অদম্য সংগ্রাম ও সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা পেলেন চার নারী। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন এই কীর্তিময়ী নারীরা। তাঁরা হলেন হাজেরা বেগম, শারমিন রিমা, জাহানারা ইসলাম ও নাইমা খাতুন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা ২০২৪’ অনুষ্ঠানে তাঁদের সম্মাননা জানানো হয়। সমাজকল্যাণ, সাংবাদিকতা, ব্যবসায় উদ্যোগ ও ক্রীড়া—এই চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা দেওয়া হয়। ১৯ বছর ধরে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড ‘রাঁধুনী’ এই সম্মাননা দিয়ে আসছে।

পরিচয়–সংকটে থাকা একঝাঁক শিশুকে কাছে টেনে নিয়েছেন হাজেরা বেগম। তাদের শিক্ষা ও জীবনবোধের আলোয় স্বনির্ভর করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কীর্তিমতী হিতৈষী হাজেরার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন ইনোভেশন ফর ওয়েল বিয়িং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন মনিরা রহমান।

জলবায়ু, শিশু অধিকার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি বিষয়ে প্রতিবেদন করে সাহসিকতার প্রমাণ রেখে চলেছেন সাংবাদিক শারমিন রিমা। চট্টগ্রামের কীর্তিমতী এই সাংবাদিকের হাতে ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা।

কক্সবাজারের ‘সবুজ উদ্যোক্তা’ হিসেবে খ্যাত জাহানারা ইসলাম। কক্সবাজারের পার্বত্য অঞ্চলে বনায়ন ও নার্সারি সম্পর্কিত নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন তিনি। কীর্তিমতী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া জাহানারার হাতে ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হেড অব উইমেনস উইং হাবিবুল বাশার।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক পদকজয়ী, কারাতে ২য় ড্যান অর্জনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ক্রীড়াবিদ ও কারাতে প্রশিক্ষক নাইমা খাতুন। ‘এখন টিভি’র সম্পাদকীয় প্রধান তুষার আবদুল্লাহ কীর্তিমতী ক্রীড়াবিদ নাইমার হাতে ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন।

সম্মাননা গ্রহণের পর নিজেদের অনুভূতির কথা জানান কীর্তিমতী নারীরা। তাঁদের সবার বক্তব্যে উঠে আসে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাধাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার কথা। পরিবার ও কাছের মানুষদের সমর্থনের গুরুত্ব উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, শুধু আইন করে নয়, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলেই মেয়েদের মুক্তি মেলে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো.

পারভেজ সাইফুল বলেন, ‘আজকের এই আয়োজন শুধু সম্মাননা প্রদানের জন্য নয়, বরং নারীর অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের উদ্‌যাপন বলেই মনে করি।’ তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত না করে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। অধিকার ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীরা যখন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তখনই সমাজ এগিয়ে যায়।

হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘উইমেন’স উইংয়ের দায়িত্ব পেয়ে বুঝেছি, এখানে অনেক কাজ করার জায়গা আছে। তবে যখনই মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে পরিকল্পনা করি, তখনই শুনতে হয় মেয়েদের ব্যাপার একটু কম করে তুলে ধরো।’ তিনি বলেন, ছেলেদের তুলনায় মেয়ে ক্রিকেটারের সংখ্যা অনেক কম। আবার সুযোগও কম পায়। এরপরও মেয়েরা এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়নশিপসহ অনেক অর্জন করেছে।

চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা বলেন, নারীদের সৃজনশীলতা শুধু অন্তরে নয়, বাইরে বের করে আনতে হবে। সেটার মাধ্যমে যখন সে সমাজ ও দেশের জন্য অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে এবং কাজে লাগাতে পারে, একজন নারী তখনই সফল ও সার্থক। অনেক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও নারী যদি সাহসী হয়, যদি চেতনায় অসম্ভব শক্তি রাখে, তাহলে সে অবশ্যই এগিয়ে যেতে পারে। কোনো বাধাই তাকে আটকে রাখতে পারে না।

মনিরা রহমান জানান, পথে–প্রান্তরে, শহরে, অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নারীরা কাজ করছে। সমাজ যে তার কাজকে গ্রহণ করছে, মূল্য দিচ্ছে, এই সম্মাননা সেটাই প্রমাণিত করে।

তুষার আবদুল্লাহর বক্তব্যেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের নানা সাহসিকতা ও সফলতার কথা উঠে আসে।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে মঞ্চে আহ্বান করা হয় ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা-২০২৪’–এর নির্বাচকদের। এবারের নির্বাচক প্যানেলের সদস্য ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুটিপার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিমা মিজি, সাংবাদিক মোস্তফা মামুন এবং প্রযুক্তিসেবা প্রতিষ্ঠান ডিক্যাস্টালিয়ার পরিচালক সাবিলা ইনুন।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা নিয়ে আসেন পূজা সেনগুপ্ত ও তাঁর দল তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সাব্বির জামান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র ক র ত মত

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, র‌্যাগিংসহ নানা অভিযোগ এনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ১০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রত্ব ও সনদপত্র বাতিল করেছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বহিষ্কৃতরা হলেন, বিশ্বজিৎ শীল, সাইদুজ্জামান পাপ্পু, জাহাঙ্গীর আলম অপু, মহিউদ্দিন মুন্না, হাসু দেওয়ান, আকিব মাহমুদ, আবির, অন্তু কান্তি দে, জাকির হোসেন ও রিয়াদ।  

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে, তাদের সনদপত্র বাতিল করা হয়েছে। যারা এখনো অধ্যয়নরত তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।  

আরো পড়ুন:

ছাত্রলীগের বিচারসহ ৯ দাবি জবি ছাত্রদলের

রাবিতে প্রভাষক হলেন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা, ক্ষোভ

ভিসি আরো জানান, ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়, যা সর্বশেষ রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অনুমোদিত হয়েছে। গত পরশু তাদের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। 

বহিষ্কৃত ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব মাহমুদ বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট মাসে এমন কোনো ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটেনি, যে কারণে আমাদের বহিষ্কার করা হতে পারে। ক্যাম্পাসে কোটা প্রত্যাহার দাবিতে একদিন বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে প্রোগ্রাম হয়েছে, সেদিনও কিছু হয়নি। আমরা সম্পূর্ণভাবে ভিসি ও ছাত্রদল-শিবিরের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। একদিন নিশ্চয়ই এই অবিচারের বিচারও হবে।’’  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে রিজেন্ট বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের কিছু বলার নেই। শুধু জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনাই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনাও আছে অভিযোগে। তারই প্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’’ 

২০১৫ সালে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত কমিটি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের ব্যানারে নানান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যেত। বহিষ্কৃত ও সনদ বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন ৫ আগস্টের আগে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছু দিন কারাবরণ শেষে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা বহিষ্কৃত ১০ জনের একজন বিশ্বজিৎ শীল।

ঢাকা/শংকর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
  • ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
  • এ দেশে খুচরা ব্যাংকিং বন্ধ করে দিচ্ছে এইচএসবিসি
  • রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল
  • একটি গাছ কাটলে তার বদলে অন্তত ১০টি গাছ লাগাতে হবে : হোসাইন
  • জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ, শিশুদের জন্য মা-বাবা পাবেন ভাতা
  • সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান