কথাসাহিত্যিক ও সমালোচক ফজলুল কবিরী জন্ম ১৯৮১ সালে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন হালদা নদীর তীরবর্তী গ্রাম উত্তর মাদার্শায়। তিনি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ফজলুল কবিরী। তার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : ‘বারুদের মুখোশ’, ‘ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া গল্প’, ‘ডোরাকাটা ক্যাডবেরি’ উপন্যাস : ‘ঔরসমঙ্গল’ প্রবন্ধ ‘লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক দায় ও দর্শনের খোঁজে’ উল্লেখযোগ্য। ফজলুল কবিরী তার গল্পভাবনা, ভাষাভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি: আপনার একটি গল্প থেকে আরেকটি গল্পের ভাষা ও আঙ্গিক আলাদা হয়ে থাকে। যখন গল্প নির্মাণ শুরু করেন গল্পের বিষয়বস্তু ভাষাকে নির্মাণ করে নাকি ভাষা গল্পের বিষয়বস্তু ধারণ করে নেয়? 
ফজলুল কবিরী: লেখালেখি শেষপর্যন্ত স্কিল ও মরালিটির লড়াই৷ সেইসাথে খুবই উর্বর মস্তিষ্ক ও সহজাত প্রতিভার পাশাপাশি যেসব লেখক তীব্র পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে জন্মান, তারাই লম্বা রেসের ঘোড়া হিসেবে সাহিত্যের বিশাল দিগন্তে রাজত্ব করেন। তারাই সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নতুন চিন্তার রাস্তা নির্মাণ করেন। এর মানে এই নয় যে বাকিরা দুধভাত। সমাজ-রাষ্ট্রের অসুখ সারাতে নিত্য যেসব দায় লেখকদের থাকে, ছোট-বড় সব লেখক-চিন্তক মিলেই সেসব দায় সামলান। তাদের মধ্যে দলীয় দাসত্বের ঊর্ধ্বে উঠে যারা নিজেদের অবস্থান তৈরি করেন, তারাই সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। সে প্রাসঙ্গিকতার জায়গা থেকে গল্পের শরীরে জীবন পায় ভাষা ও চিন্তার নতুন প্রবাহ। মূলত বিষয়ই নির্ধারণ করে দেয় গল্পের ভাষা কেমন হবে। ফলে আদিবাসীদের নিপীড়িত হওয়ার গল্প যে ভাষায় উঠে আসে, ঠিক একই ভাষায় রচিত হয় না অন্য কোনো সংখ্যালঘু মানুষের সংগ্রামের গল্প। কর্পোরেট হিপোক্রেসির গল্প যে ভাষায় উঠে আসে, ঠিক একই ভাষায় ধরা দেয় না অন্য কোন গভীর পরিসরের গল্প। 

রাইজিংবিডি: চলমান রাজনৈতিক বৃত্তে দাঁড়িয়ে এর বাইরে পাঠককে ভাবাবার যে ভাষা বিনির্মাণ করতে হয়, সেই ভাষা বিনির্মাণে একজন গল্পকার হিসেবে কতটুকু স্বাধীন, কতটুকু পরাধীন? ফজলুল কবিরী : একটা আশঙ্কার কথা প্রায়শ বলি। তা হচ্ছে ভাষা ও চিন্তার পরাধীনতা। এমনকি তৃতীয় বিশ্বের এক‌টি দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ভবিষ্যতের সাহিত্য কর্পোরেট সাহিত্যেরই ইতিহাস হবে। এই ভয়াবহ বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই একজন লেখককে এগোতে হবে। আমরা গরিবি সাহিত্যচর্চার ভেতর দিয়ে যে রোদন, দ্রোহ ও প্রগতির বার্তা সমাজ ও রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দিতে চাই, তাকে আরও বেশি প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আমরা লেখকরা হয়তো উড়েই যাব। ফলে বই প্রকাশের সাময়িক সুখ ও উত্তেজনার বাইরে যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পাঠযোগ্য ও গভীর পরিসর নিয়ে আগানো এক‌টি বইয়ের বাজার তৈরিতে অধিক মনোযোগী হওয়া; আরও জরুরি হচ্ছে নিষ্ঠাবান পাঠক তৈরি করা। সেসব হচ্ছে না। এদেশের লেখক-পাঠকদের করুণ দশা দেখে বিচলিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রকাশের প্রাথমিক পর্বেই গলাটিপে হত্যা করা হয় একেকটি বইয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে। লেখক হিসেবে আমরা খুব সামান্যই স্বাধীন।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় শফিক হাসান’র ভ্রমণগ্রন্থ ‘দেখি বাংলার মুখ’

