গ্রিসে ১৩ ঘণ্টা কর্মদিবসের আইন, দেশজুড়ে ধর্মঘট পালিত
Published: 20th, October 2025 GMT
গ্রিসের পার্লামেন্টে পাস হয়েছে বিতর্কিত একটি শ্রম আইন। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের বিধান রয়েছে এই আইনে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও ধর্মঘট চলছে। সরকার দাবি করছে, এই আইন গ্রিসের শ্রমবাজারকে আধুনিকায়নের অংশ। তবে বামপন্থী বিরোধী দল সিরিজা এটিকে ‘আইনগত বিকৃতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
নতুন আইনের মূল দিকনতুন আইনের অধীনে বার্ষিক অতিরিক্ত কাজের সময় ১৫০ ঘণ্টায় সীমিত থাকবে। মূল ৪০ ঘণ্টার সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা অপরিবর্তিত থাকলেও কর্মীদের ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের সুযোগ থাকবে। তবে এটি বছরে সর্বোচ্চ ৩৭ দিন পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে এবং শুধু বেসরকারি খাতে কার্যকর হবে।
বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছে ক্ষমতাসীন কেন্দ্র-ডানপন্থী নিউ ডেমোক্রেসি দল আর বিরোধিতা করেছে কেন্দ্র-বাম পিএএসওকে দল। অন্যদিকে সিরিজা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকে।
আরও পড়ুনবিমানবাহিনীতে বেসামরিক পদে বিশাল নিয়োগ, পদ ৩০৮৩ ঘণ্টা আগেদেশজুড়ে প্রতিবাদআইনটির বিরুদ্ধে শ্রমিক সংগঠনগুলো চলতি মাসে দুটি সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে, যা জনপরিবহন ও সরকারি সেবা কার্যত অচল করে দেয়। শ্রমমন্ত্রী নিকিকেরামুইস বলেন, এই আইন আধুনিক শ্রমবাজারের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কর্মীরা চাইলে অতিরিক্ত সময় কাজ করে ৪০ শতাংশ বেশি মজুরি পেতে পারবেন। পাশাপাশি, কেউ অতিরিক্ত কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।
সরকার আরও জানিয়েছে, এই আইন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শ্রম সময়সংক্রান্ত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইইউ নিয়ম অনুযায়ী গড়ে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা (অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিকসহ) কাজ করা যেতে পারে, যা ১২ মাসের ভিত্তিতে নমনীয়ভাবে হিসাব করা হয়।
নতুন আইনের অধীনে বার্ষিক অতিরিক্ত কাজের সময় ১৫০ ঘণ্টায় সীমিত থাকবে। মূল ৪০ ঘণ্টার সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা অপরিবর্তিত থাকলেও কর্মীদের ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের সুযোগ থাকবে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট নগরে দখলমুক্ত সাত ফুটপাত
সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি এলাকার ফুটপাত ও প্রধান সড়কের একাংশ হকারদের দখলে ছিল। প্রতিদিনই হাজারো হকার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতেন। এতে যানজট হতো, পথচারীরাও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতেন না। অবশেষে প্রশাসনের তৎপরতায় ভোগান্তির অবসান হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের তৎপরতায় ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ হকার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। সে সময় নগরের লালদিঘির পাড় এলাকায় হকারদের জন্য আগে থেকে নির্ধারিত স্থানটি আবার সংস্কারের পর ব্যবসার উপযোগী করে পুনর্বাসনের যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরপর হকারদের ফুটপাত ছেড়ে ওই নির্দিষ্ট স্থানে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে সেখানে চলে গেছেন। যাঁরা যাননি, তাঁদের উচ্ছেদে গতকাল রোববার বেলা আড়াইটা থেকে অভিযান শুরু হয়। এ অবস্থায় কোনো হকারকেই ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয়নি। আজ সোমবারও পুলিশের তৎপরতার কারণে কোনো হকার ফুটপাতে বসেননি।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, নগরের কিনব্রিজ, সুরমা পয়েন্ট, তালতলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, মহাজনপট্টি ও চৌহাট্টা এলাকায় সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েক শ সদস্য গতকাল রোববার অভিযানে নামেন। আজ সোমবারও পুলিশের তৎপরতা আছে। এখন থেকে যাঁরাই ফুটপাত দখল করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, গতকালের অভিযানসংশ্লিষ্ট স্থানগুলোয় হকার নেই। পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছেন। দোকানমালিকদেরও তাঁদের সামনের ফুটপাতের অংশ দখল করে পণ্য রাখতে বাধা দেয় পুলিশ। গতকালের মতো আজও যানজট ছিল সহনীয় পর্যায়ে। তবে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকাও হকারমুক্ত করার দাবি জানান নগরের বাসিন্দারা।
গতকাল বিকেলে বন্দরবাজার এলাকার পথচারী মমতাজুর রহমান বলেন, এখন ফুটপাত ও সড়কের একাংশ হকারমুক্ত থাকায় ভোগান্তি ও যানজট কমেছে। তবে আগে কালেক্টরেট মসজিদের সামনের সড়কের আশপাশের যে অংশে হকারেরা বসতেন, এখন তা দখলমুক্ত হওয়ায় সিএনজি, অটোরিকশা ও লেগুনা দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলছে। এটাও রোধ করতে হবে। তবেই ভোগান্তি পরিপূর্ণভাবে নিরসন হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, অন্তত আড়াই হাজার হকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো হকারকে ফুটপাত কিংবা রাস্তায় ব্যবসা করতে দেখলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অস্থায়ী স্ট্যান্ডগুলোতে কতটি সিএনজি, অটোরিকশা ও লেগুনা একসঙ্গে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে, সেটা ট্রাফিক পুলিশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর বেশি সড়কে থাকলেই সংশ্লিষ্ট চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরটা আমাদের সবার। এই শহর যদি সুশৃঙ্খল থাকে, তাহলে এর সুফল আমরা সবাই পাব। শহরের ফুটপাত দখল করা হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। তাই কোনো ধরনের অজুহাত আর মানা হবে না। নগরের ফুটপাত ও রাস্তাঘাট এখন থেকে হকারমুক্ত থাকবে। এ জন্য প্রশাসনের জিরো টলারেন্স থাকবে।’