোধী দলের কথা বলার সুযোগ পাইনি। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন এসেছিল, ওই কয়েক মাস আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই কোনো রাজনৈতিক দল আসবে। তারা গণমাধ্যমকে দলীয় না রেখে গণমাধ্যমের নীতিতে চলতে দেবে—তাদের একটা নীতিমালা থাকবে। চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনের অত্যাচারে চলছে, কিন্তু কেউ কিছু বলছে না—সেখানে কোনো নীতিমালা নেই। আমি ৫ মিনিট অনুষ্ঠান দেখছি, আর ১৫ মিনিট বিজ্ঞাপন দেখছি; আমি ভুলে গেলাম কখন কী দেখেছি।

আমি মনে করি, সরকারি প্রতিষ্ঠান জনগণের টাকায় চলে। জনগণের প্রতিষ্ঠান হোক এবং তার নিজস্ব গতিতে, তার নিজস্ব ধারায় চলবে। স্বায়ত্তশাসন থাকুক বা না থাকুক, প্রতিষ্ঠানের তো একটা নিজস্বতা থাকবে। টেলিভিশনের একটা নীতিমালা থাকবে যে তাকে এই নীতিতে চলতে হবে। এটা খুবই জরুরি।

এস এম রিজওয়ান উল আলম

সমন্বয়ক ও সহযোগী অধ্যাপক, মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম,

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে গণমাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা আছে বলে মনে করেন মাত্র ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ মানুষ। কিছুটা স্বাধীনতা আছে বলেছেন ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। সহজভাবে বললে, জনগণ মনে করেন—গণমাধ্যমে প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো নেই। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২০টি ভাগে ১০৭টি সুপারিশ আছে। এর ৯৮ ভাগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠানের। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের হাতে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ মাত্র ৩০টি। এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ার একধরনের চাপ বা অত্যাচার চলছে। তবে আমি মনে করি, সঠিক নীতি ও সুস্পষ্ট ভিশন থাকলে এটি সমন্বয় করা সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়া আর মূলধারা গণমাধ্যম একেঅপরের প্রতিপক্ষ নয়—তারা আসলে পরস্পরের সহযোগী শক্তি হতে পারে।

আমি আশাবাদী, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নেতারা যদি একসঙ্গে বসে কাজ করেন এবং নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় আসেন, তাহলে গণমাধ্যম সংস্কারের বাস্তব পথ তৈরি হবে। একই সঙ্গে, ফেক নিউজ ও মিস ইনফরমেশনের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দিচ্ছে, সেখানে মিডিয়া লিটারেসির অংশ হিসেবে আমাদের অনেক কিছু করার সুযোগ আছে।

দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

সম্পাদক, বণিক বার্তা;

সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক পরিষদ

গণমাধ্যম সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও এর ফলাফল খুব কম। আমরা বারবার আদর্শের কথা বলি; কিন্তু আদর্শের কথা না বলে আমাদের সংস্কারের ব্যবহারিক জায়গায় আসতে হবে।

আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা হলো, আমরা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারছি না। ইত্তেফাক যখন জন্ম নিয়েছিল, একই সময়ে জিন্নাহ সাহেব ডন নামে একটি পত্রিকা তৈরি করেন, যা এখনো পাকিস্তানের সবচেয়ে সুখ্যাত প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো টিকতে না পারলেও পাকিস্তানে ডন সামরিক বাহিনী ও সরকারের চাপ সত্ত্বেও টিকে আছে এবং আর্থিকভাবে অনেক বেশি স্থিতিশীল। এর কারণ হলো, যাঁরা ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা এডিটোরিয়াল পলিসি তৈরি করতে পেরেছিলেন।

আর্থিকভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা খুব কম। এ কারণে সাংবাদিকদের অনেকেই সাংবাদিকতার বাইরে আরও অনেক কিছু করেন। সম্পাদকেরা অনেক কিছু করেন, যেটা তাঁর পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আদর্শগত জায়গা থেকে আমরা চিন্তা করছি। কিন্তু এই একই অসুবিধা হয়তো ডাক্তারেরও আছে, আইনজীবীরও আছে।

গণমাধ্যম কমিশন যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, এ রকম বহু কমিশন বাংলাদেশে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন কমিশনটি ঠিকমতো কাজ করে? শুধু কমিশন তৈরি করলেই যে কাজ হবে, এমনটি নয়।

রেজওয়ানুল হক রাজা

বার্তা সম্পাদক, মাছরাঙা টিভি;

সভাপতি, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)

যদি গণমাধ্যমকে ‘ফোর্থ স্টেট’ মনে করা হয়, তাহলে ফোর্থ স্টেটের ব্যাপারে যে কমিশনের রিপোর্ট, সেটা কেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিবেচনা করল না?

