রাজনীতিতে জড়িয়ে নানা দিক থেকেই বিপদে আছেন ইলন মাস্ক। সরকারি ব্যয় হ্রাস বিভাগের প্রধান হিসেবে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মার্ক রুবিওর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে কমছে টেসলার শেয়ারের দাম এবং তাঁর সম্পদমূল্য।

এ পরিস্থিতিতে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেসলার গাড়ি কিনেছেন। সেই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। ইলন মাস্কের প্রতি সমর্থন জানাতেই তাঁর ওই ঘোষণা। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেদিনই ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি লিখেছে টেসলা।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক আরোপের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে চিন্তিত টেসলা। সে বিষয়েই চিঠি দেয় তারা। চিঠি দেবেই না বা কেন, চলতি বছর এখন পর্যন্ত টেসলার শেয়ারের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ।

টেসলার পক্ষ থেকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে সম্বোধন করা স্বাক্ষরবিহীন চিঠির কথা জানা যাচ্ছে। সেখানে ইলন মাস্কের কোম্পানি বলেছে, তারা ন্যায্য বাণিজ্যনীতির পক্ষে। কিন্তু যে বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন, সেটা হলো অন্যান্য দেশ মার্কিন শুল্কের ‘প্রতিশোধ’ নিলে মার্কিন রপ্তানিকারকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

টেসলার শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কোম্পানির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং গত বছর বিক্রি কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। চিঠিতে টেসলা জানিয়েছে, গাড়ি ও ব্যাটারির জন্য স্থানীয় সরবরাহকারীদের খুঁজে বের করতে ব্যবসার নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিদেশের বাজারের ওপর নির্ভরতা যেন কমে, সেটা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। কিন্তু তারপরও আশঙ্কা থাকছে।

২০১৮ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে। এবার ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ট্রাম্প চীন থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। পাল্টা বেইজিংও শুল্ক আরোপ করেছে। সমস্যা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনই টেসলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। ফলে ইলন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনের অংশ হলেও এই বাণিজ্যযুদ্ধের আঁচ থেকে তিনি বাঁচতে পারছেন না। বিশ্লেষকেরা এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন; কারণ, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে প্রতিপক্ষের ক্ষতি যতটা করা যায়, নিজের ক্ষতিও তার চেয়ে বিশেষ কম হয় না।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পর থেকেই একের পর এক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। তাতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন মাস্ক। ট্রাম্প সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) নামে নতুন একটি বিভাগ খুলে তার দায়িত্ব দিয়েছেন মাস্ককে, যে বিভাগের মাধ্যমে সরকারের ব্যয় হ্রাস এবং কর্মী সংকোচনের লক্ষ্য নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

অন্যদিকে মাস্কের সমর্থনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘বাম কট্টরপন্থী উন্মাদেরা’ টেসলা বর্জনের চেষ্টা করছে; কিন্তু মাস্কের প্রতি তাঁর আস্থা ও সমর্থন আছে। সেই সমর্থন দেখাতেই তিনি ঘটা করে টেসলার গাড়ি কিনেছেন। তাঁর কাছে টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্ক মহান আমেরিকান। যদিও টেসলার ওই চিঠি সম্পর্কে ট্রাম্প জানেন কি না, সে বিষয়ে বিবিসির সংবাদে কিছু বলা হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক

এছাড়াও পড়ুন:

বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম

দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়। 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল  মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।

বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর  অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