ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। ব্যক্তিজীবনে চিকিৎসক হলেও কবি-প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক হিসেবেই অধিক পরিচিত। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালে মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এই ভাষাসংগ্রামী সংরক্ষণ করেছেন ভাষার ইতিহাস। লিখেছেন একুশের উপাখ্যান। ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য উপাধি পেয়েছেন টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কলকাতা থেকে। ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক আশিক মুস্তাফা ও সহসম্পাদক এমদাদুল হক মিলটন  

সমকাল: ভাষা অন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হলো। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। আপনারা যে স্বপ্ন নিয়ে ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, তার কতটা পূরণ হয়েছে? 

আহমদ রফিক: রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে; এটি সাফল্য। কিন্তু আন্দোলনের সময় আমরা তিনটি স্লোগান দিতাম– ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’ ও ‘সর্বস্তরে বাংলা চালু করো’। কিন্তু সর্বস্তরে বাংলা চালু হয়নি। সর্বস্তরে বাংলা চালুকরণের স্লোগানটি বুঝেশুনে দিয়েছি বলে এখন আর আমার মনে হয় না। হয়তো আবেগে বলেছিলাম। তখনকার বাস্তবতাটাও খেয়াল করিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা ৮ ফাল্গুন তো করিনি ওই সময়। করিনি কেন? কেন একুশে ফেব্রুয়ারি করেছি? তার মানে আমাদের জীবনে যে কনট্রাডিকশন, সেটাকে আমরা মান্য করে নিয়েছি। আন্দোলনকালে এবং পরবর্তী সময়ে আমি ঢাকা কলেজ, তৎকালীন জগন্নাথ কলেজসহ যেখানেই বক্তৃতা দিতে গিয়েছি, সেখানেই শিক্ষার্থীদের মা-বাবা বলেছেন, কী সব কথাবার্তা বলেন আপনারা– সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার। এটা আবার চলে নাকি? এখন মনে হয়, তারা তো সঠিক কথাই বলেছিলেন। কোনো কোনো বুদ্ধিমতী নারী বলেছেন, আমরা তো কাজকর্ম সবই করি খ্রিষ্টীয় হিসাবে। যা হোক, রাষ্ট্রভাষা বাংলাটাই হলো; বাকিগুলো আধা আধা হলো। এটা মেনেই আমরা চললাম। 

সমকাল: ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মূল্যবান বেশ কিছু গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থে ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস পাওয়া যায় না কেন? 

আহমদ রফিক: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস লিখেছি আমি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আমার পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। এটা একক কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। এর জন্য যে পরিমাণ অর্থশক্তি ও জনশক্তি প্রয়োজন, সেটা কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া ইতিহাসের চেয়ে ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্রের গুরুত্ব অনেক বেশি। পরবর্তীকালে দলিলপত্রের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করতে পারবে।

সমকাল: আপনি বিভিন্ন সময়ে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের কথা বলেছেন। ভাষাসংগ্রামীর তালিকাই যেখানে প্রকাশ করা হয়নি ৭৩ বছরে, সেখানে এসব স্থান সংরক্ষণ তো দূরের বিষয়।

আহমদ রফিক: আমার জানামতে, ভাষাসংগ্রামীর তালিকা করার চেষ্টা চলছে। হাইকোর্ট এটা নিয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাও অনেক আগের কথা। তবে শঙ্কাও আছে, ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পরে এই তালিকা কি সঠিকভাবে করা সম্ভব? ভাষাসংগ্রামীদের মধ্যে কতজন জীবিত আছেন? ভাষা আন্দোলনের সত্যিকার ঘটনা এখন আর কোনোভাবেই কি নির্ণয় করা সম্ভব? যারা প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবাদকারী তাদের সংখ্যা এখন কত? এই তালিকা প্রণয়নের আগে দরকার ছিল ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণ করা। এতে আগ্রহীরা গবেষণা করতে পারতেন। আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে এই সম্পর্কিত গবেষণায় কেউ কাজ করেন, আবার কেউ করেন না। অপ্রাসঙ্গিক কথা বলি, মানুষ কিন্তু চায় যুগ যুগ ধরে সে জীবিত থাকুক। কীভাবে? সন্তানসন্ততি দিয়ে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে দিয়ে। ইতিহাস দিয়ে। ইতিহাস মনে রাখে। আন্দোলন সব সময় হয় না। ট্রোজান যুদ্ধ, দাস বিদ্রোহে কত মানুষ যে মারা গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। আন্দোলন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গেলে বিভিন্ন পেশার মানুষ তাতে যদি যুক্ত হন, তাহলে সেটা সঠিক পথে চালিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আজ যদি এসব স্মৃতি সংরক্ষণ করা যেত তবে গবেষকরা গবেষণা করে আরও অনেক কিছু বের করে আনতে পারতেন। আমার কাছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা আসে। আমি তাদের বলি এই নিয়ে গবেষণা করতে। গবেষণার বিকল্প কিছুই নেই!  

