‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা ২০২৪’ পেলেন চার নারী
Published: 28th, February 2025 GMT
অদম্য সংগ্রাম ও সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা পেলেন চার নারী। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন এই কীর্তিময়ী নারীরা। তাঁরা হলেন হাজেরা বেগম, শারমিন রিমা, জাহানারা ইসলাম ও নাইমা খাতুন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা ২০২৪’ অনুষ্ঠানে তাঁদের সম্মাননা জানানো হয়। সমাজকল্যাণ, সাংবাদিকতা, ব্যবসায় উদ্যোগ ও ক্রীড়া—এই চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা দেওয়া হয়। ১৯ বছর ধরে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড ‘রাঁধুনী’ এই সম্মাননা দিয়ে আসছে।
পরিচয়–সংকটে থাকা একঝাঁক শিশুকে কাছে টেনে নিয়েছেন হাজেরা বেগম। তাদের শিক্ষা ও জীবনবোধের আলোয় স্বনির্ভর করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কীর্তিমতী হিতৈষী হাজেরার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন ইনোভেশন ফর ওয়েল বিয়িং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন মনিরা রহমান।
জলবায়ু, শিশু অধিকার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি বিষয়ে প্রতিবেদন করে সাহসিকতার প্রমাণ রেখে চলেছেন সাংবাদিক শারমিন রিমা। চট্টগ্রামের কীর্তিমতী এই সাংবাদিকের হাতে ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা।
কক্সবাজারের ‘সবুজ উদ্যোক্তা’ হিসেবে খ্যাত জাহানারা ইসলাম। কক্সবাজারের পার্বত্য অঞ্চলে বনায়ন ও নার্সারি সম্পর্কিত নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন তিনি। কীর্তিমতী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া জাহানারার হাতে ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হেড অব উইমেনস উইং হাবিবুল বাশার।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক পদকজয়ী, কারাতে ২য় ড্যান অর্জনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ক্রীড়াবিদ ও কারাতে প্রশিক্ষক নাইমা খাতুন। ‘এখন টিভি’র সম্পাদকীয় প্রধান তুষার আবদুল্লাহ কীর্তিমতী ক্রীড়াবিদ নাইমার হাতে ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন।
সম্মাননা গ্রহণের পর নিজেদের অনুভূতির কথা জানান কীর্তিমতী নারীরা। তাঁদের সবার বক্তব্যে উঠে আসে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাধাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার কথা। পরিবার ও কাছের মানুষদের সমর্থনের গুরুত্ব উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, শুধু আইন করে নয়, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলেই মেয়েদের মুক্তি মেলে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো.
হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘উইমেন’স উইংয়ের দায়িত্ব পেয়ে বুঝেছি, এখানে অনেক কাজ করার জায়গা আছে। তবে যখনই মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে পরিকল্পনা করি, তখনই শুনতে হয় মেয়েদের ব্যাপার একটু কম করে তুলে ধরো।’ তিনি বলেন, ছেলেদের তুলনায় মেয়ে ক্রিকেটারের সংখ্যা অনেক কম। আবার সুযোগও কম পায়। এরপরও মেয়েরা এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়নশিপসহ অনেক অর্জন করেছে।
চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা বলেন, নারীদের সৃজনশীলতা শুধু অন্তরে নয়, বাইরে বের করে আনতে হবে। সেটার মাধ্যমে যখন সে সমাজ ও দেশের জন্য অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে এবং কাজে লাগাতে পারে, একজন নারী তখনই সফল ও সার্থক। অনেক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও নারী যদি সাহসী হয়, যদি চেতনায় অসম্ভব শক্তি রাখে, তাহলে সে অবশ্যই এগিয়ে যেতে পারে। কোনো বাধাই তাকে আটকে রাখতে পারে না।
মনিরা রহমান জানান, পথে–প্রান্তরে, শহরে, অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নারীরা কাজ করছে। সমাজ যে তার কাজকে গ্রহণ করছে, মূল্য দিচ্ছে, এই সম্মাননা সেটাই প্রমাণিত করে।
তুষার আবদুল্লাহর বক্তব্যেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের নানা সাহসিকতা ও সফলতার কথা উঠে আসে।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে মঞ্চে আহ্বান করা হয় ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা-২০২৪’–এর নির্বাচকদের। এবারের নির্বাচক প্যানেলের সদস্য ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুটিপার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিমা মিজি, সাংবাদিক মোস্তফা মামুন এবং প্রযুক্তিসেবা প্রতিষ্ঠান ডিক্যাস্টালিয়ার পরিচালক সাবিলা ইনুন।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা নিয়ে আসেন পূজা সেনগুপ্ত ও তাঁর দল তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সাব্বির জামান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র ক র ত মত
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।