প্রকৃত জাতীয় ঐক্য করতে হলে শ্রমিকের ঐক্য দরকার: আনু মুহাম্মদ
Published: 31st, January 2025 GMT
প্রকৃত জাতীয় ঐক্য করতে হলে শ্রমিকের ঐক্য দরকার বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসলে মজুরের দেশ। এদেশের ১০ ভাগ জনগণ কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক, কারখানার শ্রমিক, গৃহ শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, আউটসোর্সিং শ্রমিক। একটি দেশ কেমন চলছে তা বোঝা যায় সে দেশের শ্রমজীবী মানুষ কেমন আছে কিংবা কতটা সম্মানজনক জীবন যাপন করছে। এই শ্রমিকের ভেতর নারী, পুরুষ, আদিবাসী, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ রয়েছে। তাই প্রকৃত জাতীয় ঐক্য করতে হলে শ্রমিকের ঐক্য দরকার।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন অধ্যাপক তিনি। বন্ধ কারখানা চালু, বকেয়া মজুরি পরিশোধ, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও মিথ্যা মামলায় শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গত ১৬ বছর ধরে শ্রমিকদেরকে বিভিন্নভাবে অপমান করে বাংলাদেশে এক ভয়ংকর রকম স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছে। প্রতিটি গণঅভ্যুত্থানের দিকে তাকালে শ্রমিকের আন্দোলনের শক্তি বুঝা যায়। থ্রি জিরো তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা ড.
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ, এডিবির মতো প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ। আইএমএফের তিন বছরে যে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য সরকার যে জনবিরোধী শর্ত পূরণ করছে, সেই একই পরিমাণের ডলার প্রবাসী শ্রমিকরা এই দেশে প্রতি দুই মাসে প্রেরণ করে। হাশেম ফুড কারখানায় শ্রমিক হত্যার গণতদন্তে শিল্প পুলিশ বাতিল করার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, তা এখনও মানা হয়নি বলে জানান তিনি।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য লেখক ও গবেষক মাহতাব উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় এবং অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে উক্ত সভায় বক্তব্য প্রদান করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি, আ ক ম জহিরুল ইসলাম, গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুম রেজা, শ্রমজীবী আন্দোলনের আহ্বায়ক হারুন আর রশীদ ভূঁইয়া এবং চলচ্চিত্রকর্মী আকরাম খান। সভায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, পাটকল শ্রমিক, লেদার শ্রমিক, জণগণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মী, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক এবং অধিকারকর্মীরা সংহতি প্রকাশ করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক গ র ম ন টস
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