সমকাল: আপনি কখন এবং কীভাবে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন; মনে পড়ে?

আহমদ রফিক: ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিমেদুরতায় ভুগি সবসময়। আসলে স্কুলজীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। সেটা অবিভক্ত বঙ্গে। সে সময় পাকিস্তানপন্থি রাজনীতি করিনি, বাম রাজনীতি করেছি। ১৯৪৭ সালে কলেজ জীবনে এসেও সেই পথে হেঁটেছি। ’৪৯ সালে ঢাকায় এসে স্বভাবতই সব গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় ভাষা আন্দোলনে যোগ দিই। হয়তো এ জন্যই একুশের আন্দোলন সম্পর্কে শুনতে ভালো লাগে; বলতে ভালো লাগে। তাই নয়? যারা আন্দোলন নিয়ে বলেন, তারা আমার কাছের মানুষ হয়ে যান। তবে একুশ নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু লিখছেন, যার সব ঠিক নয়। আমি শুধু একটা উদাহরণ দেব। ভাষা আন্দোলন নিয়ে কেউ কেউ বলেন, ২১ তারিখ সকালবেলায় আমরা মিছিল করে এসেছি। আসলে এটা ভুল তথ্য। একুশের সকালবেলা আমি ও আমার শাহজাদপুরের সিনিয়র বন্ধু বেরিয়ে দেখেছি– চারদিক সুনসান। কিছু নেই। দুই-একটা গরু ও ছাগল চরছে। আর ওই যে দূরে একটি রিকশা ও একজন যুবক যাচ্ছে। হয়তো স্টেশনে যাবে। এ রকম অবস্থার মধ্যে যদি কেউ বলে, আমরা সকালবেলায় স্লোগান দিতে দিতে এসেছি। এটি ভুল। এটি আমি সব সময় বলে এসেছি। আমি জোর গলায় বলতে পারি, যে জন্য আমি এবং আমার সিনিয়র বন্ধু আলী আজগর মিলে যখন গেলাম শহীদ মিনারে, তখন দেখেছি স্লোগান দিয়ে মিছিল আসছে। সেটা হয়েছে সকাল ১০টার পরে। সবাইকে বলা হয়েছিল, যেহেতু ১৪৪ ধারা দেওয়া হয়েছে– স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একসঙ্গে না বেরিয়ে দুই-তিনজন করে বের হওয়ার জন্য। যেহেতু চারজনের বেশি হলে ১৪৪ ধারা ভাঙা হয়, সে জন্য দুই-তিনজন করে বেরোনোর কথা আমরা বলেছি। আমার মনে আছে, পেছনের তৎকালীন রেললাইন ধরে অনেকে এসেছিল আমাদের পেছন পেছন। তো এভাবে ঢালাও যা কিছু লিখে দিলাম তা একুশের ইতিহাস হয়ে গেল, সেটা করা ঠিক নয়। লিখতে গেলে তথ্য সংগ্রহ দরকার। দালিলিক প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে। কতটা সত্য আছে; সত্য নেই– তা দেখে নেওয়া দরকার। একুশের ইতিহাস লিখতে গেলে সঠিকভাবে লিখতে হবে। সবার কাছে এটিই আমার অনুরোধ। 

সমকাল: ২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তরুণরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের সময় আপনারাও তো তরুণ ছিলেন।

আহমদ রফিক: হ্যাঁ, আমরা তরুণ ছিলাম। আমি খুব যে এই বিষয়ে খবর রেখেছি, তা নয়। তবে যে একেবারেই জানি না, তাও না। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলি, সবার কাছে অনুরোধ– যুগ যুগ ধরে যারাই আন্দোলন করেছেন; আন্দোলনের পরে আন্দোলন করেছেন। তার পরেও আন্দোলন করেছেন। সবার কাছেই আমাদের আহ্বান, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হোন। মিলিত হয়ে কাজ করুন। আন্দোলনের যেই ফল তা যেন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। তরুণদের পাশাপাশি যে কোনো আন্দোলনের মতো নিশ্চয় এই আন্দোলনেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যুক্ত ছিলেন। তাই বলি, সব বয়সের মানুষের মাঝে যেন আমরা সংযোগ সেতু তৈরি করতে পারি। এর মধ্যে যাতে ভুলভ্রান্তি যুক্ত না হয়; সেটা দেখা সব মানুষের একান্ত কর্তব্য। এই সংযোগ সেতুটা তৈরি করার জন্য আমি বরাবরই বলি। বলে আসছি। যে ক’দিন বেঁচে আছি বরাবরই বলব যে, মানসিক ঐক্যটা দরকার। এই আন্দোলনটা যাতে ভুল পথে না যায়। সঠিক পথে চলে। সঠিক পরিণামে পৌঁছায়। আমরা এক জাতি এক প্রাণ একতাবদ্ধ হয়ে যদি এগোতে পারি, আমাদের স্বপ্ন কিছু মাত্রায় হলেও সফল হবে।

সমকাল: আপনি রাজনীতি ছেড়ে লেখক জীবন বেছে নিয়েছিলেন একসময়। একজন সার্বক্ষণিক লেখকের জীবনে একাকিত্ব কি দুর্বিষহ? 

আহমদ রফিক: এক অর্থে হ্যাঁ। তবে এটা ভালো যে, এখন আগের মতো লোকজন আসছে না। আমিও নিতে পারছি না। এতে পরিশ্রম কমে গেছে। আরেক অর্থে সময়টা অসহনীয়। কেউ আসে না, খোঁজ নেয় না। পৃথিবীতে কেউই হয়তো এ জীবন চায় না! 

সমকাল: আপনি পাঁচ মিনিট কথা বলবেন, বলেছিলেন। এখন তো পৌনে এক ঘণ্টা হয়ে গেল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে?

আহমদ রফিক: বলছিলাম না, ভাষা নিয়ে কেউ কথা বলতে এলে তিনি আমার আপন হয়ে যান। আপনারাও আমার আপন হয়ে গেছেন। 

সমকাল: ভাষা প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ভাষা, আন্দোলন ও বাংলা নিয়ে যদি কিছু বলেন?

আহমদ রফিক: যুগে যুগে আন্দোলন হয়েছে। আমি দাস বিদ্রোহের কথা বলেছি। এ নিয়ে সিনেমাও হয়েছে। কী ভয়াবহতা! মানুষ যে কত নিষ্ঠুর হতে পারে– সেটার যেমন প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার মানুষ যে কতটা মানবিক হতে পারে– সেটাও নানাভাবে মানুষ প্রমাণ করেছে; এটাও বলেছি। আসলে মানবিক হতে গেলে কিছু বিষয় হিসাব করে চলতে হয়। মানুষের মানবিক দিকগুলো আমাদের যে কোনো যুগে হোক না কেন, সেগুলো একটু প্রাধান্য দিয়ে চলতে পারলে ভালো হয় বলে আমি মনে করি। আর সবাইকে আবারও বলি, আন্দোলনের যেই ফল তা যেন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। সঠিক পরিণামে পৌঁছায়। সব বয়সের মানুষের মাঝে যেন আমরা মানসিক সংযোগ সেতু তৈরি করতে পারি। এতে দেশ যেমন এগিয়ে যাবে, তেমনি এগিয়ে যাবে আমাদের বাংলা ভাষাও।  

সমকাল: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আহমদ রফিক: আপনাদেরও ধন্যবাদ। সমকালকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ পাঠকদেরও। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য র জন ত এক শ র আম দ র কর ছ ন আপন র সমক ল দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’

তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’

বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউট

কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।

আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • মানিব্যাগ তুলতে সেপটিক ট্যাংকে নেমে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, ছোট ভাই হাসপাতালে
  • সিলেটে সহপাঠীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন