আজীবন দেশের সংস্কৃতির ভুবন আলোকিত করার গুরুদায়িত্ব পালন করে বিদায় নিলেন সন্‌জীদা খাতুন। গতকাল মঙ্গলবার ৯২ বছর পূর্ণ করার কিছু আগে প্রয়াত হলেন দেশের এই অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আগামী ৪ এপ্রিল তিনি ৯৩ বছরে পদার্পণ করতেন। জন্মদিনের পরিবর্তে সেদিনে হবে তাঁর স্মরণসভা।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বেলা ৩টা ১০ মিনিটে হৃৎস্পন্দন থেমে যায় সন্‌জীদা খাতুনের (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ ও পুত্রবধূ লাইসা আহমদ লিসা জানিয়েছেন, তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ (হার্ট অ্যাটাক) হয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি সুস্থ ছিলেন না। তাঁর ছিল কিডনির জটিল রোগ। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯ মার্চ তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর নেওয়া হয় আইসিইউতে। অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি।

সন্‌জীদা খাতুনের বড় মেয়ে অপালা ফরহাদ নভেদ আগেই প্রয়াত। ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ আর মেয়ে রুচিরা তাবাসসুম নভেদসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন বহু গুণের অধিকারী অনাড়ম্বর জীবন যাপন করা এই মানুষটি। তাঁর ছেলেমেয়েরা জানিয়েছেন, মরদেহ রাতে হিমঘরে রাখা হবে।

সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আনা হবে তাঁর হাতে গড়া দেশের অগ্রগণ্য সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে। সন্‌জীদা খাতুনের অনেক নাতি–নাতনি ও ঘনিষ্ঠ বহু আত্মীয় বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁরা শেষবিদায় জানাতে আসবেন। সে কারণে দাফনের দিনক্ষণ পরে ঠিক করা হবে। ৪ এপ্রিল সন্‌জীদা খাতুনের জন্মদিনে ছায়ানটে স্মরণসভা করার পরিকল্পনা করা হলেও সময় এখনো ঠিক হয়নি।

সন্‌জীদা খাতুনের কীর্তির ধারা বিচিত্র। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, গবেষক, শিল্পী, সংগীতজ্ঞ, সংগঠক ও সক্রিয় সাংস্কৃতিক নেত্রী। ছিলেন ছায়ানট ও রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি। ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার প্রতিষ্ঠাতা। জনসাধারণের সাংস্কৃতিক বোধের উন্নয়ন এবং মুক্ত–উদার মানবিক সমাজ নির্মাণের অবিরাম প্রচেষ্টাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরে দেশের শিল্প–সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজন ছাড়াও তাঁর সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধরা শোকার্ত চিত্তে স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে যান। অনেকেই ছিলেন অশ্রুসিক্ত।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক হাসপাতালে প্রথম আলোকে বললেন, তিনি দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন এবং জীবনকালটা মানুষের জন্য উজাড় করে দিয়েছেন। জনমানসে সংগীত, শিল্প, সাহিত্যের বোধ সৃষ্টি এবং এর সঙ্গে সামাজিক–সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার বোধ সঞ্চার করে গেছেন। বিপুলভাবে তিনি বাঙালির জীবন সমৃদ্ধ করে তোলার কাজ করেছেন। তাঁর মতো দ্বিতীয় কেউ নেই।

রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি ও শিল্পী বুলবুল ইসলাম বলেন, দেশে রবীন্দ্রসংগীতের প্রসার ও সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে ওয়াহিদুল হক, জামিল চৌধুরী ও সন্‌জীদা খাতুন—এই তিনজনের ভূমিকা পথিকৃতের মতো। তাঁরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ সুগম করেছেন। দুজন আগেই প্রয়াত। এখন তৃতীয়জনও চলে গেলেন। নিজেকে অভিভাবকহীন মনে হচ্ছে।

ছায়ানটের তবলার শিক্ষক এনামুল হক ওমর বললেন, যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি সারা দেশের সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীদের সংগঠিত করেছেন, ছায়ানটকে পরিচালনা করেছেন, তার তুলনা হয় না। তাঁর প্রয়াণ জাতির জন্য অপরিমেয় ক্ষতি।

সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ছায়ানট, উদীচী, চারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সন্‌জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। তাঁর বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। সন্‌জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই এতে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতায় সংগঠিত করেন বাংলাদেশের শিল্পীদের। শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে সন্‌জীদা খাতুন ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

সন্‌জীদা খাতুনের প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে তিনি দীক্ষা নেন নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতির। প্রথমে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন প্রখ্যাত হুসনে বানু খানমের কাছে। এরপর তালিম নেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনদের মতো বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীদের কাছ থেকে।

আইয়ুব খানের কঠোর শাসনকালে নানা বাধা অগ্রাহ্য করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনে তিনি ও সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের যাত্রা শুরু। ১৯৬৭ সালে তাঁরা রমনার বটমূলে প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে আয়োজন করে প্রভাতি গানের আসর। ছায়ানটের এই অনুষ্ঠান থেকেই প্রাণিত হয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন এখন দেশজুড়ে বিপুল এক অসাম্প্রদায়িক উৎসব। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা ছায়ানটের এই প্রভাতি গানের আসরে ২০০১ সালে ভয়াবহ বোমা হামলা চালালেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি।

এসব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বাইরে সন্‌জীদা খাতুনের গবেষণা ও রচনার কাজও কম নয়। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টির অধিক। রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ, কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা, নজরুল মানস ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

সন্‌জীদা খাতুন দেশে একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া সম্মানিত হয়েছেন ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দেশিকোত্তম পুরস্কার এবং কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রবীন্দ্র–তত্ত্বাচার্য উপাধিতে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রব ন দ র কর ছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