টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অজ্ঞান হয়ে গেলেন এক নারী
Published: 12th, February 2025 GMT
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অজ্ঞান হয়ে গেছেন একজন নারী। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারী ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা। তিনি স্বল্প মূল্যে চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল কিনতে সকাল আটটায় সেখানে গিয়েছিলেন; কিন্তু দীর্ঘ সময় না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ও ঠেলাঠেলির কারণে এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
উপস্থিত লোকজন তাঁর মাথায় পানি দেন ও ধরাধরি করে রাস্তার পাশে বসান। এরপর বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন ওই নারী। তখন উপস্থিত লোকজনের অনুরোধে টিসিবির ট্রাক থেকে তাঁর কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। এরপর তিনি পরিচিত একজনের সঙ্গে বাসায় ফিরে যান।
উল্লিখিত নারী জানান, তাঁর স্বামী পেশায় ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। স্বামীর নামে টিসিবির একটি পরিবার কার্ড ছিল। তবে টিসিবি এখন নতুন স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দিচ্ছে; যেটি তাঁরা এখনো পাননি। এ কারণে দুই মাস ধরে টিসিবির পণ্য কিনতে পারছেন না। ফলে আজ বাধ্য হয়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
প্রথম আলোকে ওই নারী আরও বলেন, ‘আমার পাঁচজনের সংসার। এর মধ্যে দুই মেয়ে স্কুলে পড়ে। স্বামীর একজনের সীমিত আয়ে সংসার চলে না। এ জন্য বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি।’
আজ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে আরও দুই নারী অজ্ঞান হয়েছেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন জানান, তাঁরাও দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে সড়কে পড়ে যান।
বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি, ভোগান্তিনিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও আধা কেজি খেজুর ৭৮ টাকায় বিক্রি করে সংস্থাটি।
টিসিবির ট্রাক থেকে এসব পণ্য কিনলে একজন ভোক্তার প্রায় ৪০০ টাকার মতো সাশ্রয় হয়। এ কারণে ট্রাকের পেছনে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে ভিড়ের সঙ্গে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও হয়রানির ঘটনা। আজ দুপুরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে দেখা যায়, পণ্য কিনতে এসে টিসিবির ট্রাকের পেছনে প্রচণ্ড হট্টগোল করছেন উপস্থিত লোকেরা; এমনকি তাঁরা নিজেদের মধ্যে মারামারিও করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধাক্কাধাক্কির কারণে মাটিতে পড়ে গেছেন বেশ কয়েকজন ক্রেতা। কারও হাত কেটেছে, কেউ পেয়েছেন পায়ে ব্যথা, জুতা ছিঁড়ে গেছে দুজনের, টাকা হারিয়েছেন একজন। এ ছাড়া ট্রাক থেকে পণ্য নিয়ে ভিড় ঠেলে বের হতে গিয়ে একজনের ব্যাগ ছিঁড়ে যায়। এতে তাঁর এক কেজি চিনির পুরোটাই রাস্তায় পড়ে যায়।
পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা বিলকিস আক্তার জানান, টিসিবির ট্রাকের সন্ধানে তিনি আজ সকাল সাড়ে সাতটায় বাসা থেকে বের হন। এরপর ফার্মগেট এলাকার তিনটি সম্ভাব্য স্থানে ঘুরে আটটার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আসেন। সেখানে আগে থেকেই ২০ জনের মতো নারী–পুরুষ দুই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিলকিস আক্তার জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিসিবির ট্রাক এলে আগের দুই লাইন ভেঙে যায় এবং নতুন করে সাত–আটটি লাইন তৈরি হয়। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে পায়ে ব্যথা পেয়ে লাইন থেকে বের হয়ে যান তিনি। তাঁর মতো আরও কয়েকজনের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। একই ঘটনা দেখা গেছে শেওড়াপাড়ায়। আজ দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষেরা দুটি ও নারীরা পাঁচটি লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
আওতা বেড়েছে, বরাদ্দ কমেছেএদিকে পণ্য বিতরণের আওতা বাড়িয়েছে টিসিবি। সংস্থাটি শুরুতে ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করত। এখন আটটি বিভাগীয় শহর ও কয়েকটি জনবহুল জেলা শহরে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আওতা বাড়ানোর কারণে ট্রাকপ্রতি পণ্যের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। আগে একটি ট্রাকে ২৫০ জনের জন্য পণ্য বিক্রি করা হতো। তবে গত দুই দিনে প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
এমনিতেই টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য না পেয়ে কিছু মানুষ খালি হাতে ফিরতেন। এখন পণ্যের বরাদ্দ কমায় সে ধরনের মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ছে। আজ বেলা সোয়া তিনটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে টিসিবির ট্রাকের পণ্য বিক্রি শেষ হয়। তখন সেখানে উপস্থিত অন্তত ৫৫ জন পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে বাধ্য হন। শেওড়াপাড়াতেও এভাবে ৩৮ জন খালি হাতে ফিরেছেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সকাল সাতটায় এসেও পণ্য কিনতে পারেননি লাইলী বেগম। টিসিবির ট্রাক চলে যাওয়ার পরে এক পর্যায়ে তিনি কান্না শুরু করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল সাতটায় এখানে আইছি। কিচ্ছু খাইতে পারি নাই। পরনের জুতাটাও ছিঁইড়া গেছে। এহন খালি হাতেই বাসায় যাইতে হইব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপস থ ত ল ক বর দ দ কজন র