বইমেলায় হট্টগোল, উপদেষ্টা ফারুকীর কড়া বার্তা

রাইজিংবিডি: গল্পে আলাদা চিন্তা থাকে? প্রশ্নকে উত্তর আর উত্তরকে প্রশ্নে রূপান্তর করা যায়। এই যে প্রক্রিয়া এর সামাজিক প্রয়োজনীয়তা কতটুকু আছে বলে মনে করেন? 
ফজলুল কবিরী: একটা চিন্তার জীবনকাল থাকে। চিন্তারও মৃত্যু ঘটে একসময়। অন্যকোনো নতুন চিন্তা বিকশিত হয়। ফলে লেখকদের কাজ হচ্ছে চিন্তার প্রবাহকে সচল রাখা। সমাজে অসংখ্য তরুণ এখনো লেখক হতে চান। এমনকি জীবিকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকেও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ভবিষ্যতের ঝুঁকিপূর্ণ একটা জার্নিকে ভালোবাসতে চান। এসবের প্রয়োজন আছে৷ তবে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করে? দশকের পর দশক তারা চিন্তা ও দর্শনের অলিগলিতে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন, কিন্তু এই বিকাশের পথে তারা এমন কিছু অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন যা তাদের মগ্নপাঠ ও জ্ঞানচর্চার পথে অন্তরায়। লেখকের নিবিড় দর্শনের কাছে নয়, পাঠক ছুটছেন স্পোকেন ইংলিশ কিংবা রগরগে মিথ্যাচারের পেছনে। তবু এসব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে গল্পেও নবতর চিন্তার বীজ বোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

রাইজিংবিডি: ২০২৫ বইমেলায় আপনার নতুন-পুরোন কি কি বই থাকছে? 
ফজলুল কবিরী: ২০২৫-এর বইমেলায় আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ 'গান্ধর্ব গল্পগুচ্ছ' প্রকাশিত হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে দ্বিমত পাবলিশার্স। ঢাকা বইমেলায় বইটির পরিবেশক 'জলধি'। জলধি থেকে ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল আমার তৃতীয় গল্পগ্রন্থ 'ডোরাকাটা ক্যাডবেরি'। সেটিও পাওয়া যাচ্ছে একই স্টলে। এছাড়া আমার প্রবন্ধের বই 'লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক দায় ও দর্শনের খোঁজে' ২০২৩ সালে প্রকাশ করেছিল দ্বিমত পাবলিশার্স। বইটিও প্রকাশক দ্বিমত এবং রকমারিতে পাওয়া যাচ্ছে। আমার একমাত্র উপন্যাস 'ঔরসমঙ্গল' পাওয়া যাচ্ছে প্রকাশক বেহুলাবাংলার স্টলে। 

রাইজিংবিডি: আপনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা মতাদর্শ আমাদের কাছে সার্কাস হয়ে এসেছে’—একটু ব্যাখ্যা করবেন। 
ফজলুল কবিরী: রাষ্ট্রের যে আলাদা ও স্বাধীন অস্তিত্ব আমরা কল্পনা করি সেটি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মত ও পথকে জায়গা দিতে বাধ্য। মানুষ নির্ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করবে। এটি হচ্ছে বেঞ্চমার্ক। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ দশকে শাসকগোষ্ঠী মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। আমাদের শাসনব্যবস্থায় সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ কোন শাসকই উন্মুক্ত রাখেননি। ফলে তাদেরকে মিথ্যাচারকে সার্কাস হিসেবেই দেখা উচিত। 

