এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। ধরনভেদে প্রতি কেজি চালে ১-৪ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। এর পাশাপাশি সামান্য দাম কমেছে পেঁয়াজ ও আলুর। তবে মুরগির দামে কিছুটা বাড়তি প্রবণতা দেখা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, দেশের বিভিন্ন পাইকারি বিক্রির স্থান বা মোকামগুলোতে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে খুচরা পর্যায়েও কিছুটা দাম কমছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল মার্কেট—এই তিন বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত দেড় মাসের মধ্যে ধরনভেদে চালের দাম কেজিতে ৮-১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। আমনের ভরা মৌসুমেও হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ। এরপর সরকার চালের দাম কমাতে আমদানিসহ কিছু উদ্যোগ নেয়। এর প্রভাবে গত এক সপ্তাহে চালের দাম কিছুটা কমেছে।
টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। বর্তমানে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩৫ টাকায়।মিলমালিক ও পাইকারেরা বলছেন, চালের আমদানি বাড়ানো এবং এসব চাল গ্রামপর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় দাম কমতির দিকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রভাবও পড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল রাজধানীতে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৮-৬৪ টাকা ও সরু চাল ৭২-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব চালের দাম এক সপ্তাহ আগে ১-৪ টাকা পর্যন্ত বেশি ছিল। যেমন গতকাল মাঝারি মানের ব্রি-২৯ চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬২ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ চালের দাম ছিল ৬২-৬৫ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা কমেছে। আবার মোটা বলে পরিচিত স্বর্ণা চালের দাম ৩ টাকা কমে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও ঢাকার সব খুচরা বাজারে কম দামের চাল বিক্রি শুরু হয়নি।
আরও কমেছে পেঁয়াজ ও আলুর দামএক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর দাম আরও কিছুটা কমেছে। বাজারে এখন নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় দামও কম। খুচরা পর্যায়ে গতকাল এক কেজি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে এই দাম আরও ৫ টাকা বেশি ছিল। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কেজিতে ২-৫ টাকা কমেছে। গতকাল এক কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৮-২০ টাকায়। আগের সপ্তাহে এই দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে আলু ও পেঁয়াজ আরও ৫ টাকা বেশি দামেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যান্য মসলা পণ্যের মধ্যে এখন প্রতি কেজি রসুনের দাম ২২০-২৪০ টাকা, আমদানি করা আদা ২৩০-২৪০ টাকা ও দেশি আদা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল রাজধানীতে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৮-৬৪ টাকা ও সরু চাল ৭২-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।গত তিন-চার দিনে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। গতকাল বাজারে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০-২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ দাম কেজিতে ১০ টাকা কম ছিল। অন্যদিকে গতকাল এক কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩২০ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২৮০-৩১০ টাকা। তবে টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। বর্তমানে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩৫ টাকায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ক জ দ ম কম গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।