অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে ভারতের চেয়ে এগিয়ে চীন
Published: 11th, March 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে বেইজিং বেশ এগিয়ে। অন্যদিকে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর অলটারনেটিভসের ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
ওই জনমত জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতার ৬১ শতাংশ মত দিয়েছেন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হচ্ছে। ঢাকা বেইজিংয়ের সম্পর্ক বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মনে করেন। ঢাকা নয়াদিল্লির সম্পর্কের বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন মাত্র ১১ শতাংশ উত্তরদাতা।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ওই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তি এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দেশের ৩২ জেলায় অনলাইন-অফলাইনে জরিপটি চালানো হয়। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৬৮১ জন অফলাইনে এবং দুই হাজার ৬৭৪ জন অনলাইনে জরিপে অংশ নেন। বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি নিয়ে এ নিয়ে তৃতীয়বার এ ধরনের জরিপ চালানো হলো।
জরিপের ফল উপস্থাপন করেন সেন্টার পর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মহসিন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোন পথে এগোচ্ছে জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মত দেন। ভালো অথবা মন্দ কোনোটাই নয় এমন মত দেন ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ চীন সম্পর্কের বিষয়ে ভালো মত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের ভালো সম্পর্কের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮ শতাংশ। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ৭৯, ৭৪ ও ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে কীভাবে দেখে, তা জানতে চাওয়া হয় উত্তরদাতাদের কাছে। এ বিষয়ে যথাক্রমে চীনের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মত দিয়েছেন। জরিপের পাঁচটি দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে নেতিবাচক মত দিয়েছেন উত্তরদাতারা, যা ৫৯ শতাংশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইয়াও ওয়েন বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীর বেশির ভাগ উত্তরদাতা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করেছেন, যা সম্পর্কের বিষয়ে ঐকমত্যের ব্যাপকতার প্রতিফলন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাদের আস্থার বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদ দেখিয়েছেন।
ইয়াও ওয়েন বলেন, এটি আমাদের জন্য আনন্দের যে, ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে ব্যক্তিগতভাবে যেতে বা তাদের সন্তানদের পাঠাতে ইচ্ছুক। এই হার ২০২২ সালের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। প্রায় ২৯ শতাংশ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা ২০২২ সালের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, জরিপের ফল থেকে এই আভাস মিলেছে, বাংলাদেশিরা চীনে ভ্রমণ, পড়াশোনা ও ব্যবসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংকট মেটানোর লক্ষ্যে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আদিনিবাসে ফিরতে পারেন সেই জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।
চীনের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেরা বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত দ য় ছ ন র জন ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।
আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।
নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।
জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।