রাইজিংবিডি: আপনি লেখা ও পড়ার মধ্যে সমন্বয় করেন কীভাবে? কখন বেশি লেখা হয়? 
ফজলুল কবিরী : লেখককে চব্বিশ ঘন্টাই চিন্তা এবং লেখালেখির ভাবনাপ্রবাহের মধ্যে থাকতে হয়। একজন লেখককে বুঝতে হয় লেখালেখিতে নিজের ভালো কিংবা খারাপ সময়ে খুব কম সতীর্থকেই কাছে পাওয়া যায়। এমনকি একসময় যাদের সাথে অনেকগুলো বসন্ত কাটানোর অভিজ্ঞতা ছিল, যাদের সাথে তর্কে-বিতর্কে কেটে যেত অসংখ্য সন্ধ্যা, তাদেরকেও লেখালেখির অন্য পর্বে আর কাছে পাওয়া যায় না। নিজের উচ্চতাকে অন্যের ছায়ায় মাপতে নেই। নিজেকে নিজের পথ খোঁজে নিতে হয়। যাদের সংশ্লেষ একজন লেখকের চিন্তা ও তৎপরতায় কোনো কিছু যোগ করবে না, তাদের সঙ্গ বয়ে বেড়ানো অর্থহীন। এভাবেই একজন লেখককে লেখা ও পড়ার মধ্যে সমন্বয় করতে হয়। ছুটির দিনগুলোতে লেখার পরিমান বেশি হয় আর পাঠের জন্য ছুটিরদিন বলে কিছু নেই। লেখক একটা ছুটন্ত ট্রেনের যাত্রী। লেখককে ছুটতে হয় নতুন চিন্তার খোঁজে। ভাষার ঝর্ণাধারার খোঁজে। 

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। ‘বিশ্বের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত এই শহরে প্রথমবার এমন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির চলতি ধারার একদম বিপরীতমুখী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান পার্টি এক ‘শ্বেতকায়, খ্রিষ্টান ও রক্ষণশীল’ আমেরিকার কথা বলছেন।

জোহরান মামদানি শ্বেতকায় নন, তিনি বাদামি রঙের দক্ষিণ এশীয়। তিনি খ্রিষ্টান নন, একজন মুসলিম। তিনি অবশ্যই রক্ষণশীল নন, তিনি খোলামেলাভাবে একজন প্রগতিশীল, যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলতে দ্বিধা করেন না।

‘মামদানি একজন ভয়ানক মানুষ’, সাবধান করে বলেছেন অ্যান্ড্রু কুমো, মঙ্গলবারের নির্বাচনে যিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী। সারা জীবন ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য থাকলেও বাছাইপর্বে পরাজিত হয়ে তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এই নির্বাচনে তিনি একজন অদৃশ্য প্রার্থী। কুমোর পক্ষ নিয়ে তিনিও এই নির্বাচনের একজন অংশগ্রহণকারী। বড় ব্যবধানে মামদানির বিজয় হলে অনেকেই তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা হিসেবেই দেখবেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা। তিনি কোনোভাবেই চান না মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হোন। তাঁর বিবেচনায় মামদানি শুধু একজন পাক্কা কমিউনিস্টই নন, রীতিমতো উন্মাদ। এমন একজনকে নির্বাচিত করা হলে তিনি নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মামদানি একজন অবৈধ অভিবাসী। তা প্রমাণিত হলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মামদানি যদি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের চলতি অভিযানে বাধা দেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি।

ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়

শুধু নিউইয়র্কে নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আরও অন্তত তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হবে আগামীকাল, যার ফলাফল ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের ব্যাপারে একটি রেফারেন্ডাম বা জনরায় হবে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচন। এই দুই রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চ পরিষদেও ভোট গ্রহণ করা হবে। উভয় রাজ্যই ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই রাজ্যেই ট্রাম্পের হার হয়, কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় তিনি অনেক ভালো ফল করেন। দেখার বিষয়, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে এই দুই রাজ্যে ট্রাম্পের জনসমর্থন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে।

এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর গেভিন ন্যুসাম নির্বাচনী ম্যাপ পরিবর্তনের অনুমতি চেয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করেছেন। আগামী বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি বড় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তা ঠেকাতেই ট্রাম্পের নির্দেশে টেক্সাসের নির্বাচনী ম্যাপ ঢেলে সাজানো হয়েছে, যার ফলে রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে আরও পাঁচটি আসন নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হবে ভাবা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘ব্লু স্টেট’ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ন্যুসামের নির্দেশে নির্বাচনী ম্যাপ বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কংগ্রেসে পাঁচটি আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এই তিনটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই ভোটারদের মনে থাকবেন ট্রাম্প, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আইনি বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক শহরে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের নামে সেনাসদস্যদের পাঠাচ্ছেন তিনি। যেসব ডেমোক্রেটিক নেতাকে শত্রু মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট দেয়নি এমন ডেমোক্রেটিক রাজ্যের কেন্দ্রীয় অনুদান বাতিল করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একাধিক সরকারি দপ্তর আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে মাদক পাচার বন্ধের নামে ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমায় সামরিক হামলা চালাচ্ছেন। আমদানি শুল্কের নামে যে বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন, তার ফলে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছে।

গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

এসব কার্যকলাপের ফলে সারা দেশে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমেছে। অধিকাংশ জনমত জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থন ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় অন্য আর কোনো প্রেসিডেন্টের জনসমর্থনে এমন ধস নামেনি।

এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প কোনো রাজ্যেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচারে আসেননি। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে সরব সমর্থনও জানাননি। এর একটা সম্ভাব্য কারণ, জয়ী হবেন এমন প্রার্থীর সমর্থন দিতেই ট্রাম্প ভালোবাসেন। আগামীকালের নির্বাচনে তেমন সম্ভাবনা কম।

এই নির্বাচন যে ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়, তার আরেক প্রমাণ নির্বাচনী প্রচারণায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অংশগ্রহণ। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জাতীয় নেতা বলতে তিনিই সবেধন নীলমণি। শনিবার নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী মাইকি শেরিলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। একই দিন ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী এবিগেইল স্প্যানবার্গারের পক্ষেও প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। উভয় রাজ্যেই ওবামা কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতির কারণেই আমেরিকা আজ এক দুঃসময়ের মুখোমুখি।

জনমতে এগিয়ে মামদানি

ওবামা মামদানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেননি। তবে তিনি যে মামদানির পাশে আছেন, সে কথাও গোপন রাখেননি। মামদানির ক্যাম্পেইন থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ওবামা নিজেই ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর (মামদানির) বিজয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেছেন, মামদানির নির্বাচনী প্রচার ‘ইম্প্রেসিভ’ বা নজরে পড়ার মতো।

কুমো ক্যাম্প থেকে অহোরাত্রি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে প্রচার সত্ত্বেও মামদানি যেসব জনমত জরিপে এগিয়ে, তার একটি বড় কারণ মাঠপর্যায়ে তাঁর এই ‘ইম্প্রেসিভ’ প্রচারণা। শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি। এতে তিনি ফল পাচ্ছেন, গত দুই সপ্তাহে মামদানির সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ১০ শতাংশের মতো কমে এসেছে। নিউইয়র্কের চলতি মেয়র নির্বাচন থেকে এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় কুমোর লাভ হয়েছে সন্দেহ নেই, তবে এখনো মামদানির সঙ্গে যে ১৬-১৭ পয়েন্টের ব্যবধান রয়েছে, তা অতিক্রম করা কার্যত অসম্ভব, এই মত অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের।

ভূমিধস পরিবর্তন

একটা বিষয় স্পষ্ট। মেয়র নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে তা মার্কিন রাজনীতিতে প্রজন্মগত ও নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করবে। ভূমিধস পরিবর্তন আসবে ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে। মধ্যপন্থী ও ডানঘেঁষা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এই দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম জনপ্রিয়। এই দলে যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, করপোরেট আমেরিকার কাছে এদের হাত-পা বাঁধা। ইসরায়েল প্রশ্নে তাদের সমর্থন এখনো আগের মতো নতজানু।

পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল প্রশ্নে এখন নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে এমন আমেরিকানের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ, যা তিন বছর আগের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ধনতন্ত্রের প্রতিও আমেরিকানদের সমর্থন নিম্নগামী। গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি খোলামেলাভাবে অভিবাসনবিরোধী, দক্ষিণপন্থী, খ্রিষ্টবাদী ও রক্ষণশীল। চলতি সপ্তাহের নতুন উদ্বাস্তু নীতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শ্বেতকায় ও ইউরোপীয় আশ্রয়প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেবে। এই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায় নাগরিকবৃন্দ, ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে যারা সে দেশের সরকারের বৈষম্যের শিকার।

এই প্রতিক্রিয়াশীল রিপাবলিকান পার্টির বিপরীতে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য ওকাসিও-কর্তেজ ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। সবাই মানেন, মামদানির মতো তরুণ ও বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।

এই সম্ভাবনার কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর কথায়, এই দেশ করপোরেট আমেরিকার নির্দেশে চলবে, না তার রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ—এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ‘যদি আমরা দ্বিতীয় পথটি বেছে নিতে চাই, করপোরেট আমেরিকার বদলে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিই, তাহলে আমাদের মামদানির পাশে দাঁড়াতে হবে।’

কোন পথ বেছে নেবে নিউইয়র্ক, মঙ্গলবারেই তা নিশ্চিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স