এরশাদের পতনের পরে যখন আমরা গণতন্ত্রের সূচনা করলাম, সেই বিএনপি সরকারের আমলের আগপর্যন্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন অভিন্ন ছিল। তারপর আমরা সাংবাদিকেরা বিভক্ত হয়ে গেলাম। শুরু হলো একটি বিএনপি-জামায়াতপন্থী ধারা, একটি আওয়ামীপন্থী ধারা, আরেকটি বামপন্থী ধারা। সেই যে বিভক্তির শুরু হলো, সেই বিভক্তি বাড়তে বাড়তে এখনকার অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও কিছুদিন আগপর্যন্ত প্রেসক্লাবে ইউনিয়নের দুটি অফিসই ছিল। ৫ আগস্টের পর একদল বিতাড়িত হয়েছে। সেই ইউনিয়ন অফিসে তালা দেওয়া। আরেক দল ভালোভাবে রয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমাদের পরিবর্তনটা তাহলে কী হলো?

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পুরো রিপোর্ট নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু এর ভালোগুলো তো বাস্তবায়ন করা যেত। গত সরকারেরকে ফ্যাসিস্টে রূপান্তরিত করার জন্য সাংবাদিকদের যে দায় ছিল, সেই দায়ের শাস্তি হিসেবে ২৫০–এর বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে অনেকে বিনা বিচারে জেলে আছেন। ১৬০ বা ১৬৫ জনের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হলো। সাংবাদিকদের একটি দলের যে অপরাধ ছিল, তা এই শাস্তি দিয়ে দূর হবে না; বরং সিস্টেমটায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল।

হাসিবুর রহমান

নির্বাহী পরিচালক,

মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বলেছে, স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করতে হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় বলছে, এতে তাদের স্বাধীনতা নষ্ট হবে, তাই প্রেস কাউন্সিলেই থাকতে হবে। কমিশনের প্রস্তাব ছিল সাংবাদিকতা, মালিকানা, আইন ও অভিযোগ নিষ্পত্তির কাঠামোগত সংস্কার—যেটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের কথা বলা হলেও, পরিবর্তনগুলো সাংবাদিকদের পক্ষে কতটা গেছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কমিশন সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা বলেছে, কিন্তু মালিকদের স্বার্থে তা উপেক্ষিত থাকে।

স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় মালিকদেরও নীতিমালা থাকা দরকার, কারণ কালো টাকা এলে সাংবাদিকতার নৈতিকতা নষ্ট হয়।স্বচ্ছতার অভাব বড় সমস্যা। অডিট রিপোর্ট প্রকাশ হয় না, সার্কুলেশন বেশি তবু লস দেখানো হয়। নিয়োগপত্রেও অস্পষ্টতা, যেখানে অনৈতিকতার সূচনা ঘটে। স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সাংবাদিক, সম্পাদক ও মালিক—সবাইকে নিয়ে গড়ে তুলতে হবে; সরকার তা করবে না। সবাইকে নিয়ে একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রয়োজন, যাতে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের চাপ বজায় থাকে।

আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে দেখতে চাই, স্বাধীন মিডিয়া কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলো যদি তা গ্রহণ করে, তাহলে গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।

অংশগ্রহণকারী

কামাল আহমেদ

প্রধান, গণমাধ্যম সংষ্কার কমিশন

মাহ্ফুজ আনাম

সম্পাদক, দ্য ডেইলি স্টার; সভাপতি, সম্পাদক পরিষদ

গীতি আরা নাসরীন

অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;

সদস্য, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন

এ কে আজাদ

সভাপতি, নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)

মাহমুদুর রহমান মান্না

সভাপতি, নাগরিক ঐক্য

মওদুদ হোসেন আলমগীর

মিডিয়া সেলের প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

মতিউর রহমান আকন্দ

কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

মুশফিক উস সালেহীন

যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

কামরুন্নেসা হাসান

সদস্য, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন

এস এম রিজওয়ান উল আলম

সমন্বয়ক ও সহযোগী অধ্যাপক, মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম,

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

সম্পাদক, বণিক বার্তা; সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক পরিষদ

রেজওয়ানুল হক রাজা

বার্তা সম্পাদক, মাছরাঙা টিভি;

সভাপতি, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)

হাসিবুর রহমান

নির্বাহী পরিচালক, মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)

সঞ্চালনা:

সাজ্জাদ শরিফ

নির্বাহী সম্পাদক, প্রথম আলো

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত র স ব দপত র র গণম ধ যমক র র জন ত ক ন শ চ ত কর গণতন ত র একধরন র আম দ র প আম দ র দ ব দ কত র র র জন য আম দ র স ব স তবত দ য়বদ ধ সরক র র ত র ওপর ৫ আগস ট র রহম ন ইশত হ র আপন দ র পরবর ত ত কর র ক জ কর কর র স দল র প ক পর ষ রক র য বল ছ ল স রক ষ য ন কর ট র পর আর থ ক ন কর র ঠ ক কর উদ য গ সদস য দরক র আদর শ র একট ন আমর র জওয ক ষমত মত মত ব এনপ সহয গ এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