এছাড়াও পড়ুন:
বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ নেওয়ার সময় কিংবা ছক্কা ঠেকাতে গিয়ে অনেক সময় শরীরের ভারসাম্য থাকে না। ফিল্ডাররা তাই বাধ্য হয়েই একটি কৌশল অবলম্বন করেন।
বলটি ওপরে ছুড়ে দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যান। বাউন্ডারি সীমানার বাইরে থাকতেই লাফ দিয়ে বলটি হাতের ধাক্কায় আবারও ওপরে ছুড়ে দিয়ে সীমানার ভেতরে ফেরত পাঠান এবং তারপর ক্যাচটি নেন কিংবা ছক্কা বাঁচান। এই কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ বাউন্ডারি সীমানার বাইরে একাধিকবার শূন্যে লাফিয়েও বল হাত দিয়ে স্পর্শ করেন।
ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) নতুন নিয়ম অনুযায়ী এভাবে ক্যাচ নেওয়া কিংবা ছক্কা বাঁচানো আর বৈধ থাকছে না।
আরও পড়ুনস্বপ্ন পূরণ হতে ৬৯ রান দরকার, এবার কি পারবে ‘চিরকালের চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা১০ ঘণ্টা আগেইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে নতুন এ নিয়ম কার্যকরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে নিয়মটি সংযুক্ত হবে চলতি মাসেই। এরপর এমসিসির বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবে আগামী বছরের অক্টোবরে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একজন ফিল্ডার বাউন্ডারি সীমানার বাইরে লাফিয়ে শুধু একবারই বল স্পর্শ করতে পারবেন। এরপর সীমানার ভেতরে ঢুকে তাঁকে ক্যাচ নিতে হবে। ২০২৩ সালে বিগ ব্যাশে সিডনি সিক্সার্সের জর্ডান সিল্কের ক্যাচ বাউন্ডারি সীমানার বাইরে (লাফিয়ে) দ্বিতীয়বার স্পর্শ করে সীমানার ভেতরে ফেরত পাঠান ব্রিসবেন হিটের মাইকেল নেসের। শূন্যে লাফিয়ে বলটি দ্বিতীয়বার স্পর্শ করে তিনি সীমানার বাইরেই পা রাখেন এবং দৌড়ে ভেতরে ঢুকে ক্যাচটি নেন। এমসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী এমন ক্যাচ আর আইনসিদ্ধ হবে না।
নেসের সেই ক্যাচ নেওয়ার পর ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ২০২০ বিগ ব্যাশে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ অনেকটা এভাবেই নিয়েছিলেন ম্যাট রেনশ—যেখান থেকে তিনি ওভাবে ক্যাচটি নেওয়ার প্রেরণা পান। সে সময় দুটি ক্যাচের বৈধতা নিয়েই বিতর্ক হয়েছিল। তখন অনেকেই বলেছিলেন, বাউন্ডারি সীমানার ক্যাচের নিয়ম পাল্টানো হোক, যেটা সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১০ সালে।
আরও পড়ুনম্যাক্সওয়েল, ক্লাসেন, পুরান—জাতীয় দল ছাড়তেই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের অধিনায়ক১২ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের শুরুতে ক্যাচ নেওয়ার প্রশ্নবিদ্ধ এই নিয়ম পুনরায় যাচাইয়ের জন্য এমসিসি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল আইসিসির ক্রিকেট কমিটি। এরপর দুই পক্ষই এ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে এবার সেটি হালনাগাদ করল। এ বিষয়ে এমসিসির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রতিটি সদস্যদেশের বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে আইসিসি। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান নিয়মের অধীন ‘অসাধারণ’ ফিল্ডিং দেখা গেলেও সেটা ‘অস্বাভাবিক কিছু ক্যাচেরও জন্ম দিয়েছে, যা সিংহভাগ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের চোখে অবৈধ’।
নেসেরের ক্যাচের উদাহরণ টেনে এমসিসি বলেছে, ব্রিসবেন হিটের এই ফিল্ডার সীমানার ‘ভেতরে’ ক্যাচটি নেওয়া সম্পন্ন করার আগে ‘বানি হপড’ (ছোট্ট লাফ) করেছেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘এমসিসি নতুন আইন করেছে, যেখানে সীমানার বাইরে “বানি হপড” পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে। তবে এসব ক্যাচে ফিল্ডার সীমানার ভেতরে থেকে বল শূন্যে ছুড়ে দিয়ে বাইরে পা রাখার পর ক্যাচটি ধরতে ডাইভ দিয়ে ফিরতে পারবেন। আমাদের সমাধান হলো, সীমানার বাইরে চলে যাওয়া ফিল্ডারকে শূন্যে থাকতে একবারই বল স্পর্শ করতে দেওয়ার সীমারেখা বেঁধে দেওয়া এবং তারপর ডেলিভারিটির বাকি সময় সম্পন্ন করতে সীমানার ভেতরে থাকতে হবে।’
রিলে অর্থাৎ একাধিক ফিল্ডার মিলে ক্যাচের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হবে। বাউন্ডারি সীমানার বাইরে বল স্পর্শ করা ফিল্ডারকে সীমানার ভেতরে ফিরতে হবে তাঁর সতীর্থ ক্যাচ নিলেও।
১৭ জুন শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যকার গল টেস্ট দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র। এই ম্যাচের সঙ্গে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনও হালনাগাদ করা হবে। নতুন এই নিয়ম কার্যকর হবে আগামী বছরের অক্টোবর থেকে।