বিএনপির শীর্ষ তিন পদে একক প্রার্থী চূড়ান্ত
Published: 24th, February 2025 GMT
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যাত্রা শুরুর তিন বছর পর হতে যাচ্ছে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিলরদের ভোটে ব্যালটের মাধ্যমে শীর্ষ পদে নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলেও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একক প্রার্থী থাকায় সম্মেলন হতে যাচ্ছে ভোটের আয়োজন ছাড়াই।
রোববার কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আলী আক্কাস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়– মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং মনোনয়নপত্র জমাদানকারী কোনো প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় তিন পদের প্রার্থীদের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে তালিকা প্রকাশ করা হলো।
তিন প্রার্থী হচ্ছেন– সভাপতি পদে উদবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক পদে ইউসুফ মোল্লা টিপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাজিউর রহমান রাজিব।
জানা গেছে, কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি। এতে ব্যালটের মাধ্যমে মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের দুই হাজার ৭২৭ জন কাউন্সিলর প্রতীক সংবলিত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে শীর্ষ ওই তিন পদে প্রার্থী নির্বাচিত করার কথা ছিল। তবে কোনো পদেই একাধিক প্রার্থী না থাকায় আর ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না।
সম্মেলনে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে প্রধান বক্তা থাকবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি থাকবেন দলের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ও কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া।
কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী আক্কাস বলেন, তিন শীর্ষ পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রোববার ৩টি পদেই একক ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। ব্যালটে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি থাকলেও একক প্রার্থী থাকায় আর ভোট হচ্ছে না।
দলের সদস্য সচিব এবং আসন্ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু সমকালকে বলেন, ‘ইতোপূর্বে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা নেতৃত্ব সৃষ্টি করেছি। আমরা চেয়েছিলাম মহানগরের সম্মেলন ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসুক। তবে ভোট না হলেও উৎসবমুখর এ সম্মেলনে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড থেকে ২ হাজার ৭২৭ জন কাউন্সিলর, চার হাজার প্রতিনিধিসহ প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে।’ তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরবর্তীতে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক করা হবে। তবে কত সদস্যের হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
২০২২ সালের ৩০ মে প্রথমবারের মতো কুমিল্লা মহানগর বিএনপির ৪৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আমিরুজ্জামান আমিরকে আহ্বায়ক ও কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সদস্য সচিব করা হয়। ওই কমিটিতে উদবাতুল বারী আবুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই আমিরুজ্জামান আমিরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই বছরের ৩১ আগস্ট উৎবাতুল বারী আবুকে আহ্বায়ক এবং ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউস ফ ম ল ল ব এনপ র সদস য নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না, প্রকাশ হয়নি খসড়া ভোটার তালিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। ১৩ এপ্রিল রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনী আচরণবিধি এবং গতকাল সোমবার রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৫ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলেও এখনো কোনো সভা হয়নি। এমন অবস্থায় রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব প্রথম আলোকে বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনী আচরণবিধি এবং খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগিরই দুটি বিষয় একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে। রোডম্যাপের পরবর্তী ধাপগুলোর কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রাকসু নির্বাচনের দাবি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে রাকসু বিধিমালার খসড়া সংশোধনী সম্পর্কে পরামর্শ ও মতামত দিয়েছেন। ১৩ এপ্রিল রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে তা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। ১৫ এপ্রিল রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদন এবং রাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সাত সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। তবে কমিশন এখন পর্যন্ত সভা করতে পারেনি। এ ছাড়া গতকাল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা হয়নি।
রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়, ৩০ এপ্রিল ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি গ্রহণ ও ১৩ মে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ১৫ মে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও ১৯ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ২০ মে মনোনয়নপত্র বাছাই, ২২ মে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপর ২৭ মে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় আগামী জুনে রাকসুর নির্বাচন হবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মাসুদ কিবরিয়া বলেন, ‘প্রশাসন বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করছে। হঠাৎ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। অথচ রাকসু যে শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি, সেই বিষয়ে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে রাকসুকে মুলার মতো ঝুলিয়ে রেখে প্রশাসন ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সুবিধা হাসিল করে নিচ্ছে।
রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করতে না পারার পেছনে প্রশাসনের দুর্বলতা ও সদিচ্ছার অভাব দেখছেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ তাহের। রাকসুকে সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল মিঠু।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, রাকসু নিয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছা শুরুর দিকে ভালোই ছিল। তবে রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ না হওয়ার পেছনে প্রশাসনের কয়েকজন ব্যক্তির হাত আছে। তাঁরা এই মুহূর্তে রাকসু নির্বাচন চাচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে জুনে নির্বাচন হওয়া সম্ভব না।
আরও পড়ুনরাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা হয়নি, জুনে নির্বাচন নিয়ে সংশয়২০ এপ্রিল ২০২৫জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখন পর্যন্ত কোনো সভা ডাকেননি। তাই তাঁরা শুরু করতে পারছেন না। রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, রোডম্যাপ ঘোষণার এখতিয়ার উপাচার্যের নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। আগে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা বর্তমান বিধিমালার পরিপন্থী। নির্বাচন কীভাবে অর্থবহ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আগের রোডম্যাপ অনুযায়ী চললে খুব ভালো কিছু আশা করতে পারছেন না। বর্তমান যে বিধিমালা পাস হয়েছে, সেই আলোকে প্রশাসন সদিচ্ছা রাখলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব।
সভা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। কয়েক দিন আগে চিঠি এসেছে বলে শুনেছেন। তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় খুলে দেখতে পারেননি। চূড়ান্ত বিধিমালা অনুযায়ী যা করলে ভালো হবে, সেই সিদ্ধান্তই নেবেন। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ঘোষিত রোডম্যাপটি পর্যালোচনা করা হবে। রোডম্যাপের তারিখগুলো কিছুটা আগে-পরে হতে পারে।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুমোদন, নির্বাচন কমিশন গঠন১৬ এপ্রিল ২০২৫