সোনাহাট স্থলবন্দর, কাঠামোগত দুরবস্থায় ব্যাহত আমদানি-রপ্তানি সম্ভাবনা
Published: 20th, October 2025 GMT
উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় বাণিজ্যকেন্দ্র কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়সহ সেভেন সিস্টারস রাজ্যগুলোর সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার এটি। প্রতিবছর রাজস্ব আয় বাড়লেও অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সেবার ঘাটতিতে বন্দরটির কার্যক্রম এখনো প্রত্যাশিত গতি পায়নি।
ভাঙাচোরা রাস্তা, জনবলসংকট ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম না থাকায় বন্দরসংলগ্ন এলাকায় বাণিজ্য কার্যত থমকে আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্তে ইমিগ্রেশন না থাকায় জরুরি কাজে অনেক পথ ঘুরে লালমনিরহাটের বুড়িমারী বন্দরে যেতে হয়। এতে খরচ ও সময় দুটিই বাড়ে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ-ভারত স্থলবন্দরবিষয়ক যৌথ বৈঠকে সোনাহাটকে আঞ্চলিক ট্রানজিট পয়েন্টে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলা হয়। সেই বৈঠকে ভারতের সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাট্টি জানান, সোনাহাট স্থলবন্দরে দ্রুত ইমিগ্রেশন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির বাধাগুলোও দূর করা হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত।
বন্দর পরিচালনা ও রাজস্ব আয়
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দেশের ১৮তম স্থলবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে সোনাহাট। ১৪ দশমিক ৬৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বন্দরে ৬০০ মেট্রিক টনের ওয়্যারহাউস, প্রায় ২ লাখ বর্গফুটের পার্কিং ও স্টকইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন ও শ্রমিক বিশ্রামাগার রয়েছে।
বর্তমানে প্রতিদিন ভারত থেকে ৬০-৮০টি পাথরবাহী ট্রাক আসে এই বন্দরে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই আয় ছাড়িয়েছে ৪ কোটি টাকা।
সীমিত বাণিজ্য, অকার্যকর চুক্তি
চুক্তি অনুযায়ী, সোনাহাট স্থলবন্দর চালুর সময় ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যচুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ১০টি পণ্য আমদানি-রপ্তানির কথা ছিল। ভারত থেকে চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, ফল, কয়লা, পাথর, চুনাপাথর, সার ও লোহা—এসব আমদানি করার কথা ছিল।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়ার কথা প্লাস্টিক সামগ্রী, সিরামিক, টয়লেট টিস্যু, মশারি, খাদ্যপণ্য, পানীয়, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, পোশাক, ওষুধ ও নির্মাণসামগ্রী। তবে বাস্তবে এখন শুধু পাথর ও কয়লা আমদানি হচ্ছে, তা-ও মৌসুমভিত্তিক। এখন শীতকালে মূলত সীমিত পরিমাণে কয়লা আসে।
অন্যদিকে রপ্তানির তালিকায় থাকা ১০টি পণ্যের মধ্যে এখন কেবল টয়লেট টিস্যু ও মশারি—এই দুই পণ্য মাঝেমধ্যে পাঠানো হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোয়ারেন্টিন অফিস না থাকায় অন্যান্য পণ্য আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। বন্দর এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা যোগাযোগব্যবস্থা।
এই জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে মালবাহী ট্রাক চলাচল করে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, দেশে সুফল কম
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে। কিন্তু দেশে কমেছে সামান্যই; বরং বেশি দাম রাখার কারণে সরকারের কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মুনাফা বেড়েছে।
বিপিসি গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ছিল ৩ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (২০২৪ সালের মার্চ) বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের (ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিন) দাম নির্ধারণ শুরু হয়। ভর্তুকি থেকে সরে আসে ওই সরকার। তখন ‘অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের’ কারণে অর্থনীতি সংকটে পড়েছিল।
বিপিসি জ্বালানি তেল থেকে শুধু বড় অঙ্কের মুনাফাই করছে না, সরকারের আয়ও অনেক। জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক–কর আরোপ করে সরকার প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। আরও পড়ুনবাড়ল সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম৩০ নভেম্বর ২০২৫বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২৪ সালের মার্চে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বা ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের ব্যারেলপ্রতি (১৫৯ লিটার) দর ছিল ৮৫ মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। গত অক্টোবরে এই দর নেমেছে ৬৪ ডলারের কাছাকাছিতে। ফলে তখনকার তুলনায় দর এখন ২৫ শতাংশ কম। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, এ সময়ে ডলারের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। সরকার ডিজেলের দাম কমিয়েছে ৪ শতাংশের মতো।
বিপিসি জ্বালানি তেল থেকে শুধু বড় অঙ্কের মুনাফাই করছে না, সরকারের আয়ও অনেক। জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক–কর আরোপ করে সরকার প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। বিপিসির নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুল্ক–কর বাবদ সরকারের আয় ছিল ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।
বিপিসি বছরে প্রায় ৬৮ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। এর মধ্যে ৬২ শতাংশ পরিবহন ও ১৫ শতাংশ কৃষি খাতে ব্যবহার করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে পরিবহন ভাড়া ও কৃষির উৎপাদন খরচ অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে অন্যান্য কারণে বাড়ে দ্রব্যমূল্য। ফলে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে না পেরে, ধনী ও সচ্ছলদের কাছ থেকে যথেষ্ট কর আদায় করতে না পেরে এবং বড় বড় প্রকল্প নিয়ে বিপাকে থাকা বিগত সরকার রাজস্ব আয়ের জন্য জ্বালানি তেলের মতো খাতকে বেছে নিয়েছিল। সে অবস্থার পরিবর্তন তেমন একটা হয়নি।আরও পড়ুনবিশ্ববাজারে তেলের দাম বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে, দেশে কমে না কেন২৭ নভেম্বর ২০২৫অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে তা এখনো ৮ শতাংশের বেশি। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে কমিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশ পারেনি। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, জ্বালানি তেলের দাম কমালে পরিবহন ভাড়া ও উৎপাদন খরচ কমানোর সুযোগ তৈরি হতো। এতে মানুষ সুফল পেত। জ্বালানি তেল একটি কৌশলগত পণ্য। এর ব্যবসা সরকারের হাতে রাখা হয় মুনাফা নয়, বরং নিরাপত্তা ও জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে। যদিও বিগত সরকার একে আয়ের বড় উৎস বানিয়ে ফেলেছিল। এখনো সেটাই চলছে।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে না পেরে, ধনী ও সচ্ছলদের কাছ থেকে যথেষ্ট কর আদায় করতে না পেরে এবং বড় বড় প্রকল্প নিয়ে বিপাকে থাকা বিগত সরকার রাজস্ব আয়ের জন্য জ্বালানি তেলের মতো খাতকে বেছে নিয়েছিল। সে অবস্থার পরিবর্তন তেমন একটা হয়নি।
অবশ্য জ্বালানি তেলে মুনাফা করলেও বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে বড় ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিগত সরকারের সময় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাশুল দিতে হচ্ছে। এ সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি। জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর ক্ষেত্রে যুক্তি হলো, দাম কমালে প্রতিবেশী দেশে তেল পাচারের শঙ্কা থাকে। আবার বিপিসির মুনাফার টাকা দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নও করা হয়।
বিপিসির মুনাফা কারও বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং উন্নয়নকাজে বিনিয়োগের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন শোধনাগার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে বিপিসি অর্থায়ন করবে।মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টাবিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, বিপিসির মুনাফা কারও বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং উন্নয়নকাজে বিনিয়োগের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন শোধনাগার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে বিপিসি অর্থায়ন করবে।
বিপিসির নতুন শোধনাগারের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১২ সালে। তখন তারা লোকসানে ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে মুনাফা শুরু করে বিপিসি। গত এক দশকে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে করপোরেশনটি। এর মধ্যে শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরে তারা লোকসান করে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, প্রকল্প এখন পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।
২০২৪ সালেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় দাম ৭০ ডলারের ঘরে ছিল। আর এখন এটি নেমে এসেছে ৬২ থেকে ৬৪ ডলারে।আরও পড়ুনতেল চুরি বন্ধে জ্বালানি বিভাগের ৩ নির্দেশনা২৮ অক্টোবর ২০২৫বিশ্ববাজারে দাম কমেছেজ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রির একমাত্র সরকারি কোম্পানি বিপিসি। এর অধীনে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামে তিনটি কোম্পানি ডিলারদের মাধ্যমে তেল বিক্রি করে।
বিগত কয়েক বছরে জ্বালানি তেলের দামে বড় রকমের উত্থান-পতন দেখেছে বিশ্ব। করোনা মহামারির প্রভাবে তেলের দাম ব্যাপক হারে কমে যায়। ২০২০ সালে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে ৪২ মার্কিন ডলার। পরের বছর অস্থির হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলের বাজার।
তেলের দামে বড় উল্লম্ফন ঘটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। ২০২২ সালে তেলের গড় দাম ব্যারেলে ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ১৩৯ ডলার পর্যন্ত। এ কারণে বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দামও বাড়তে থাকে। ওই বছর আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ওই মাসে মাত্র ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ দাম কমানো হয়েছিল (প্রতি লিটারে কমেছিল ৫ টাকা)। এরপর প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, পেট্রল ১২৫ টাকা এবং অকটেন বিক্রি হয় ১৩০ টাকায়।
২০২৪ সালেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় দাম ৭০ ডলারের ঘরে ছিল। আর এখন এটি নেমে এসেছে ৬২ থেকে ৬৪ ডলারে।
বাজারদরের কথা বললেও তা এড়িয়ে সুবিধামতো মূল্য নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় সমন্বয়ের সূত্র তৈরি করা হয়েছে। সূত্রে ৯টি জায়গায় দুর্বলতা জানানোর পর বর্তমান সরকার দুটি সংশোধন করেছে। তাই বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ভোক্তা বাড়তি দামে কিনছে, আর বিপিসি মুনাফা করছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিপিডির গবেষণা পরিচালকদেশে এখন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১০৪ টাকা, পেট্রল ১২০ টাকা এবং অকটেন ১২৪ টাকা। সবশেষ এ মাসেই প্রতি লিটারে ২ টাকা করে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলেই সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। তেল কেনার পর দেশে আসতে এক মাস সময় লেগে যায়। গত ২১ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দামের গড় কর দেশে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ওই সময় বিশ্ববাজারে দাম বর্তমানের চেয়ে বেশি ছিল।
অবশ্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত বছর নভেম্বরেও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিল, বাজারদর অনুযায়ী নির্ধারণ করলে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব। উল্লেখ্য, একটি সূত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার মাসে মাসে দাম নির্ধারণের কথা বলেছিল। যদিও সেই সূত্রের পুরোটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারদরের কথা বললেও তা এড়িয়ে সুবিধামতো মূল্য নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় সমন্বয়ের সূত্র তৈরি করা হয়েছে। সূত্রে ৯টি জায়গায় দুর্বলতা জানানোর পর বর্তমান সরকার দুটি সংশোধন করেছে। তাই বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ভোক্তা বাড়তি দামে কিনছে, আর বিপিসি মুনাফা করছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, তেল পাচারের যুক্তি হাস্যকর। সীমান্তের অজুহাতে দেশের ভোক্তাকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই।
বিপিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতা কমাতে পারলে জ্বালানি তেলের দাম কমানো যাবে।আরও পড়ুনতেল চুরি শুরু জাহাজ থেকে, বিজ্ঞান জানে চোরেরা২০ অক্টোবর ২০২৫বিপিসির আন্তর্জাতিক নিরীক্ষার দাবিঅকটেন ও পেট্রল বিক্রি করে সব সময় মুনাফা করে বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। দেশের একমাত্র শোধনাগারটি থেকে পাওয়া যায় ৬ লাখ টন ডিজেল, বাকিটা আমদানি করতে হয়।
বিপিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতা কমাতে পারলে জ্বালানি তেলের দাম কমানো যাবে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক দশক আগেই বিপিসির আন্তর্জাতিক নিরীক্ষার দাবি তোলা হয়েছে। আজও তা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়ার নিয়ম হলো সরকার সেবা দেবে, মুনাফা করবে না। অথচ শুল্ক–করের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব নিয়েও উন্নয়নে বিনিয়োগ করে না সরকার। বিনিয়োগের নামে বাড়তি মুনাফা করছে বিপিসি।’
আরও পড়ুন‘তেল চুরি’, ব্রাজিল বাড়ি ও তাঁদের আয়েশি জীবন১৮ অক্টোবর ২০২৫