জাতীয় শহীদ সেনা দিবস: ৩৭ জনের সাক্ষ্য, গাফিলতির বর্ণনা
Published: 25th, February 2025 GMT
রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এসব সাক্ষ্যে তৎকালীন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদে পদে গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রের কথা উঠে এসেছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে কমিশন মনে করছে, এটি কোনো সাধারণ বিদ্রোহের ঘটনা নয়। এটি ছিল বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহ সামনে রেখে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা।
এ অবস্থায় গাফিলতি বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন ১৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কমিশন পুলিশের ইমিগ্রেশনকে চিঠি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’। প্রতিবছর দিনটি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এ বিষয়ে গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়।
হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদ্ঘাটনে সরকার সাত সদস্যের একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন জারির ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.
তদন্ত কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নিয়ে পাওয়া সাক্ষ্য ও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করছে। দেশীয় ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার যোগসূত্র, সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী এটি নিশ্চিত যে, এটি কোনো সাধারণ বিদ্রোহের ঘটনা নয়। এটি ছিল বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহ সামনে রেখে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা। এর একটি কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, হত্যাকাণ্ডের ৭ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা এক মাস আগে পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাদের মেরে ফেলতে হবে—সৈনিকদের সঙ্গে এত অল্প সময়ে তো কর্মকর্তাদের এমন বিরোধ থাকতে পারে না। এ জন্য এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার নেপথ্যে কারা ছিল—তা খুঁজে বের করাকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কমিশন।
কমিশন জানিয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে লে. জেনারেল আছেন তিনজন, মেজর জেনারেল দুজন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পাঁচজন, কর্নেল চারজন, লে. কর্নেল চারজন, মেজর সাতজন, ক্যাপ্টেন দুজন, বিডিআর সদস্য সাতজন ও শহীদ পরিবারের সদস্য তিনজন। তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা যাঁরা আগে সরকারের ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত ছিলেন, তাঁদেরও সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ডাকা হতে পারে বলে কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
দায়িত্বে গাফিলতির নেপথ্য কারণ নিয়েও তদন্ত
হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাবাহিনী কেন পিলখানায় উদ্ধার অভিযানে গেল না বা যেতে পারল না, তাদের কোথায় গাফিলতি ছিল—এ বিষয়ে সাক্ষীদের অনেকে কথা বলেছেন বলে কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
কমিশন সূত্র আরও জানায়, এই উদ্ধার অভিযান না করা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে যাঁরা কথা বলেছেন, প্রতিবাদ করেছেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদের প্রায় সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। অপরদিকে যাঁদের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এসেছে, তাঁরা পরে পুরস্কৃত হয়েছেন বলেও সাক্ষ্য দিয়েছেন কেউ কেউ।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত যাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন, যাঁদের নাম এসেছে আদালতে তাঁদের অপরাধ বিচারাধীন। এ জন্য এ ঘটনায় নতুন করে যাঁদের নাম আসবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। সে ক্ষেত্রে সরকার চাইলে মামলা রিভাইভ (পুনঃপ্রচলন) করতে পারে। অথবা এমনও হতে পারে নতুন করে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা হতে পারে। নতুনভাবে তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে। তবে এ বিষয়গুলো এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কমিশন সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আগে থেকে জানতেন। তৎকালীন বিডিআরের কর্মকর্তাদের কারও কারও কাছে এ বিষয়ে সংবাদ এসেছিল। তবে তাঁরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ড চলাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধানকে তাঁর কাছে নিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন বলেও কমিশনকে বলেছেন সাক্ষীরা। ওই সময়ের সেনাপ্রধানের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াকে সেনা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে মনে করছে কমিশন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুটি তদন্ত কমিশন হয়েছিল। ওই দুটি কমিশনের প্রতিবেদনও যাচাই-বাছাই করছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন। তবে ওই প্রতিবেদন তৈরির সময় আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকে ডাকা হয়েছিল, তাঁদের কমিশন স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেনি বলে জানতে পেরেছে কমিশন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ষড়যন ত র তৎক ল ন ব ড আর আওয় ম র একট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা
কারিগরি শিক্ষার্থীদের গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণাকে ‘সহিংস আন্দোলনের উসকানি ও গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ‘প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আলোচনায় বসে। দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারী—উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ডাকে। সবার যুক্তিতর্ক সমানভাবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়, যাতে কারও প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য না হয়।
লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আলোচনার টেবিলে সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আজ গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ডিপ্লোমাধারীদের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাই অবরোধ ডেকে সহিংস আন্দোলনের জন্য ক্রমাগত উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।
আলোচনার টেবিল ছেড়ে কেন জনদুর্ভোগ করে অবরোধের উসকানি দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, এগুলো শুধুই বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা ও গভীর ষড়যন্ত্র, যা প্রথাগত আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আলোচনার টেবিল ছেড়ে যাঁরা অবরোধ করে দেশে নৈরাজ্য তৈরির উসকানি দিচ্ছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ও এজেন্ডা খতিয়ে দেখা দরকার।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য গায়ের জোর খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবরোধের প্রয়োজন নেই। যৌক্তিক দাবি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।