উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় বাণিজ্যকেন্দ্র কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়সহ সেভেন সিস্টারস রাজ্যগুলোর সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার এটি। প্রতিবছর রাজস্ব আয় বাড়লেও অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সেবার ঘাটতিতে বন্দরটির কার্যক্রম এখনো প্রত্যাশিত গতি পায়নি।

ভাঙাচোরা রাস্তা, জনবলসংকট ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম না থাকায় বন্দরসংলগ্ন এলাকায় বাণিজ্য কার্যত থমকে আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্তে ইমিগ্রেশন না থাকায় জরুরি কাজে অনেক পথ ঘুরে লালমনিরহাটের বুড়িমারী বন্দরে যেতে হয়। এতে খরচ ও সময় দুটিই বাড়ে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ-ভারত স্থলবন্দরবিষয়ক যৌথ বৈঠকে সোনাহাটকে আঞ্চলিক ট্রানজিট পয়েন্টে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলা হয়। সেই বৈঠকে ভারতের সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাট্টি জানান, সোনাহাট স্থলবন্দরে দ্রুত ইমিগ্রেশন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির বাধাগুলোও দূর করা হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত।

বন্দর পরিচালনা ও রাজস্ব আয়

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দেশের ১৮তম স্থলবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে সোনাহাট। ১৪ দশমিক ৬৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বন্দরে ৬০০ মেট্রিক টনের ওয়্যারহাউস, প্রায় ২ লাখ বর্গফুটের পার্কিং ও স্টকইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন ও শ্রমিক বিশ্রামাগার রয়েছে।

বর্তমানে প্রতিদিন ভারত থেকে ৬০-৮০টি পাথরবাহী ট্রাক আসে এই বন্দরে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই আয় ছাড়িয়েছে ৪ কোটি টাকা।

সীমিত বাণিজ্য, অকার্যকর চুক্তি

চুক্তি অনুযায়ী, সোনাহাট স্থলবন্দর চালুর সময় ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যচুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ১০টি পণ্য আমদানি-রপ্তানির কথা ছিল। ভারত থেকে চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, ফল, কয়লা, পাথর, চুনাপাথর, সার ও লোহা—এসব আমদানি করার কথা ছিল।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়ার কথা প্লাস্টিক সামগ্রী, সিরামিক, টয়লেট টিস্যু, মশারি, খাদ্যপণ্য, পানীয়, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, পোশাক, ওষুধ ও নির্মাণসামগ্রী। তবে বাস্তবে এখন শুধু পাথর ও কয়লা আমদানি হচ্ছে, তা-ও মৌসুমভিত্তিক। এখন শীতকালে মূলত সীমিত পরিমাণে কয়লা আসে।

অন্যদিকে রপ্তানির তালিকায় থাকা ১০টি পণ্যের মধ্যে এখন কেবল টয়লেট টিস্যু ও মশারি—এই দুই পণ্য মাঝেমধ্যে পাঠানো হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোয়ারেন্টিন অফিস না থাকায় অন্যান্য পণ্য আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। বন্দর এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা যোগাযোগব্যবস্থা।

এই জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে মালবাহী ট্রাক চলাচল করে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসআরএমের দুই কোম্পানির ১,১৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বিএসআরএম গ্রুপের দুই কোম্পানির মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কোম্পানি দুটি হলো বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিল। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই দুটি কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর মধ্যে বিএসআরএম লিমিটেডের মুনাফা ৬১৪ কোটি টাকা এবং বিএসআরএম স্টিলের মুনাফা ৫১৮ কোটি টাকা।

গত শনিবার কোম্পানি দুটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মুনাফার এই হিসাব চূড়ান্ত করা হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে গতকাল রোববার মুনাফার এই তথ্য শেয়ারধারীদের জানানো হয়। একই সভায় গত অর্থবছর শেষে শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশও ঘোষণা করা হয়েছে। দুটি কোম্পানি প্রতি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারধারীদের রেকর্ড ৫০ শতাংশ বা ৫ টাকা করে নগদ লভ্যাংশ দেবে।

আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা বেড়েছে ৩২০ কোটি টাকা বা ৪০ শতাংশ।

বিএসআরএম কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, এই প্রথমবার কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে সম্মিলিতভাবে রেকর্ড ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকার মুনাফা করেছে কোম্পানি দুটি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা ছিল ৮১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিলের সম্মিলিত মুনাফা ৩২০ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি দুটির মধ্যে মুনাফা বেশি বেড়েছে বিএসআরএম লিমিটেডের। এক বছরের ব্যবধানে এই কোম্পানিটির মুনাফা ১৮২ কোটি টাকা বা ৪২ শতাংশ বেড়েছে। আর বিএসআরএম স্টিলের মুনাফা বেড়েছে ১৩৮ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ।

এদিকে কোম্পানি দুটি গত অর্থবছরের জন্য যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে লভ্যাংশবাবদ বিএসআরএম লিমিটেড শেয়ারধারীদের দেবে ১৪৯ কোটি টাকা। আর বিএসআরএম স্টিল লভ্যাংশবাবদ গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের দেবে ১৮৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই কোম্পানি মিলে শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশবাবদ বিতরণ করবে ৩৩৭ কোটি টাকা।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, হাজার কোটি টাকার বেশি রেকর্ড মুনাফার পর কোম্পানি দুটির মধ্যে একটি কোম্পানি শেয়ারধারীদের জন্য রেকর্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বিএসআরএম স্টিল সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০২১ সালে। ডিএসইর ওয়েবসাইটে ২০০৯ সাল থেকে কোম্পানিটির লভ্যাংশের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে কখনোই বিএসআরএম স্টিল শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়নি। তবে বিএসআরএম লিমিটেড ২০২১ সালে শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০২১ সালের পর এ বছর আবারও শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।

জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরজুড়ে আমরা উৎপাদন খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি বিক্রিও বেড়েছে। এই দুই উদ্যোগের ফলে বছর শেষে কোম্পানি দুটি রেকর্ড মুনাফা করেছে। এর আগে কখনো এই দুই কোম্পানির সম্মিলিত মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি।’

এদিকে গত অর্থবছরে রেকর্ড মুনাফার পর বিএসআরএম গ্রুপ ২০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগেরও ঘোষণা দিয়েছে। গত শনিবার কোম্পানিটির পর্ষদ সভায় বিনিয়োগের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানিটি গতকাল ডিএসইর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, বিএসআরএম ওয়্যারস লিমিটেড নামে নতুন কোম্পানির মাধ্যমে এই বিনিয়োগ করা হবে। এই বিনিয়োগের বিপরীতে নতুন কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা পাবে বিএসআরএম লিমিটেড। দীর্ঘমেয়াদি মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে কৌশলগত এই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এই বিনিয়োগে গঠিত কোম্পানিটি উচ্চমানের তারজাতীয় পণ্য উৎপাদন করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসআরএমের দুই কোম্পানির ১,১৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা
  • ট্রাম্পের বরাদ্দ কমানোর পদক্ষেপের মধ্যেও রেকর্ড আয় যেভাবে করল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
  • কেঁচোর জাদুতে বদলে গেলো কামরুজ্জামানের ভাগ্য
  • এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের