হাওরে কাঁচা মরিচ চাষে লোকসানের মুখে চাষিরা
Published: 5th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জ জেলার হাওর এলাকাখ্যাত আজমিরীগঞ্জ। এই উপজেলায় কাঁচা মরিচের ক্ষেতে এবার দেখা দিয়েছিল ব্লাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগ। পাশাপাশি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বাজারে দাম না মেলায় কাঁচা মরিচ চাষ করে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ইউনুস আলী তার ৫৬ শতক জমিতে ব্র্যাক শিখা জাতের কাঁচা মরিচ চাষ করেছেন। এবার জমি থেকে প্রথম দফায় ৭ মণ মরিচ উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। এখন দ্বিতীয় দফায় মরিচ উত্তোলন চলছে। পাইকারের কাছে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। আরো কয়েক দফা মরিচ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এই কৃষক।
গত বছর মরিচ চাষে লাভবান হলেও এবার বীজ রোপণের সময় ব্লাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দেওয়ায় দুই দফায় জমি চাষ করতে হয়েছে বলে দ্বিগুণ খরচ পড়েছে। এজন্য এবার মরিচ চাষে লোকসানের মুখে পড়েছেন ইউনুস আলী। একইভাবে লোকসানের কথা জানিয়েছেন নোয়াগাঁও গ্রামের অন্যান্য চাষিরা।
আরো পড়ুন:
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
হাওর পাড়ের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
মাঠভরা সবুজের হাসি, মাঘের বৃষ্টিতে বেড়েছে ঝিলিক
আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর রোডের পিরিজপুর গ্রাম সংলগ্ন বোরো ধানের কাছে শুকনো ফসলের জমিতে অনেকে কাঁচা মরিচ আবাদ করেছেন। বর্তমানে মালিক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ মিলে জমি থেকে মরিচ উত্তোলনের কাজ করছেন।
সোমবার (৩ মার্চ) সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যদের নিয়ে জমি থেকে কাঁচা মরিচ উত্তোলন করছেন শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, “গত বছর মরিচ চাষে লাভ হয়েছিল। এবার লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২৮ শতক জমিতে ব্র্যাক শিখা জাতের মরিচ চাষ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পেরেছি। সামনে জমি থেকে আরো কিছু পরিমাণে মরিচ উত্তোলন করতে পারব। আশা করছি, ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব। এরপরও লোকসান হবে।”
অপর চাষি শরীফ উদ্দিনের ৫৬ শতক জমির কাঁচা মরিচ চারা প্রথম দফায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয় দফায় চারা রোপণের পর ফের ছত্রাকজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ফলে তৃতীয় দফায় ফসলটি আবাদ করতে হয়েছে তাকে। এতে তার ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। অল্প কয়েকদিন পর মরিচ বিক্রি করতে পারলেও লাভবান হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাইকারি মরিচের বিক্রেতা আজমান মিয়া বলেন, “আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে কাঁচা মরিচ কিনছি। পরে অল্প লাভে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মরিচ বিক্রি করে দিচ্ছি। সামনে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৮০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে। তার মধ্যে কাঁচ মরিচের আবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, ‘‘উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন।”
ঢাকা/মামুন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর চ ষ কর কর ছ ন উপজ ল করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে
জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।
আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।
এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।
জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।
সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।