রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এসব সাক্ষ্যে তৎকালীন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদে পদে গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রের কথা উঠে এসেছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে কমিশন মনে করছে, এটি কোনো সাধারণ বিদ্রোহের ঘটনা নয়। এটি ছিল বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহ সামনে রেখে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা।

এ অবস্থায় গাফিলতি বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন ১৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কমিশন পুলিশের ইমিগ্রেশনকে চিঠি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’। প্রতিবছর দিনটি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এ বিষয়ে গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়।

হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদ্‌ঘাটনে সরকার সাত সদস্যের একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন জারির ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।

জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.

) আ ল ম ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগসূত্রসহ যেসব ষড়যন্ত্রের কথা এসেছে, সব কটি সামনে রেখে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’

তদন্ত কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নিয়ে পাওয়া সাক্ষ্য ও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করছে। দেশীয় ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার যোগসূত্র, সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী এটি নিশ্চিত যে, এটি কোনো সাধারণ বিদ্রোহের ঘটনা নয়। এটি ছিল বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহ সামনে রেখে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা। এর একটি কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, হত্যাকাণ্ডের ৭ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা এক মাস আগে পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাদের মেরে ফেলতে হবে—সৈনিকদের সঙ্গে এত অল্প সময়ে তো কর্মকর্তাদের এমন বিরোধ থাকতে পারে না। এ জন্য এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার নেপথ্যে কারা ছিল—তা খুঁজে বের করাকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কমিশন।

কমিশন জানিয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে লে. জেনারেল আছেন তিনজন, মেজর জেনারেল দুজন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পাঁচজন, কর্নেল চারজন, লে. কর্নেল চারজন, মেজর সাতজন, ক্যাপ্টেন দুজন, বিডিআর সদস্য সাতজন ও শহীদ পরিবারের সদস্য তিনজন। তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা যাঁরা আগে সরকারের ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত ছিলেন, তাঁদেরও সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ডাকা হতে পারে বলে কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে।

দায়িত্বে গাফিলতির নেপথ্য কারণ নিয়েও তদন্ত

হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাবাহিনী কেন পিলখানায় উদ্ধার অভিযানে গেল না বা যেতে পারল না, তাদের কোথায় গাফিলতি ছিল—এ বিষয়ে সাক্ষীদের অনেকে কথা বলেছেন বলে কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে।

কমিশন সূত্র আরও জানায়, এই উদ্ধার অভিযান না করা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে যাঁরা কথা বলেছেন, প্রতিবাদ করেছেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদের প্রায় সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। অপরদিকে যাঁদের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এসেছে, তাঁরা পরে পুরস্কৃত হয়েছেন বলেও সাক্ষ্য দিয়েছেন কেউ কেউ।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত যাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন, যাঁদের নাম এসেছে আদালতে তাঁদের অপরাধ বিচারাধীন। এ জন্য এ ঘটনায় নতুন করে যাঁদের নাম আসবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। সে ক্ষেত্রে সরকার চাইলে মামলা রিভাইভ (পুনঃপ্রচলন) করতে পারে। অথবা এমনও হতে পারে নতুন করে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা হতে পারে। নতুনভাবে তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে। তবে এ বিষয়গুলো এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কমিশন সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আগে থেকে জানতেন। তৎকালীন বিডিআরের কর্মকর্তাদের কারও কারও কাছে এ বিষয়ে সংবাদ এসেছিল। তবে তাঁরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ড চলাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধানকে তাঁর কাছে নিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন বলেও কমিশনকে বলেছেন সাক্ষীরা। ওই সময়ের সেনাপ্রধানের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াকে সেনা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে মনে করছে কমিশন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুটি তদন্ত কমিশন হয়েছিল। ওই দুটি কমিশনের প্রতিবেদনও যাচাই-বাছাই করছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন। তবে ওই প্রতিবেদন তৈরির সময় আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকে ডাকা হয়েছিল, তাঁদের কমিশন স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেনি বলে জানতে পেরেছে কমিশন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ষড়যন ত র তৎক ল ন ব ড আর আওয় ম র একট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জেলা কৃষকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন 

নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ডা. শাহীন মিয়া।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ডা. শাহীন মিয়া আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

এসময়ে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব আলম মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আরমান, ফজলু মেম্বার, মনির মল্লিক, শাহাদাত হোসেন, ওবায়দুর রহমান, শাহ আল বেপারী, সেলিম হোসেন দিপু।

সংবাদ সম্মেলনে শাহীন মিয়া বলেন, কোন চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর এদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র যেকোনো অঙ্গ সংগঠনের পদে থাকতে পারে না। নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হিসেবে আমার সংগঠনে যারা চাঁদাবাজ, দখলবাজ স্বৈরাচারের দোসর আমি তাদেরকে বহিষ্কার করেছি। 

আওয়ামীলীগের সাথে শাহীনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনাদের ব্যাপারে পাল্টা তিনি বলেন, রূপগঞ্জ থানার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে তাকে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ সালে সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

এছাড়াও বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনে নজরুলের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল না। সে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম হত্যা মামলার আসামি রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের যোগসাজসে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক মৌজার আবাদী জমিতে বালি ভরাট করে সাধারণ কৃষকের দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল। 

এছাড়াও অসহায় ও সাধারন মানুষের বসতবাড়ি সহ জবরদখল করে নেয় তারা। নজরুল দোসরদের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করেছিল। এভাবে বিগত ১৭ বছরে স্বৈরাচার সরকারের আস্থাভাজন হয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন এই নজরুল। সে হলো মৌসুমী পাখি। 

তিনি বলেন, ১৭ টি বছর জুলুম নির্যাতন সহ্য করে এই নারায়ণগঞ্জে কৃষক দলকে হাতের মুঠোয় রেখেছি আজ সেই কৃষক দলের ভাবমূতি ক্ষুন্ন করতে এই নজরুল স্বৈরাচারের সাথে হাত মিলিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের মানহানি করেছে।

আমি এরই মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বিরুদ্ধে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। বিষয়টি আমি আমার হাইকমান্ডকে অবগত করেছি।

তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সার্জন মোমেনকে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দলীয় শৃংখল বঙ্গের দায়ে ১০ই এপ্রিল সভাপতি পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। সে বিগত সতেরো বছর নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। ৫ ই আগস্টের পর ৪০ বিঘা জমির উপর মাছের প্রজেক্ট দখল করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মোমেন। 

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় সে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তার নিজের জন্য। এখনো সে এলাকায় সাধারণ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে এর যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে এসেছে এবং অনেক সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। যে সমস্ত মানুষ কোন দল করে না দল বুঝেনা। এ সমস্ত অভিযোগের কারণে তাকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে নজরুলসহ কৃষকদলের বেশ কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় শাহীনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে টাকার বিনিময়ে পুনর্বাসনসহ বেশ কিছু অভিযোগ  আনেন তারা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জেলা কৃষকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন